২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:০৩:১০ অপরাহ্ন


১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপি’র বিভাগীয় মহাসমাবেশ
শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশই বিএনপি’র টার্গেট
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশই বিএনপি’র টার্গেট মির্জা ফখরুল বক্তব্য দিচ্ছেন/ফাইল ছবি


আগামী ১০ ডিসেম্বরে দেশবাসীকে রাজধানীতে একটি শান্তিপূর্ণভাবে মহাসমাবেশেরই টার্গেট বিএনপির। দেশবাসীর পাশাপাশি আর্ন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাদের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির বিসয়টি জানান দিতে আগ্রহী। অন্যদিকে সরকারকে তাদের বর্তমান রাজনৈতিক সাংগঠনিক শক্তির একটা কড়া বার্তা দিতে চায়, যেনো এদলটিকে হিসাব করে আগামীতে সব কিছু করে । মুল কথা হচ্ছে বিএনপি’র টার্গেট হচ্ছে দেশে একটি শক্তিশালি বিরোধী দল হিসাবে তাদের জনশক্তিকে রাজনীতির মাঠে তুলে ধরা। আর এজন্যই তারা সারাদেশে বিভাগীয় সম্মেলন করে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে মহাসমাবেশের কর্মসূটি রেখেছে। এবিষয়টিকে তারা একটি রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ হিসাবেই নিয়েছে। এসব তথ্য জানা গেছে, দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে। 

বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশের টার্গেট ও ফলাফল

গত সেপ্টেম্বরে বিএনপি বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশের ব্যানারে কর্মসূচি ঘোষণা করে। ৮ই অক্টোবর থেকে দেশের ১০ বিভাগীয় শহরে গণ-সমাবেশ করবে বলে তাদের ঘোষণা বলা হয়। বিএনপি’র অভিযোগ গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলার নুরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়া'র মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে তারা এসব কর্মসূচি পালন করছে।এপর্যন্ত যে সব স্থানে সমাবেশ হয়ে গেছে সেগুলি হলো ৮ অক্টোবরে চট্টগ্রামে। ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ময়মনসিংহে। আর ২২ অক্টোবরে হয় খুলনায়। ২৯ হয় অক্টোবর রংপুরে।  ৫ নভেম্বর  হয় বরিশালে। সামনে ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট। ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়। ৩ হয়ে গেলো ডিসেম্বর রাজশাহীতে। সামনে রয়েছে বহুল আলোচিত এই ১০ ডিসেম্বর। যাকে বিএনপি নাম দিয়েছে মহাসমাবেশ। 

এদিকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি কি পেয়েছে বা কি হারিয়েছে ইতোমধ্যে তারও একটি বিশ্লেষন হয়ে গেছে রাজনৈতিকভাবে। দলীয় একটি সুত্র জানায়, এসব সমাবেশে বিএনপি যেমন ভালো জনসমর্থণ পেয়েছে তেমনি দেশে-বিদেশে মিডিয়ায়ও হ্রদয়গ্রাহী কভারেজ পেয়েছে বলে মনে করে। বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ অংহিস আন্দোলন করছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে তা স্পস্ট করে তোলে। যদিও দলটির  যে দাবি নিয়ে এমন কর্মসূচি ছিল তা হলো তাদের ভাষায় গণবিরোধী কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, চলমান আন্দোলনে ভোলার নুরে আলম ও আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন ও যশোরে আব্দুল আলিম মোট ৫ জন হত্যার প্রতিবাদে, বেগম খালেদা জিয়া'র মুক্তি এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে। এদাবিতে কোথা উল্লেখ নেই যে বিএনপি রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ করে সরকারকে হটিয়ে দেবে। বা ঢাকায় মহাসমাবেশ রাজধানীতে অবস্থান নিয়ে নেবে বা বসে পড়বে। তাদের কর্মসূচির মুল লক্ষ্যই হচ্ছে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডকে একটু ঘষে মেজে দেখা। এর পাশাপাশি দলকে নতুনভাবে সাজাতে যে কমিটি করা হয়েছে তা দেখতে লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান অধীর আগ্রহী ছিলেন।  কারণ তারেক রহমানে হাতেই এবারে বিএনপিসহ তা অঙ্গ সংগঠনের কমিটি তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, বিভাগীয় সম্মেলন করে বিএনপি’র হাইকমান্ড খুবই সন্তুুষ্ঠ। অপরদিকে এধরণের কর্মসূচি পেয়ে দলের নেতাকর্মীরাও বেশ উৎফুল্লবোধ করছে বলে পার্টিতে ব্যাপভাবে আলোচিত হয়েছে। ফলে বিএনপি’র বিভাগীয় সম্মেলন আশাতীত ভালো হয়েছে বলেই দলের নেতাকর্মীরা মনে করছে। 

বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চাওয়ার নেপথ্যে?

বিএনপি’র বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে প্রচারণা হয়েছে যে এটি একটি সন্ত্রাসী দল। সারাদেশে আগুন সন্ত্রাস করে। তারা গণতন্ত্র চায় না। সুষ্ঠু নির্বাচনও চায় না। এজন্য তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না। এর পাশাপাশি দলটি জামায়াতে ইসলামীর মতো একটি স্বাধানতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক দলের সাথেও আতাত আছে। এমনটাই দেশে বিদেশে প্রচার করা হয়েছে। এসব দুর্নাম অতিমাত্রায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এর মাধ্যমে দশম সংসদ গঠিত হলেও অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির বর্জন, ব্যাপক সহিংসতা এবং বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার কারণে দেশটির নির্বাচনের ইতিহাসে এটি এখন পর্যন্ত বহুল বিতর্কিত নির্বাচনগুলোর একটি হয়েছে । তবে এনির্বাচনে না যেয়ে বিএনপি রাজনৈদিকভাবে দেশে বিদেশে সমালোচিত হয় অন্য কারণে। তাদের ঘাড়ে সব দায় বর্তায় এই বলে যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি কিন্তু সারাদেশে নির্বাচন বর্জনের নামে ব্যাপক সহিংসতার চালিয়েছে। আর এমন প্রচারনায় ঘি ঢেলে দেয় সরকারের বিভিন্ন মাধ্যম।


তারা এব্যাপারে দেশের মধ্যে যেমন প্রচারণা চালিয়েছে এই বলে যে দলটি সারা দেশে জামায়াতের মতো একটি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সাথে নিয়ে আগুন সন্ত্রাস করেছে। এব্যাপারে সে সময়ে সরকার কুটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করেও বিএনপি’র বিরুদ্ধে। অভিযোগ আনে যে এদলটি সারা দেশে নির্বাচন বর্জনের নামে আগুন সন্ত্রান করে। যার বিরুদ্ধে বিএনপি বর্তমানে বেশি বেশি মুখ খুলছে যে তারা ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আগুন সন্ত্রাস করেনি। এটা সরকারই করেছে। সম্প্রতি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা আওয়ামী লীগ নিজে, সরকার নিজে। তিনি দাবি করেন, অগ্নিসন্ত্রাসের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা গেছে প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকেরাই জড়িত।

তিনি এব্যপারে গণমাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এতে তিনি সম্প্রতি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অনেক বিষয় তুলে ধরেন এব্যাপারে। তিনি বলেন, সরকারি দলের নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে আবার আগুনসন্ত্রাসের কথা নতুন করে বলছেন, এর কারণ কী, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এটা হচ্ছে চলমান আন্দোলনের যে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে এবং তার যে গতি প্রতিদিন বাড়ছে, তাতে ভীত হয়ে তারা আগের বিষয়গুলোকে নিয়ে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো যেটা সত্য কথা, এই অগ্নিসন্ত্রাসের মূল হোতা কিন্তু আওয়ামী লীগ নিজে, সরকার নিজে। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রতিটি ঘটনা দেখা যাচ্ছে যে আওয়ামী লীগের লোকেরাই এর সঙ্গে জড়িত। বাসের ব্যাপারটা মনে আছে নিশ্চয়ই আপনাদের।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম এই সময়ে আরো বলেন, ‘যেটার মালিক হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রধান (সাধারণ সম্পাদক)। চৌদ্দগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আসামি করে যে মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে, সবকিছুর মূলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের লোকরাই এর সঙ্গে জড়িত।’মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করা দল। আমরা কখনোই অগ্নিসন্ত্রাস বা সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় যাইনি, এখনো যেতে চাই না।

শেষ কথা

বিএনপি কর্মসূচির ব্যাপারে সরকার খুব ভালোভাবেই জানা আছে। তাদের কাছে এব্যাপারে পর্যাপ্ত রির্পোটও আছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। এছাড়া এপর্যন্ত বিভাগীয় সমাবেশগুলিেেত বিএনপি প্রমান করতে পেয়েছে যে তারা একটি অংহিস আন্দোলনের মাধ্যমেই সব কিছু করতে চায়। যদিও দলের বেশ কয়েকচন মাঝারি গোছের নেতার কারণে বক্তৃতা-বিবৃতির কারণে দেশে বিদেশে ভিন্ন বার্তা গেছে। এবয় বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা অন্যরকম পর্যায়ে চলে গেছে। তবে সব মিলিয়ে বিএনপি যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চায় তার একটা ধারণাও দিয়েছে। তা ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নয়াপল্টন না হলে পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প কোনো ভালো জায়গার প্রস্তাব করলে বিএনপি সেটাও বিবেচনা করবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। এতে বিএনপি একটি সূত্র জানায়, সমাবেশের জন্য বিকল্প হিসেবে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বিএনপি যদি শান্তিপূর্ন সমাবেশ না চাইতো তাহলে পল্টনকেই বেছে নিতো সরকারি নিষেধ উপেক্ষা করে। কিন্তু দলটি তা করেনি। এবং নিজের স্থান থেকেও সরে এসেছে দলটি। কারণ তারা একটি শান্তির্পণূ অহিংস আন্দোলন নিয়ে এগুতো চায়। এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশই বিএনপি’র টার্গেট বলে দলের হাই কমান্ডের ইচ্ছা। কারণ দলটির মুল টার্গেটই শো-ডাউন,সরকার পতন আন্দোলন না। 



শেয়ার করুন