২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:৩৯:৫৩ অপরাহ্ন


মুখে মুখে মানিকের বীরত্ব
মণিজিঞ্জির সান্যাল, শিলিগুড়ি (ভারত) থেকে
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২২
মুখে মুখে মানিকের বীরত্ব মুহম্মদ মানিক/ফাইল ছবি


আকস্মিক হড়পা বানে ভেসে গেল কত প্রাণ, কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে জলে ঝাঁপ দিয়ে বাঁচিয়ে তুললেন বেশ কিছু মানুষের জীবন। সেলিব্রিটি! এই তকমাটা, এই বোধটা এখন অন্তত পালটে ফেলা উচিত! শুধুমাত্র নিজের স্বার্থে! কী এমন মহত্ব আছে? হে সমাজ তুমি কী বলো? 

সেলিব্রিটি শব্দটির অর্থ আমার কাছে বরাবরই আলাদা। সে আমার গল্পে হোক, আমার জীবনে হোক বা আমার প্রতিদিনের যাপনে হোক। আমার দেখা সেলিব্রিটিদের সাথে মাঝে মাঝেই গল্প করি, তাদের প্রতিদিনের কথা শুনি, চলে যাই তাদের বাড়ি, তাদের সঙ্গে নদীর ধারে, চা বাগানে, কমলালেবুর বাগান বা পাহাড়ের ঝর্ণার কাছে কত কথা হয়। অবাক করা সব কাহিনি শুনি। আসলে এই মানুষগুলোর মুখের হাসি, প্রাণের কথা, তাদের সহজ সরল জীবন বোধই আমার জীবনকে অন্যভাবে চালিত করেছে বরাবর, জীবনকে অন্য আঙ্গিকে তাই দেখতে ও ভাবতে শিখেছি খুব ছোট থেকে। সাহিত্য আসরের প্রতিটি ঘ্রাণ আমি অনুভব করেছি এই মানুষগুলোর সান্নিধ্যে।

বরাবরই মানুষের আতিশায্যের ভীড় থেকে দূরে থেকেছি, দূরে থেকেছি যা কিছু কৃত্রিম তা থেকে। তার চেয়ে জীবন দিয়ে জীবনকে চিনেছি, মিশেছি জীবন নামক কিছু মানুষের সাথে, তাদের থেকেই জীবনের গল্প শুনেছি। তাদের দুচোখ ভরে দেখেছি, তাদের নিয়ে লিখেছি। 

তাদেরই এমন একজন মানুষ আজ সবার কাছে দেবতা। সেই দুর্যোগের মুহূর্তে বরাবরের মতো মানুষ যখন নিজস্ব সেলফি বা ভিডিও করতে ব্যস্ত, কে কার আগে সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে হিরোর তকমাটা পাবে তার তীব্র থেকে তীব্রতর প্রতিযোগিতা চলছে, ঠিক সেই সময় একটি মানুষ নিজের জীবনকে তোয়াক্কা না করে একের পর এক মানুষের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, সেই পাগলপারা নদীতে। হ্যাঁ আমি এতক্ষণ মাল নদীর সেই বিসর্জনের মুহূর্তের বীর নায়কের কথাই বলছিলাম, আমার কাছে এই মানুষগুলোই তো সমাজের নায়ক, রাষ্ট্রের নায়ক, আমাদের পৃথিবীর নায়ক। এরাই তো সেলিব্রিটি। সেলিব্রিটি সেদিনের অনেক অনেক মানুষের জীবনদাতা মুহম্মদ মানিক, ভারতের শিলিগুড়ির মালবাজারের তেমশিলা গ্রামের যুবক। বিজয়া দশমীর রাতে মাল নদীর ধারে আশেপাশের বহু মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। ঠিক তখনই নদীতে আচমকা হড়পা বান নামে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের।

 ঘাটে সেই সময় কাতারে-কাতারে মানুষের ভিড়ে ছিলেন মুহম্মদ মানিকও। খড়কুটোর মতো মানুষকে জলে ভেসে যেতে দেখেই নদীতে ঝাঁপ দেন এই তরুণ। 

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভেসে যাওয়া একের পর এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে থাকেন মানিক। কমপক্ষে ১০ জনকে জলের তোড়ে ভেসে যাওয়ার আগেই উদ্ধার করেছেন  নিজের জীবনকে বাজি রেখে। বীরত্বের সঙ্গে বাচিয়ে দেন বেশ ক’জনকে। আট থেকে আশি, এখন প্রত্যেকের মুখেই এখন মানিকের নাম ঘুরছে। 

 আর বিষাদের সবটুকু মুহূর্তকে ছড়িয়ে দিয়ে বিলীন হয়ে গেল কিছু জীবন এই নদীরই বুকে। হ্যাঁ এই মাল নদীরই বুকে যেখানে মাঝে মাঝেই চলে যাই সবরকম বিপদকে তোয়াক্কা না করেই, কখনও বা চলে যাই ঘিস নদীর ধারে, কখনও বা হিস নদীর তীরে, কখনও বা ডায়নার কাছে... 

এরপর যখন আবার মাল নদীর ধারে যাব, বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠবে কি? আসলে নদীকে যে আমি মা বলে ডাকি..। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা মুহম্মদ মানিককে।


শেয়ার করুন