২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০২:৪৭:৩২ অপরাহ্ন


রাজনৈতিক অদূরদর্শিতায় নদীর করুণ দশা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১১-২০২২
রাজনৈতিক অদূরদর্শিতায় নদীর করুণ দশা


নদী কোনো রাজনৈতিক দলের একার সম্পত্তি না। নদী রক্ষায় দল-মত-নির্বিশেষে রাজনৈতিক দলগুলিতে একসাথে কাজ করে যেতে হবে। কেননা রাজনৈতিক দলগুলি অদূরদর্শিতার কারণে নদী আজ এই করুণ দশা। নদী হয়ে পড়েছে জনবসতির পেছনের অংশ। সম্প্রতি ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম এবং বারোগ্রাম বালু নদী মোর্চার যৌথ আয়োজনে বালু নদী উৎসবের আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।  বালু নদী তীরবর্তী ইটাখোলা, ত্রিমোহনী, খিলগাঁও এলাকায় দূষণমুক্ত নদীর দাবিতে বালু নদী উৎসব ২০২২ এর দিনব্যাপী কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. হুমায়ূন কবীর, ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম শহীদ উদ্দীন। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম লিড শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী এবং নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির। 

রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ এজাজ বিস্তারিতভাবে বালু নদীর ইতিহাস এবং সার্বিক পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনায় নদীদূষণ বন্ধে সংহতি প্রকাশ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন (৭৫নং ওয়ার্ড), মো. আনিসুর রহমান (২নং ওয়ার্ড) এবং মো. আজিজুল হক (৭৪নং ওয়ার্ড)। অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন, কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি মাইনুদ্দিন আহমেদ। নদী উৎসবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় দেশের চারজন রিভারকিপারকে।

সিলেটের সুরমা নদীর আব্দুল করিম কিম, হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর তোফাজ্জল সোহেল, বাগেরহাটের পশুর নদীর শেখ নুর আলম ও ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর ইবনুল সাঈদ রানা। স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদালয়ের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার আয়োজকদের পক্ষে ধন্যবাদ জানান।

ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল উৎসবের প্রেক্ষাপট আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, বালু নদীসহ ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণের কারণে দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। নদী হয়ে পড়েছে জনবসতির পেছনের অংশ। নদী যেন আবার জনবসতির সম্মুখভাগে আসে তাই নদীকে তার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্যই বালু নদী উৎসবের আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বারোগ্রাম বালু নদী মোর্চার আহ্বায়ক মো. সুরুজ মিয়া বলেন, ঢাকা শহরের বর্জের কারণে এই বালু, দেবধোলাই, নড়াই নদীসমূহ ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই আমরা এই নদীদূষণ প্রতিরোধ করে দূষণমুক্ত নদী গড়া ও নদীসম্পদ রক্ষা করার প্রত্যয়ে দূষণমুক্ত নদীর দাবিতে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পরিবেশ নিয়ে সচেতন ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে এমন সংগঠনসমূহের কারণেই আজ পরিবেশ আন্দোলন বৈঠকখানার আলোচনা থেকে মাঠপর্যায়ের কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। দূষণমুক্ত পরিবেশ, নদী ও বায়ু জনগণের প্রচেষ্টা এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত হবে। 

আলহাজ হুমায়ূন কবির বলেন, বিবেকের তাড়নায় নদীরক্ষায় মাঠে নেমেছি। বুড়িগঙ্গা রক্ষায় অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছিল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলি অদূরদর্শিতার কারণেই নদীদূষণ দখল বাড়ছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হলো দূষণ ও দখলের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। দল-মত-নির্বিশেষে সকলকে নদীদূষণ ও দখল বন্ধের জন্য একত্রে কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারের গৃহীত যে কোনো প্রকল্প যেন নদী, খাল-বিল বা পরিবেশের ক্ষতি না করে সেদিকে খেয়াল রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলা আছে।  খুশি কবির বলেন, নদীর নিজস্ব গতি আছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে নদী দখল ও দূষণ করে এর প্রবাহ বাধা দিয়ে কোনো লাভ নেই, বরং তাতে পরিবেশের ক্ষতি। তাই পরিবেশ রক্ষা করে জনগণের সুবিধার্থে নীতি প্রণয়ন করা উচিত। উৎসবের পরবর্তী অঙ্কে লাঠিখেলা ও বালিশ নিক্ষেপ খেলার আয়োজন করা হয় এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দুদিনব্যাপী আয়োজিত বালু নদী উৎসব ২০২২-এর সমাপ্তি হয়।  রাজধানী ঢাকাকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে একটি বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ইউএসএআইডি এবং কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনালের সহায়তায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ এবং স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রকে (ক্যাপস) সাথে নিয়ে কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে একটি দূষণবিরোধী নাগরিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই কর্মসূচিটির আয়োজন করা হয়েছে। বালু নদী উৎসবের আয়োজকবৃন্দ মনে করেন এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নদী পাড়ের মানুষেরা তাদের প্রাণ বালু নদীকে দূষণমুক্ত করার কাজে অনুপ্রাডুত হবে।

শেয়ার করুন