৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:২২:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন : ডালাস বাংলা উৎসব ও বইমেলা
কাজী হাসান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১০-২০২২
এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন : ডালাস বাংলা উৎসব ও বইমেলা ডালাস বইমেলার দৃশ্য


বছর চারেক আগের কথা। এক ডিনার পার্টিতে পরিচয় হলো কেন কাদেরের সাথে। তিনি তখন নতুন নিউইয়র্ক থেকে ডালাসে মুভ হয়ে এসেছেন। অল্পসময়ে বেশ অনেক কথা হয়ে গেল। জানতে পারলাম তিনি নিউইয়র্কে বাঙালি সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাথে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সেই সময়টাতে তার ক্যানসার রোগের চিকিৎসা চলছিল। তখনই বুঝে নিয়েছিলাম তিনি সুস্থ হয়ে এলে ডালাসেও বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে একই ধরনের কাজ আরম্ভ করবেন। আগুনকে তো আর ছাই চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তা ছাড়া ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তিনি ডালাসকে বাঙালিদের বিশাল বড় অনুষ্ঠান ঠিকই উপহার দিবেন। এইটা শুধু এখন সময়ের ব্যাপার।

মাস ছয়েক আগের কথা। কেন কাদের আমার সাথে যোগাযোগ করে বললেন, তিনি ডালাসে শুধুমাত্র বাংলা বই নিয়ে একটা মেলা করতে চান। এর আগে এখানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু লেখকের বই প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়েছে, কিন্তু বইমেলা হয়নি। তিনি আমার থেকে ডালাস অঞ্চলের যারা লেখালেখি করেন, তাদের সবার নাম জানতে চাইলেন। আমি যাদের চিনতাম তাদের সবার বৃত্তান্ত দিলাম।  তিনি জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহর থেকেও কিছু উৎসাহী লেখক-কবিদেরও আমন্ত্রণ করবেন। আমরা যারা ডালাসের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা হয়েও পরিকল্পনা পর্যন্ত করতে পারিনি। অথচ  তিনি নিউইয়র্ক থেকে  মাত্র কয়েক বছর আগে এসে তার স্বপ্ন দেখে ফেললেন। মনে মনে তাকে সাধুবাদ জানালাম। বলতে গেলে অনেকটা একক প্রচেষ্টায় সেপ্টেম্বর ২৪ আয়োজন করলেন ‘ডালাস বাংলা উৎসব।’ কেন কাদেরের সহধর্মিণী সাবেরা কাদের ছিলেন অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান সংগঠক। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ডালাস বাংলা উৎসব ২০২২’-র উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ডালাসের লেখক কাজী হাসান ছিলেন প্রথম বক্তা। তিনি আশা করেন ঢাকার বইমেলার মতো ডালাসের বইমেলাও একদিন অনেক বড় আকারের হবে এবং ফলশ্রুতিতে প্রবাসে বাংলা শিল্প ও সাহিত্যচর্চা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। এরপর মঞ্চে আসেন মূল বক্তা ডা. হুমায়ুন কবির। তিনি টেনেসি অঙ্গরাজ্য থেকে তার বইয়ের সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন। পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হলেও তিনি বহুদিন ধরে সাহিত্যচর্চা ও প্রকাশনা সাথে জড়িত। তিনি বহুদিন ধরে ‘ঘুংঘুর’ নামে একটা সাহিত্য পত্রিকা  সম্পাদনা করছেন। ডা. হুমায়ুন ডালাস বাংলা উৎসব ও বইমেলার সাফল্য কামনা করেন। এরপর আমন্ত্রিত লেখক ফরহাদ হোসেন, আলি তারেক, সালাহউদ্দিন চৌধুরী, আদিবা ঊর্মি, তারেক ইয়াসিন উজ্জ্বল বক্তব্য রাখেন। সকলেই কেন কাদেরকে বিশাল আয়োজন করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং আশা প্রকাশ করেন উনার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

ডালাসে বাংলা বইয়ের যে এতো পাঠক আছে সেটা আমার জানা ছিল না। যতোটুকু আশা করা হয়েছিল, তার থেকে অনেক বেশি বই বিক্রি হয়েছে। আমার নিজের লেখা বইগুলো সোল্ড আউট হতে বেশি সময় লাগেনি। তারপরও অনেকে আমার বই খোঁজ করেছেন। বইমেলা অনুষ্ঠানের মুখ্য বিষয় হলেও মেলার আমেজ ধরে রাখতে সংগীত ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশনা হয়েছিল। ত্রিশজনের বেশি শিল্পী এক এক করে মঞ্চে এসে পারফর্ম করেছেন। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা জনপ্রিয় গান করে আসর একেবারে মাতিয়ে দিয়েছিল। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি নিউইয়র্কের বাচিক শিল্পী লুবনা কাইজার কবিতা আবৃত্তি, হিউস্টনের নাট্যজন আলি তারেক ও নাহিদ শ্রুতি নাটক পরিবেশন করেন। দুপুর একটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা ধরে অনুষ্ঠান চলে। সাবিরা কেয়া পুরো অনুষ্ঠানটা উপস্থাপনা করে। বিশাল বড় শাড়ির পসরা নিয়ে স্টল বসেছিল। টঙের দোকান থেকে চা, ঝালমুড়ি, পিঠাসহ হরেকরকম দেশি খাবার কেনার জন্য উপচে পড়া ভিড় চোখে পড়ার মতো ছিল।

কেন কাদেরকে শুধু একজন স্বপ্নদ্রষ্টা বললে কম বলা হবে, তিনি জানেন স্বপ্নকে কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। এ জন্য কেন কাদের ও সাবেরা কাদের দম্পতি দীর্ঘসময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। অবশ্য সাথী করে নিয়েছেন ডালাসের একঝাঁক উচ্ছ্বল সাংস্কৃতিককর্মী বাহিনীকে। তারা সবাই মিলে এই বিশাল অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করে ডালাস তথা, উত্তর আমেরিকায় বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি উপস্থাপনে এক নতুন মাইল ফলক স্থাপন করেছে। এজন্য তাদের প্রত্যেকের জন্য রইলো সুবিশেষ ও সুবিশাল অভিনন্দন।

শেয়ার করুন