২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ৬:১৭:৩৪ অপরাহ্ন


জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের বিচার শুরু
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৯-২০২২
জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের বিচার শুরু এবিএম সাদিকুর রহমান


নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) সাবেক কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। গত ৪ সেপ্টেম্বর দীর্ঘ শুনানি শেষে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চার্জ গঠনের এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী কার্যক্রম ও সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন বিচারক। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইন ২০০০-এর ১১ (গ) ধারায় এই চার্জ গঠিত হয় বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী হাসিবুল ইসলাম।

মামলার চার্জশিটের বরাত দিয়ে আইনজীবী হাসিবুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েক বছর আগে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারের মজিবুর রহমানের ছেলে এবিএম সাদিকুর রহমানের সঙ্গে মোহনপুর উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের নুর হোসেনের মেয়ে সংগীতা মুনমুন লিপি ওরফে শ্যামলীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এই দম্পতির তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর সাদিকুর রহমান ইউএনএইচসিআরে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি পান। ওই সময় থেকেই সাদিকের আচরণ বদলাতে থাকে। সে মোটা অঙ্কের টাকার মালিক বনে যাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন বিবাহ-বহিভর্‚ত সম্পর্কে। বিষয়টি ভুক্তভোগী শ্যামলী বুঝতে পেরে তাকে ফেরানোর চেষ্টা করেন। এতে তাদের দাম্পত্য জীবনে শুরু হয় অশান্তি। তখন থেকেই বড় অঙ্কের যৌতুকের টাকার দাবিতে সাদিক স্ত্রী শ্যামলীর ওপর নির্যাতন শুরু করেন। সাদিকের সঙ্গে নির্যাতনে যোগ দেয় তার বাবা মজিবুর রহমান, ভাঁসুর শামসুর রহমানুল শামীম, দুই ননদ মাস্তারা বেগম কাকলী ও মোস্তারি আফরোজ শিউলীসহ পরিবারের অন্যরাও।

এমনকি ২০১৮ সালের ১৬ জুন ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসে স্ত্রীর ওপর ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন চালান সাদিকুর রহমান। সঙ্গে নির্যাতনে যোগ দেন পরিবারের অন্যরাও। একপর্যায়ে শ্যামলীকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এলাকার লোকজন শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করে তাকে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই ভুক্তভোগী শ্যামলী স্বামী সাদিক, শ্বশুর মজিবুরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বাগমারা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-১৩২/১৮)। পরে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তরিত হয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হাসিবুল আরো বলেন, আসামিপক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় ওই সময় মামলাটিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। ২০১৮ সালে দীর্ঘদিন নানা কৌশলে প্রধান আসামি সাদিক আদালতে হাজিরা এড়িয়ে যায়। পরে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মামলার আসামিরা আদালতে জামিন আবেদন করলে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মনসুর রহমান (চার্জে ছিলেন) প্রধান আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান। তবে মামলার অপর চার আসামির জামিন শর্তসাপেক্ষ মঞ্জুর করেছিলেন আদালত। দুই সপ্তাহ জেলহাজতে থাকার পর প্রধান আসামি সাদিকুর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান। পরবর্তীতে ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ নারী নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। বর্তমানে সাকিকুর জাইকার কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আইনজীবী হাসিবুল বলেন, প্রধান আসামি সাদিকুর দাবি করে আসছেন যে, ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরের পরেই নাকি ভুক্তভোগী শ্যামলীকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাদীপক্ষ ডিভোর্সের কোনো কাগজপত্র পায়নি।

শেয়ার করুন