২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:২৯:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাংলাদেশ জাপান সম্পর্কে ফাটল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১১-২০২২
বাংলাদেশ জাপান সম্পর্কে ফাটল


জাপানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফর স্থগিত হওয়া নিয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা নেই। দু’পক্ষ থেকেই সাধারণ কথাবার্তা বলা হচ্ছে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ জাপানে সফরে যাবার একটা সময়ের কথা জানানো হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। এ ব্যাপারে কাজও করছিল দু’দেশ। কিন্তু হঠাৎ করেই ওই সফর স্থগিত হওয়ার ঘোষণা। এ নিয়ে চারদিকে চলছে আলোচনা। বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ সফরটা কেন স্থগিত হবে। বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছিল। এ সফরে ভালো অগ্রগতি হওয়ার ছিল সম্ভাবনা ছিলো এ সহায়তার। তাহলে কী জাপানের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ও সে বিষয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন মহল থেকে ওঠা সমালোচনায় বিরক্ত জাপান? গত ২৪ নভেম্বর সফর না হওয়ার বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র সাংবাদিকদের নিশ্চিত করার পর থেকেই এ আলোচনা চলছে।

এদিকে জাপানের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি তার দেয়া বক্তব্যে অনড় থেকে আবারো বলেছেন, জাপান ও তার সমমনা দেশসমূহ বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করে। সম্প্রতি এসব ইস্যুতে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করেন। তাছাড়া জাপান কোয়াডের অন্যতম সদস্য। যেখানে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারতের সঙ্গে যুক্ত। এদের সঙ্গে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডাসহ উন্নত অনেক দেশও। ফলে জাপানের মুভমেন্টের সঙ্গে জড়িত অনেক কিছু এটা তো মানতেই হবে।  

১৪ নভেম্বর ২০২২ 

এদিন ঢাকায় একটি হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের সহযোগিতায় একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এটার সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেছেন, তারা আশা করছেন- বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সব প্রধান রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে। ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে জাপান রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা আশা করি- আগামী নির্বাচন আরো ভালো হবে। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। এটা আমার দৃঢ় আশা।”

এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, (এখানে) নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারও বলছে- একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, “এটি এমন একটি বিষয়, যা রাজনৈতিক দলগুলোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কিন্তু প্রত্যাশা হলো প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক হবে।” এ সময় এক প্রশ্নের উত্তরে ইতো নাওকি বলেন, ‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আগের রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে আমি শুনেছি। অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’

২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি আরো বলেন, ‘ঢাকায় জাপানি দূতাবাস একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল, যা তার দেশের জন্য খুবই অস্বাভাবিক ছিল। যদিও সেটিতে সহিংসতার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।’ 

১৬ নভেম্বর ২০২২ 

১৫ নভেম্বর জাপানি রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিকে তলব করার কথা ১৬ নভেম্বর জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এক ফেসবুক পোস্টে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের অ্যাম্বাসেডরকে ডেকেছিলাম। তাকে যা যা বলা দরকার, আমরা বলেছি।’ 

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে কী বলা হয়েছে, ফেসবুক পোস্টে তার বিস্তারিত বলেননি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তবে ভিয়েনা কনভেনশনের একটি ধারা ওই পোস্টে তুলে ধরে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিষয়’ কূটনীতিকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেন, ‘যদি আপনাদের কেউ ভুলে গিয়ে থাকেন: ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেশনের ৪১ ধারার অনুচ্ছেদ ১ কূটনীতিবিদদের গ্রহণকারী দেশের আইন ও বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয় এবং ওই জাতির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জড়িত হওয়া থেকে সুস্পষ্টভাবে বিরত থাকতে বলে।’

ভিয়েনা কনভেশনের ৪১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যারা (কূটনৈতিক) দায়মুক্তি ও সুবিধা ভোগ করে, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে গ্রহণকারী দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো। ওই রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাও তাদের দায়িত্ব।’

বিষয়টি নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু না বলে প্রতিমন্ত্রী লিখেন, ‘সবকিছু বিস্তারিত গণমাধ্যমে বলার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না। তাই এই বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমে আমরা আর কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।’ ওই পোস্টে শাহরিয়ার আলম আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরো গভীর হবে আসন্ন প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে এই প্রত্যাশায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এই সফর বাংলাদেশের এবং জাপানের সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে বলে আশা করি।’

এর আগে অর্থাৎ জাপানের রাষ্ট্রদূতের ওই বক্তব্যের পরপরই শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির বক্তব্য অনাকাংখিত। ওই বক্তব্যের জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। বিদেশি কূটনীতিকরা শিষ্টাচার লঙ্ঘন করলে সরকার কঠোর হবে।’

১৭ নভেম্বর ২০২২ 

এদিন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি। তিনি বলেন, আইএমএফ বাজেট সহায়তা ছাড় শুরু করবে আগামী বছর। তবে আমরা এখনো বাজেট সহায়তা দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিইনি। আলোচনা হচ্ছে। আশা করছি একটা ভালো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের (জাপান রাষ্ট্রদূতকে তলব ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস) এই বক্তব্যের বিষয়ে এদিন অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর সাংবাদিকরা জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির কাছে জানতে চান। তখন তিনি বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে এর মধ্যে আমার সাক্ষাৎ হয়নি।’  

এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে তিন বছর আমার দারুণ সময় কেটেছে। অনেক মেগা প্রকল্পের সঙ্গে আমরা ছিলাম। এর মধ্যে মেট্রোরেল লাইন-৬ উদ্বোধন হবে ডিসেম্বরে। এটি একটি মাইলফলক প্রকল্প। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, বিমানবন্দর সম্প্রসারণসহ আরো বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ৫০ বছর পার করছে। জাপানের সঙ্গেও সম্পর্কেও ৫০ বছর চলছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর সম্পর্ক আরো উন্নয়নে কাজ করছে। বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। 

২৪ নভেম্বর ২০২২ 

এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে। ২৯ নভেম্বর ওই সফর হওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে ২৪ বৃহস্পতিবার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, সফরের সম্ভাব্য নতুন তারিখ শিগগিরই ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে অক্টোবরে  বাংলাদেশে দুদিনের সফরে এসেছিলেন জাপানের সহকারী মন্ত্রী। ২৭ অক্টোবর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেন। ওইদিনই প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সফরকালে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ পর্যায়ে উন্নীত করা হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর স্থগিতের কার হিসেবে সে দেশের (জাপান) তিন মন্ত্রীর পদত্যাগ একং করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। তবে সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত জাপানের দিক থেকে নাকি বাংলাদেশের দিক থেকে সে বিষয়ে তিনি খোলাসা করেননি। ওইদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোট ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কারণ দেখান। তিনি আরো বলেন, জাপানে কোভিড সংক্রমণ এখনো প্রকোপ। সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করতে হয়। 

২৬ নভেম্বর ২০২২

বাংলাদেশের বিগত ২০১৮ সনের নির্বাচনের ব্যাপারে দেয়া জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি তার বক্তব্যের ব্যাপারে অনড় রয়েছেন। সম্প্রতি স্থানীয় এক টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান সময়ের অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশই উপকৃত হবে। যাই হোক, সফরটি দ্রুত হওয়ার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। আশা করি দেরি হবে না। আমাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হবে। আমাদের বন্ধুত্ব দ্বিপাক্ষিক থেকে কৌশলগত দিকে এগোবে। আমাদের সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা ও শান্তি বিকাশে দারুণভাবে কাজ করবে। আশা করি আমাদের বন্ধুত্ব একটা উচ্চপর্যায়ে যাবে। কারণ এ সকল বিষয়ে উন্নত করারও সুযোগ আছে। 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু আমিই নয়, আশাকরি আমাদের সমমনা যেসকল রাষ্ট্রের প্রতিনিধি রয়েছেন সবাই সতর্ক, তারা এখানে একটা অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সবাই প্রত্যাশা করছে। আমরা দেখছি, সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে কাজ করলে গেল নির্বাচনের চেয়ে আগামী নির্বাচন ভালো হবে। এ ব্যাপারে তার পূর্বের দেয়া বক্তেব্যের ওপরও অনড় রয়েছেন বলে এ সাক্ষাৎকারে তিনি জানান।

বাংলাদেশের বাজেট সহযোগিতা চাওয়া প্রসঙ্গ জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, অতীতের মতো এ সকল ব্যাপারে বাংলাদেশের পাশেই থাকবে জাপান। আমার মনে হয় অনুরোধ করা অ্যামাউন্ট হবে ৭৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। তবে আমরা এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেইনি।

শেয়ার করুন