৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৫৫:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


নৌকা পেয়েও দুঃস্বপ্নে স্বতন্ত্র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
নৌকা পেয়েও দুঃস্বপ্নে স্বতন্ত্র


হাসি নেই, খুশিও। এক সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন মানেই বিজয় সুনিশ্চিত, শুরু হয়ে যেতো উৎসব। এবারও সেই ধারাতে থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন টিকেট কিনেছিলেন। মনোনয়ন ঠিকই পেয়েছেন, কিন্তু হাসি নেই মুখে। শুকিয়ে গেছে। নেই খুশিও। 

না, বহির্বিশ্ব, নিষেধাজ্ঞা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ কী করলো ওইসব বিষয় নয়। দলীয় অভ্যন্তরের কর্মকাণ্ড ওই ভীষণ মন খারাপ একশ্রেণির আওয়ামী লীগ মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতা-নেত্রীর। সূচনা, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার স্পষ্ট ঘোষণা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয় অর্জন করতে হবে। আর এজন্য আওয়ামী লীগ তাদের প্রায় প্রতিটা আসনে দিয়ে রেখেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর আগে ‘ড্যামি’ প্রার্থী নামক একটা কথা শোনা গেলেও সেটা নেই। এখন স্বতন্ত্র। তিনিও আওয়ামী লীগেরই, কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার মার্কা সারাজীবন যে নৌকা, নৌকা করেছেন, এবার সেটা থাকবে না। পাবেন অন্যকিছু। তবুও তাতে স্বতন্ত্রদের মনবলের বিন্দু বিচ্যুতি ঘটেনি। অথচ নৌকা মনোনয়ন পেয়ে মনোবল ভেঙে বসে রয়েছেন অনেকে। দুঃস্বপ্নে আচ্ছন্ন তারা।

এই স্বতন্ত্রওয়ালারা এখন দুশ্চিন্তার কারণ আওয়ামী লীগের মূল মনোনয়নপ্রাপ্তদের। নিজ আসনে যার বিরুদ্ধে লড়বেন, তার কী দোষত্রুটি বলবেন। তিনি যে ঘরানার প্রতিপক্ষ এক। বরং যারা দলীয় নমিনেশন পেয়েছেন তাদের অনেকে পূর্বের এমপি এমনকি মন্ত্রীও। কিছু আছেন হাইব্রিড। ফলে দোষত্রুটি যা তাদের। স্বতন্ত্ররা যেন ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছেন এদের ওপর। এলাকার উন্নয়নের সফলতা সবার। ফলে একক কর্তৃত্বও নিতে পারছেন না তিনি যদি অন্যদলের হতো অনায়াসে পারতেন সেটা। 

আওয়ামী লীগের অনেক এমপি ও মন্ত্রীদের তৃণমূলের সঙ্গে ঝামেলা দীর্ঘদিনের। এলাকায় দুই গ্রুপ, তিনগ্রুপও। এগুলো কখনো কখনো এমপি-মন্ত্রীর তৈরিকৃত। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতো দল। কিন্তু পাত্তা দিতেন না নিজের স্বার্থ উদ্ধারে। যেহেতু বিগত দুই জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ছিল না, তাই মনোনয়ন পেয়ে এমপি বনে গেছেন। এলাকার কাউকে জমাখরচ দেওয়ার চিন্তাও করা লাগেনি। নিজের মতো করে ঘুরেছেন। আলাদা নিজস্ব একটা গ্রুপ তৈরি করেছেন। এবারও তেমনটা চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি এবার নির্বাচনে না আসা ও বর্হিবিশ্বের চাপে নির্বাচনটা স্বচ্ছ করার প্লান। এতে করে সাধারণ ভোটারের মধ্য থেকে ওই ভাবটা দূর করার উদ্যোগ এবার যে, ভোট ছাড়াই এমপি হয়ে যাবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখার কারণ এটাই। এতে করে কেন্দ্রে ভোটের উপস্থিতি বাড়বে, যা আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এবং জনমানুষের ব্যাপক উপস্থিতি বোঝাতে সক্ষম হওয়া যাবে। 

এতে করে মাইনকার চিপায় পড়ে গেছে মনোনয়নপ্রার্থীদের মধ্যে যারা এলাকার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন, মানুষের সেবাযত্নের ধারকাছ দিয়েও যারা যাননি তারা। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর এদের বড় একটি অংশ প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বতন্ত্রদের দৌড়ঝাপ নিয়ন্ত্রণ করার অনুরোধ করেন। এতে করে দলের মূল প্রার্থীদের সমস্যার কারণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দলের প্রধান এ ব্যাপারে অনঢ় বলে জানান দিয়ে দিয়েছেন। তার উত্তর ছিল অনেকটা এমন- যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, তাদের অনেকেই এক, দুই, তিন, চারবারও এমপি, কেউ মন্ত্রী। তাহলে তারা যদি এলাকার উন্নয়ন ও সকল মানুষের ভালোমন্দের সঙ্গেই থেকে থাকেন, তাহলে তাদের ভয় কীসে? স্বতন্ত্রও তো দলের। সে পারলে আপনি কেন পারবেন না। সমস্যা কোথায়? সেগুলো খোঁজেন। সেগুলো নিয়ে গিয়ে কাজ করেন। এরপর সবাই চুপ হয়ে গেছেন। 

যে কারণগুলোতে দলীয় প্রার্থীরা চাপে 

বিএনপি নির্বাচনে না আসার প্রকৃত নির্বাচনের যে উত্তাপ সেটা কেউই টের পায়নি গত দুই টার্মে। এতে করে তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে অনেকের। অনেকেই তৃণমূলে না গিয়ে প্রতিনিধির মাধ্যমে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ফলে প্রতিনিধি এক চোখা হয়ে কাজ করে গেছেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে প্রায় প্রতিটা এলাকার তরুণরা ফ্রন্টলাইনে এসে কাজকর্মগুলো বাগিয়ে নিয়ে কাজ করেছেন। এতে করে সিনিয়ররা বাধ্য হয়ে পিছু হটেছে। এ পিছু হটাটা তারা ভালো চোখে নেয়নি। অনেক ক্ষোভ, অভিমান রয়েছে। এভাবেই দূরত্ব তৈরি। ফলে সে দূরত্ব দূর করে এবার স্বতন্ত্র তা-ও আবার নিজ দলেরই, এটা পাওয়ার পর স্বতন্ত্রের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয়েছে। তাছাড়া একটা এলাকায় তরুণদের চেয়ে প্রবীণদের কথাই সাধারণ মানুষ বেশি শোনে। এখানেও তারা পিছিয়েছে। শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ত্যাগী নেতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদেরকে এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু সবাই তো আর প্রধানমন্ত্রীর নজরদারির মধ্যে চলে যাওয়া সম্ভবপর নয়। ফলে একটা গ্রুপ ঠিকই রয়ে গেছে আড়ালে-আবডালে। 

এছাড়াও দীর্ঘ এ তিন টার্মে অনেক প্রবীণ নেতাদের বিভিন্নভাবে তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে নিজ দলের কর্মীদের থেকেও। ফলে সবই তারা বুকে লুকিয়ে রেখেছে অভিমান। এতে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েই সেদিকে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। 

কী হতে পারে 

দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি নেই। স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হওয়ার পর সে আওয়ামী লীগেই যোগ দেবেন। যেমনটা ২০১৮তে ধানের শীষে নির্বাচন করে নৌকায় যোগ দিয়েছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। এতে দল বরং লাভবান হবে। এজন্য যে এলাকার সত্যিকারের যোগ্য প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে খুঁজে বের করা সম্ভব হলো। একইভাবে দুই গ্রুপের প্রচারণায় জমে উঠবে, ভোটকেন্দ্রে বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসার প্রতিযোগিতা হবে এবং যা নির্বাচনে লোকবৃদ্ধি প্রচারেও সুবিধা হবে। 

এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে এলাকায় স্বতন্ত্রপ্রার্থীর প্রাধান্য বহু স্থানেই। যার এক বাস্তব উদাহরণ গাজীপুরে। এখানে অন্তত তিনটি সিটে ঝামেলা তৈরি করতে বিশাল বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এতে করে মূল প্রার্থীরা ভীষণ চাপে। এদের পেছনে বিভিন্নভাবে শক্তির জোগান দিচ্ছেন, মেয়র পদ হারানো ও এক সময় দল থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর। বাজারে চাউর রয়েছে যে, মেয়র পদ হারানোর পেছনে যেসব কাজ উপস্থাপিত হয়েছে সেগুলোর সবই বানোয়াট। ফলে তিনি মেয়র পদ হারিয়ে দল থেকেও বহিষ্কার হয়েছিলেন। আবার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দলে ফিরেছেন। মেয়র হতে পারেননি বা ফিরেও পাননি। এতে করে স্বতন্ত্র থেকে তার মা জায়েদা খাতুন বিজয়ী হয়েছেন, যা প্রকারান্তে জাহাঙ্গীরেরই বিজয়। ফলে এবার তিনি অন্তত তিন সিটে কলকাঠি নাড়ছেন। যাতে তাকে বাটে ফেলানোর জন্য যারা জড়িত, তারা না হতে পারেন। স্বতন্ত্র জেতাতে দ্বারে দ্বারে তিনি। তিনটি আসনেই স্বতন্ত্রওয়ালারা মূল প্রার্থীর ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। এ ঘটনা একটা রেফারেন্স মাত্র। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের সময় এলাকায় এমপি, মন্ত্রী বা এদের আত্মীয় বা কাজের মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দূরত্ব কোনো না কোনোভাবে হয়েছেই। ফলে সেসব স্থানে এবার স্বতন্ত্রের কদর বেড়েছে।

সবশেষ

এতে করে যদি এভাবে চলে, তাহলে অনেক মূল প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে ব্যর্থ হবেন নিঃসন্দেহে। সে দুশ্চিন্তা এখনই পেয়েছে তারা। কারণ তিনি এলাকায় যাদের নিয়ে কাজ করাতেন, তারাই এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। কাজগুলো বা প্রচার-প্রচারণা করবেন তিনি কীভাবে। এটা নিয়ে ভীষণ যন্ত্রণাও কাজ করছে তাদের, যারা এলাকার সঙ্গে দূরত্বটা তৈরি করে রেখেছেন। অবশ্য এসব প্রার্থীর দলীয় প্রধানও ফাইন্ড আউট করতে বেশ উদগ্রীব। এবার সে মওকাটা তিনি পেয়েছেনও বটে!

শেয়ার করুন