২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪৯:৫৭ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর শেষে সংবাদ সম্মেলন
বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
বাংলাদেশের অর্থনীতি কোন ঝুঁকির মধ্যে নেই - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


‘বাংলাদেশের অর্থনীতি,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী দিক বিবেচনা করে, কোনো ঝুকির মধ্যে নেই। আমি আপনাদের সকলকে নিশ্চিত করতে পারি যে উদ্বেগের কিছু নেই’ কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদ্য যুক্তরাজ্য  ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর শেষ করে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে। আজ বিকেলে গনভবনে অনুষ্টিত হয় ওই সম্মেলন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চিন্তার কোনো বিষয় নেই। আমরা সবাই যদি মনে করি এটা আমাদের দেশ এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘যেকোন কোন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোন রিস্ক নেই, এটুকু আমি কথা দিতে পারি। চিন্তার কোনো বিষয় নেই। আমরা সবাই যদি মনে করি এটা আমাদের দেশ এবং আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’ নিজেদের সামার্থ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ সামষ্টিক অর্থনীতির যে টার্গেট আমরা নির্দিষ্ট করেছি। তা আমরা অর্জন করতে সামর্থ হব। সে বিষয়টি আমি সবাইকেই আশ্বস্থ করতে চাই। এরপর যদি কোনো মহাদুর্যোগ দেখা দেয় তাহলে তো সারা বিশ্বেরই সমস্যা হবে। তা নিয়েতো বেশি কিছু বলার নেই। তবে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে এটুকু আশ্বাস আমি দিতে পারি।’ 




কতিপয় মিডিয়ার সমালোচনা 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের বিভিন্ন পত্র পত্রিকা মিডিয়ার ঢালাও সমালোচনার বিরুদ্ধে তিনি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা যতই ভাল করি, তাদের চোখে কোনোদিন ভাল লাগে না। তারা যেন এক ধরনের পরশ্রীকাতরায় ভোগে। তবে আমাদের কাজে জনগন কতটুকু লাভবান হলো আমরা সেদিকেই বিশেষ ভাবে দৃষ্টি দেই।’ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের,পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। 

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে তার ১৮ দিনের  রাষ্ট্রীয় সফর শেষ ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেন এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। 



নির্বাচন  ও বিরোধী রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন বিষয়টা রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত, কে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, কে করবে না। এখানে আমরা তো কিছু চাপিয়ে দিতে পারি না। রাজনীতি করতে হলে দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে। হ্যাঁ আমরা অবশ্যই চাই যে সব দল অংশগ্রহণ করুক।

তিনি বলেন, আমরা চাই সব দল আসুক, ইলেকশন করুক। কার কোথায় কতটুকু যোগ্যতা আছে। অন্তত আওয়ামী লীগ কখনো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসবে না, আসেও নাই। আওয়ামী লীগ কিন্তু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই ক্ষমতায় আসে।

 শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের কাজ করে, জনগণের মন জয় করে, জনগণের ভোট নিয়েই কিন্তু আওয়ামী লীগ বারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ কখনো কোন মিলিটারি ডিরেক্টরের পকেট থেকে বের হয়নি। কারো ক্ষমতা দখল করেও কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগ যতবার ক্ষমতায় এসেছে ভোটের মাধ্যমেই এসেছে, নির্বাচনের মাধ্যমেই এসেছে।


বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়নে আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দেশে নির্বাচনের যতটুকু উন্নতি যতটুকু সংস্কার এটা কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আমরা মহাজোট করে সবাইকে নিয়েই কিন্তু এটা করেছি। এরপরও যদি কেউ না আসে সেখানে আমাদের কি করণীয়, হারার ভয়েই আসবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ভুলে গেছে তাদের অতীতের কথা। বিএনপির সৃষ্টি যেভাবে একটা মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে আর তারপরে নির্বাচনের যে প্রহসন সেটা তো তাদেরই সৃষ্টি। বরং আমরা নির্বাচনটাকে এখন জনগণের কাছে নিয়ে গিয়েছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দেওয়া হচ্ছে এবং মানুষ যাতে তাদের ভোটটা দিতে পারে পরিবেশ বা ভোট সম্পর্কে মানুষের যে সচেতনতা সেটা কিন্তু আওয়ামী লীগই সৃষ্টি করেছে।

জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলেই বিএনপি বিদেশীদের কাছে ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছে উল্লেখ  করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছে কেননা যদি মাটিতে জোর থাকতো, নিজের দেশের মাটিতে যদি এদের সেরকম সমর্থন থাকতো, খুঁটির যদি জোর থাকতো অর্থাৎ নিজের শিকড়ের জোরটা যদি এখানে থাকতো তাহলে তো বিদেশে ধন্যা দেওয়ার প্রয়োজন হোত না।

তিনি বলেন, জনসমর্থন থাকলে, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে জনগণের কাছে যেত, বিদেশের কাছে দৌড়ে বেড়াত না, এটা হলো বাস্তবতা। আর সেই শক্তি নেই বলেই, তাছাড়া কোন  মুখে তারা জনগণের কাছে ভোট চাইতে যাবে। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, খুন করা, বোমা মারা, গ্রেনেড মারা, সব জায়গাতেই তো তারা আছে। তাদের দ্বারা নির্যাতিতরা যদি সামনে এসে দাঁড়ায় তাহলে কি জবাব দেবে বিএনপি? ঐ জন্যই তারা বিদেশিদের কাছে ধন্যা দিয়ে বেড়ায়। এরা মানুষের কাছে যায় না। আর আমরাতো বাধা দিচ্ছি না। যত আন্দোলন-সংগ্রম করবে তত ভাল কিন্তু করেনাতো কি করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামের হুমকি ধমকি অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে। সেটাতো বিরোধী দলের কাজ তারা এটা করতেই থাকবে। কিন্তু, বিরোধী দল যদি এত শক্তিশালী হোত তাহলেতো অনেক কিছুই হোত।


র‌্যাব নিয়ে যা বললেন 

র‌্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে, তারা তো তেমনই কাজ করছে।’ বাংলাদেশে সন্ত্রাস না থাকায় আমেরিকা নাখোশ কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, স্যাংশন তারা কতটুকু প্রত্যাহার করতে তা জানি না। তবে স্যাংশন দিয়ে তারা ক্ষতি করেছে। আমরা যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন করেছি, তাদের উপর স্যাংশন দেওয়ার অর্থটা কি? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া?

তিনি বলেন, “আমার এটাও প্রশ্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে, তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ? ৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে আসলো যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছর তো তারা রাজত্ব করলো। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন?” 

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সময়ে সময়ে আমাদের উপর নানা ধরনের স্যাংশন, অথবা এক সময় জিএসপি বাদ দিল, নানা রকমের ঘটনা ঘটায়।”

র‌্যাব গঠনের শুরু থেকেই সংস্থাটির সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাজ করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, র‌্যাবের উপরে তারা স্যাংশন দিল, আমরা প্রশ্নটা হল, র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? র‌্যাব সৃষ্টিতো আমেরিকার পরামর্শে।

তিনি বলেন, আমেরিকাই র‌্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে, আমেরিকা তাদের ট্রেইনিং দেয়, তাদের অস্ত্রশস্ত্র, তাদের হেলিকপ্টার, এমনকি তাদের ডিজিটাল সিস্টেম, আইসিটি সিস্টেম সবই আমেরিকার দেওয়া।

র‌্যাব-পুলিশসহ যে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে, বাংলাদেশে তার বিচার হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনারা দেখেছেন যে, পুলিশ ইচ্ছামত গুলি করে মারলেও তাদের সহসা বিচার হয় না। শুধু একটা বিচার হল, যখন আমেরিকার লোক সবাই আন্দোলনে নামল।” যুক্তরাষ্ট্র সফরে র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয় জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার পেছনে কিছু প্রবাসী বাংলাদেশীরও ‘ভূমিকা’ রয়েছে। 

তিনি বলেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের দেশের কিছু লোক তাদের যেসব স্টেটে থাকে, সেখানকার স্থানীয় সিনেটর, কংগ্রেসম্যান অনেকের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। নানা তথ্য দিয়ে দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।”

এসব বাংলাদেশীদের কেউ কেউ ‘কোনো না কোনো অপরাধে অপরাধী বা চাকরিচ্যুত বা পলাতক’ উল্লেখ  করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র না, পৃথিবীর অন্যান্য কয়েক দেশেও দেখবেন কোনো না কোনো একটা অঘটন, কোনো না কোনো একটা খারাপ কাজ করে তারা সেদেশে গেছে।



গুম  খুন প্রসঙ্গে 

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   বলেন, সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানেরাও এসব (গুম খুন নিয়ে দেশের বিরুদ্দে)   অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত। জাতিসংঘের কাছ থেকে পাওয়া ‘গুমের’ শিকার ৭৬ ব্যক্তির তালিকায় বিভিন্ন রকমের ‘গলদ’ থাকার কথা সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “কয়েকটা আন্তর্জাতিক সংস্থা খুব করে ‘গুম খুন’, ‘খুন গুম’ বলে শোরগোল করল। যখন গুমের হিসাব যখন বের হতে শুরু করল, তখনতো দেখা গেল সবচেয়ে বেশি গুম জিয়াউর রহমানের আমলে হয়েছে। 

তিনি বলেন, “এরপর আমরা যখন তালিকা চাইলাম, ৭৬ জনের তালিকা পাওয়া গেল। আর এই ৭৬ জনের মধ্যে কি পাওয়া গেছে, সেটাতো আপনারা নিজেরাই ভালো জানেন”। তিনি বলেন, আমাদের দেশে এমনও ঘটনা আছে, মাকে লুকিয়ে রেখে আরেক জনকে শায়েস্তা করতে মাকে ‘খুন করেছে, গুম করেছে’, বলে রটনা হয়েছে সেই ঘটনাও বের হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুমের ঘটনা যখনই ঘটে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুঁজে বের করে। গুম যত বড় করে দেখানো হয়, তাদের খুঁজে বের করার খবরটি যদি বড় করে দেখানো হতো, তাহলে বাংলাদেশের বদনাম হতো না।



মিয়ানমারের জান্তা ও রোহিঙ্গা ইস্যু

মিয়ানমারের সামরিক শাসক কারও কথা মানতে চায় না বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু জাতিসংঘ কেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে আসিয়ান দেশগুলোও কম চেষ্টা করেনি। অন্যান্য দেশগুলোও করছে। মিয়ানমার সরকার সেখানে মিলিটারি রুলার, তারা  তো কারও কথাই মানছে না। নির্যাতনের শিকার হয়ে নতুন করে কোনও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে চাইলে তাদের প্রশ্রয় না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমরা যেসব রোহিঙ্গাদের থাকতে দিয়েছি তাদের সমস্যা নিয়েই আমরা জর্জরিত। এর ওপর আমাদের মানুষের ওপর বোঝা কীভাবে চাপাবো? সেজন্য আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। আলোচনা করে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি তারা যাতে এদেরকে ফেরত নিয়ে যায়। 

তিনি বলেন, মিয়ানমারে এখন যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেখানে আমরা নাক গলাতে যাই না এবং যাবও না। 

তথ্যসূত্র : বাসস। 

শেয়ার করুন