২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাংলাদেশ ক্রিকেট পারবে কি ঘুরে দাঁড়াতে?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
বাংলাদেশ ক্রিকেট পারবে কি ঘুরে দাঁড়াতে?


বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিতজনেরা যারা আমার দীর্ঘ ৫.৫ দশকের খেলাধুলো সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অবহিত দেশে এবং প্রবাসে কথা হলেই প্রশ্ন করেন তৃণমূলে অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ক্রিকেট কেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খাবি খাচ্ছে? কেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে তলিয়ে যাচ্ছে? উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানের ক্রিকেট গ্রাফ যখন ঊর্ধ্বমুখী তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট কেন পতনের পিচ্ছিল পথে? প্রশ্নগুলোর লাগসই, সঠিক উত্তর মেলাতে আলবার্ট আইনস্টাইন হতে হয় না। বাংলাদেশ ক্রিকেট কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক অব্যবস্থাপনা, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সঠিক পরিকল্পনার অনুপস্থিতি, প্রকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যক্তি এবং সংগঠনকে সঠিক স্থানে ভূমিকা রাখার পরিবেশের অভাব, সর্বোপরি দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচার, স্বজনপ্রীতিকে দায়ী করবো। অনেকে বিসিবি কর্মকর্তাদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং আন্তরিকতা বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। এতো শত রোগের উপশম করতে হলে স্বল্পসময়ে কার্যকর অ্যান্টি বায়োটিক প্রয়োগ নয়, প্রয়োজন ওপেন হার্ট সার্জারি করে হৃদয় ভাল্বস পুনঃস্থাপন। 

সেই ১৯৭২ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সোনালি সকাল এবং হামাগুড়ি দেওয়া শৈশব থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্মেষ, বিকাশ, দুরন্ত শৈশব, রোদেলা কৈশোর দেখেছি। মোহাম্মদ আশরাফুল, রফিক, মাশরাফি, মুশফিক, শাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুস্তাফিজ, তাসকিনদের অবদান আগ্রহ নিয়ে দেখেছি। দুই দশকের বেশি সময় ধরে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে বিচরণ করেও বাংলাদেশ কিন্তু এযাবৎ বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে কোনো ফরম্যাটেই শিরোপা জয় করতে পারেনি। বিশেষ করে সোনালি প্রজন্মের কয়েকজন ক্ষণজন্মা ক্রিকেটারদের গোধূলি বেলায় এশিয়া কাপ এবং বিশ্ব কাপে শোচনীয় পরিণতি দেখে ভয় হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের বর্তমান এবং অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে।

সবাই জানেন, শতধা বিভক্ত বাংলাদেশিদের জীবনে ক্রিকেট একমাত্র মিলনসূত্র। সর্বস্তরের, সব বয়সের আবালবৃদ্ধবনিতা ক্রিকেট নিয়ে স্বপ্ন দেখে। প্রতিটি অর্জনে উদ্বেলিত হয়, পরাজয়ে হয় হতাশ ক্ষুব্ধ। তৃণমূলে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতোই জনপ্রিয় বাংলাদেশ ক্রিকেট, কিন্তু পথ হারিয়েছে। অগোছালো আঞ্চলিক সংগঠন, সঠিক অবকাঠামো (মাঠ, উইকেট, প্রতিযোগিতামূলক সার্বিক পরিবেশ) এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার অভাবে। একসময় বাংলাদেশে জেলা পর্যায়ে নিয়মিত লিগ ক্রিকেট, নানা টুর্নামেন্ট, আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্রিকেট হতো। নানা পর্যায়ে ট্যালেন্ট হান্টিং করে প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের অনুসন্ধান করে ক্রমবিকাশের ব্যবস্থা করা হতো। বিসিবি কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন করি কেন দেড় যুগেও শরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, রিয়াদদের গুণেমানে চ্যালেঞ্জ করার মতো ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া গেল না? কোথায় হারিয়ে গেল নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট, দামাল সামার ক্রিকেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ফরিদপুর, যশোর, খুলনার আঞ্চলিক টুর্নামেন্টগুলো? তবুও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে কালেভদ্রে সাফল্য আসে। কোথায় হারিয়ে যায় মেধাবী তরুণরা?

বাংলাদেশ ক্রিকেটকে আবারও অমানিশার ঘনঘোর আঁধার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনতে হলে ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার, বিদগ্ধ সংগঠক, প্রশিক্ষক, ক্রীড়ালেখক, সাংবাদিকদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিকেট বিপর্যয়ের ব্যবচ্ছেদ করে ঘুরে দাঁড়ানোর সঠিক পথ নকশা তৈরি করে, বাস্তবায়ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। শুরুতেই বিসিবির অকার্যকর, ব্যর্থ নেতৃত্ব পরিবর্তন করে দক্ষ, অভিজ্ঞ, সৎ, নিবেদিত কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠনতন্ত্র মোতাবেক নতুন ক্রিয়াশীল নেতৃত্বকে দায়িত্ব দিতে হবে। সবাই জানে আমাদের মধ্যেই আছে সেই বিকল্প নেতৃত্ব, যাদের পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে নানা ফন্দি ফিকির করে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্দরমহলের কালো মানুষদের অবিলম্বে প্রতিস্থাপন না করা হলে ডিরেইল্ড ক্রিকেটকে সঠিক লাইনে ফেরানো যাবে না। বিসিবিতে প্রয়োজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞ একজন নিবেদিত সভাপতি, কয়েকজন প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্ন, দূরদর্শী পরিচালক, একজন দক্ষ এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিষয়ে সংযুক্তিসম্পন্ন সিইও, একটি দায়িত্বশীল নির্বাচকম-লী, দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকদের সমন্বয়ে গড়া প্রশিক্ষক প্যানেল। ব্যর্থতার দায়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ডকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, পাকিস্তান ক্রিকেটের খোল নলচে পাল্টে ফেলানো হয়, কিন্তু চরম ব্যর্থতার পরেও কেন বিসিবিকে জবাবদিহির আওতায় আনা হয় না? দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ক্রিকেটকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আগামী সরকারকে অবশ্যই আইসিসির সঙ্গে পরামর্শ করে বিসিবি পরিষদ ভেঙে দিয়ে স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুনভাবে সাজাতে হবে। সর্বাঙ্গে ক্যানসারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস। কসমেটিক সার্জারি করে আইসিইউতে থাকা ক্রিকেট বাঁচানো যাবে না।

এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে ভরাডুবির দায়-দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বিসিবি সভাপতিসহ পরিষদ পদত্যাগ করা প্রাসঙ্গিক ছিল। অন্তত নির্বাচকমণ্ডলী, কোচিং স্টাফদের পত্রপাঠ বিদায় করা উচিত ছিল। তামিম প্রসঙ্গ থেকে শুরু স্কোয়াড নির্বাচন, বিশ্বকাপ চলাকালে হেড কোচ, অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্টদের ভূমিকা বিষয়ে তদন্ত করা জরুরি ছিল, হয়নি কিছুই। 

আশা করি, ১৬ কোটি ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশিদের কথা বিবেচনা করে আগামীর সরকার জনপ্রিয় ক্রিকেটকে অকাল মৃত্যু থেকে বাঁচানোর সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ করবে। ক্রিকেটকে সর্বোতভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, সিন্ডিকেটের কবলমুক্ত রাখবে।

শেয়ার করুন