২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:১৩:০১ অপরাহ্ন


দুর্ভিক্ষের পদধ্বনিতেও কৃচ্ছ্রতায় উৎসাহ নেই
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
দুর্ভিক্ষের পদধ্বনিতেও কৃচ্ছ্রতায় উৎসাহ নেই


বৈষয়িক সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনেকেই বলছেন, অচিরেই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারে দুনিয়ার বেশকিছু দেশ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ইতিমধ্যেই বাংলাদেশিদের সতর্ক করেছেন। বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এখন আকাশছোঁয়া মূল্য। এমন নয় যে, পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু মূল্য বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার শেষপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। গ্যাস, স্মরণকালের তীব্র জ্বালানি তেল সংকটে, বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে দেশ। 

শিল্পখাত বিশেষত রফতানিমুখী শিল্পখাত জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে হাঁসফাঁস করছে। এভাবে চললে বাংলাদেশের পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা হারাবে অচিরেই। রফতানি আয় কমবে, বেকারত্ব বাড়ছে, আরো বাড়বে। প্রধানমন্ত্রী বহুবার সকলকে কৃচ্ছ্রতার আহ্বান জানালেও বাস্তবে প্রতিফলন শুধু পাওয়ার লোডশেডিংয়ে সীমিত। সরকারি মহলে অপচয় কমেছে বলে মনে হয় না। অপ্রয়োজনীয় খাতে বিপুল ব্যয় অব্যাহত রয়েছে। অথচ এখন সকল ক্ষেত্রে সংযম আর কৃচ্ছ্রতা অপরিহার্য। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ে ভাটা পড়া অশুভ লক্ষণ। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। ডলার সংকটে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জাতীয় সংকটে রাজনৈতিক সমঝোতা কাক্সিক্ষত। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা না থাকায় রাজপথে সংঘাত অনিবার্য প্রতীয়মান হচ্ছে।  

কৃচ্ছ্রতা উপেক্ষিত

সরকারি যানবাহন ব্যবহারে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হচ্ছে। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তারাও একাধিক সরকারি যানবাহন ব্যবহার করছেন। অনেক কর্মকর্তা আবার সরকারি পুলের গাড়ি ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের অধীন কোম্পানি, অধিদফতরসমূহের গাড়ি ব্যবহার করছেন। হিসাব মিলালে দেখা যাবে জ্বালানি খরচ বাড়ছে বই কমছে না।

দেশে বাকি পূজা, গোষ্ঠী পূজা চলছে নিরন্তর। নির্দিষ্ট মহলকে তোষামোদ করার জন্য মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। প্রতিদিনই অকারণে অনুৎপাদিত খাতে বিপুল ব্যয় হচ্ছে। বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠানে কৃচ্ছ্রতার ছিটেফোঁটা নেই। পাঁচ তারকা হোটেল, অভিজাত ক্লাবগুলিতে রাতের আয়োজন দেখে মনে হবে, দেশে কোনো সংকট নেই। 

অন্যতম মূল সংকট খাদ্যমূল্য সহনশীল রাখা। সরকার দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু ভারত থেকে কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বিঘ্ন ঘটলেই বাজারে কেন তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়? সরকার কেন নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেও ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না?  

আমাদের কৃষক সমাজ অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু আর মেধাবী। কৃষি উপকরণ, সরঞ্জাম আর কৃষিতে জ্বালানি সরবরাহ সুলভ আর সহজলব্ধ হলে দেশে বাম্পার উৎপাদন হতেই থাকবে। তবে কৃষকদের মধ্যস্বত্বভোগীদের কবল থেকে প্রতিরক্ষা দিতে হবে। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করে প্রত্যাশিত মূল্য পান না। আবার ভোক্তাও সস্তায় পণ্যাদি ক্রয় করতে পারেন না। মাঝখানে একটা শ্রেণি রয়েছে। যাদের নিখুঁত হাতবদলে বড় একটা অঙ্ক পকেটে ঢুকিয়ে নেন। এটা খুবই অস্বস্তিকর। এদেরকে চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ কিছুই নেই। মৌসুমের পর মৌসুম এমনটা হয়ে আসছে। কৃষক পেটের দায়ে কৃষি করেন, কিন্তু কোনোমতে জীবন চালান। সব চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।  

জ্বালানি বিদ্যুৎখাতে সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে যে কোনো মূল্যে চুরি, অপচয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু সেটাতে মনোযোগ কম। কারণ অবৈধ সংযোগ সাধারণ মানুষের পক্ষে নেয়া সম্ভব না। এর সঙ্গে যদি বিদ্যুতের লোকজন জড়িত না থাকেন। শিল্পকে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিতে গৃহস্থালি খাতে বিকল্প থাকায় সেখান থেকে সাশ্রয় করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যান্য ক্ষেত্রে বে সঙ্কোচন করে শিল্পের প্রয়োজনে এলএনজি আমদানি করতে হবে। গ্যাস চুরি অপব্যবহারের ক্ষেত্রে শিল্পমালিকদের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। পরিশেষে বলি, সংযম আর কৃচ্ছ্রতা এখন প্রধান অবলম্বন আসন্ন মহাদুর্যোগ মোকাবিলায়। যেগুলো একমাত্র জবাবদিহিমূলক সরকারই নিশ্চিত করতে পারেন।

শেয়ার করুন