১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৩৭:২১ অপরাহ্ন


প্রথমবারের মতো জাতীয় সংবিধান দিবস পালিত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১১-২০২২
প্রথমবারের মতো জাতীয় সংবিধান দিবস পালিত জাতীয় সংবিধান দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেছেন রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত


প্রথমবারের মতো গত ৪ নভেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস এবং কনস্যুলেট অফিসে জাতীয় সংবিধান দিবস পালন করা হয়। জাতীয় সংবিধান দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি অফিস এবং নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে সংবিধান দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেসব আলোচনায় বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর কীভাবে মাত্র ১১ মাসের মধ্যে বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল-সংবিধান রচিত হলো সেই ইতিহাস। তারা আরো বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সবিধান পাঠ ও এর চর্চা আরো বৃদ্ধি পাবে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে যা বাংলাদেশের সংবিধানের মর্যাদা, তাৎপর্য ও পবিত্রতাকে আরো সমুন্নত রাখবে।

ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাস

ওয়াশিংটন: ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে গত ৪ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ পালন করা হয়। ১৯৭২ সালের এই দিনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বাংলাদেশের গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং এটি একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর কার্যকর হয়। ঐতিহাসিক দিনটি স্মরণে দূতাবাস বিকেলে বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কনস্যুলার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও কাউন্সেলর শামীমা ইয়াসমিন স্মৃতি। পরে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় অংশ নিয়ে রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান জাতীয় সংবিধান দিবসকে বাঙালি জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে বর্ণনা করেন এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার মাত্র ১১ মাসের মধ্যে সদ্য স্বাধীন জাতিকে এর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংবিধান উপহার দেন। রাষ্ট্রদূত ইমরান মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনায় আরো অংশ নেন মিনিস্টার (ইকোনোমিক) মো. মেহেদি হাসান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কাউন্সেলর (পলিটিক্যাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন

যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে গত ৪ নভেম্বর ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ পালন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৩ নভেম্বর ২০২২-এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এবারই প্রথমবারের মতো দিবসটি পালিত হলো। স্থায়ী মিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে শুরুতেই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর উন্মুক্ত আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাপর্বে মূল বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত।

স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে সংবিধান প্রণয়ণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “সংবিধান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন এবং পবিত্র দলিল। এর মর্যাদা সমুন্নত রাখা আমাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব”। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পর কীভাবে মাত্র ১১ মাসের মধ্যে বাঙালি জাতির অধিকারের দলিল-সংবিধান রচিত হলো সেই ইতিহাস। 

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান গৃহীত হওয়ার প্রাক্কালে জাতির পিতা যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন তার গুরুত্ব উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, সেদিন তিনি বাঙালি জাতির জন্য প্রথমবারের মতো একটি শাসনতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সদ্য স্বাধীন একটি দেশের সংবিধান রচনা করার ঘটনা বিশ্বে বিরল”।

সংবিধান দিবস পালনের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়ে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মাঝে সবিধান পাঠ ও এর চর্চা আরো বৃদ্ধি পাবে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সংবিধান প্রণয়নের ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে যা বাংলাদেশের সংবিধানের মর্যাদা, তাৎপর্য ও পবিত্রতাকে আরো সমুন্নত রাখবে।

সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ “সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য” উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উদ্দেশ্যে বলেন, “আমরা আমাদের কর্ম ও চিন্তায় যেন সর্বদাই সংবিধানকে অনুসরণ করি”।

উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিকত্ব এবং এর বিভিন্ন ভাগের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন, ইকোনমিক মিনিস্টার মাহমুদুল হাসান, ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার ছাদেকুজ্জামান। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের নানা দিক উঠে আসে এ উন্মুক্ত আলোচনায়। আলোচকগণ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান শুধু আমাদের সর্বোচ্চ আইনই নয় এতে দেশের সীমারেখা, প্রশাসনিক ভিত্তি, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগসহ রাষ্ট্রপরিচালনার সংশ্লিষ্ট সকল দিকই তুলে ধরা হয়েছে, যা পূর্ণাঙ্গ এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি রাষ্ট্রীয় দলিল। স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটিতে মিশনের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করে দূতালয় প্রধান ফাহমিদ ফারহান।

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট

গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্কে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’ পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। অতঃপর ‘জাতীয় সংবিধান দিবস’-এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্বের ওপর একটি বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। 

এ বিশেষ আলোচনার শুরুতে কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় লাভের মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার জাতিকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি লিখিত সংবিধান উপহার দেন যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তিনি পবিত্র সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বাস্তবায়নে সকলকে যে যার অবস্থান থেকে দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহবান জানান। 

মহান সংবিধানের সম্মান ও মর্যাদা অক্ষতুœ রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

শেয়ার করুন