২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৮:১৩:৬ পূর্বাহ্ন


বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে জাফর মাহমুদ
প্রতিটি বাংলাদেশির স্লোগান হোক ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১২-২০২২
প্রতিটি বাংলাদেশির স্লোগান হোক ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’ মেয়রের ক্রেস্ট প্রদান করছেন আবু জাফর মাহমুদ


একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এক নম্বর সেক্টর কমান্ডের আওতায় গঠিত মাউন্টেইন ব্যাটালিয়ান কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন ও গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবির সঙ্গে এবার উচ্চারণ করেছেন আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি। তিনি বলেছেন, প্রতিটি বাংলাদেশির প্রাণের স্লোগান হওয়া উচিত ‘জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ’। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবস উপলক্ষে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটি আয়োজিত ‘বিজয়ের বায়ান্ন’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন। উডসাইডের গুলশান টেরাসে নিউইয়র্কের পথিকৃৎ হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপাপ ও অ্যালেগ্রা যৌথভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে ওই অনুষ্ঠানের।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, সন্তানের ভ্রুণ থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত যে যন্ত্রণা, যে ভালোবাসা ও পরীক্ষা তা প্রতিটি মা উপলব্ধি করেন। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে বড় হয় পুরোটাই মায়ের মমতা ও যত্নে। মায়ের চেয়ে ভালো আর কেউ বোঝে না। এই সত্য প্রত্যেক জাতির সঙ্গেও মিলে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা বাংলাদেশের সরকার গঠন করতে পারেননি। তাদেরকে দিয়ে আমরা সরকার গঠন করিনি। আমাদের ছিল না রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা। আমাদের কেউ মন্ত্রী ছিলেন না। একমাত্র বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী ছিলেন পাকিস্তান সরকারের, তাও কিছুদিনের জন্য। আমরা পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেমবির মেম্বার পর্যন্ত ছিলাম না। পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যতিরেকেই আমাদের বড় ভাইয়েরা সরকার গঠন করেন। তারাই আমাদের মুরুব্বি। আমরা তাদেরকেই মেনেছি। আমরা মেনে মেনেই এ পর্যন্ত এসেছি। এর ভেতরেই আমরা অনেক মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছি। বহু জীবন হারিয়েছি। বহু নেতা ও মুরুব্বিদের হারিয়েছি। জনাব জাফর নিজের জীবনচিন্তা ও ধর্মানুভূতির কথা তুলে ধরে বলেন, জাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয়, আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন তা পবিত্র হয়। কিন্তু আল্লাহ যে জ্ঞান দিয়েছেন, যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার জন্য কী করেছি, তার জাকাত কি? আমি বিশ্বাস করি, সেই জাকাতটিই হচ্ছে দেশের জন্য নিবেদিত হওয়া। সেই তাগিদ ও কর্তব্যের তাড়না থেকে, নতুন প্রজন্মের সামনে দেশপ্রেমের আদর্শ তুলে ধরার প্রয়াস হিসেবে, মহান মুক্তিযুদ্ধের শুদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরার চিন্তা থেকেই এই আয়োজন। তিনি ষাটের দশকের দূরদর্শী ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানের কথা তুলে ধরে বলেন, তিনি জয় বাংলা স্লোগান তুলে গোটা ছাত্রসমাজকে আন্দোলিত করে গোটা জাতির মধ্যে তার প্রভাব ছড়িয়ে দেন। সেই শক্তির রেশ এখনো চলছে। কিন্তু আজকে ভারতের বাঙালিরাও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেয়। জাফর বলেন, আমরা আমাদের রাষ্ট্রগঠন করেছি, আমরাই আমাদের পতাকা নির্ধারণ করেছি, আমরাই আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়েছি। তাই জয় বাংলা স্লোগান যখন দেন, তা যদি ভালোবেসে দেন, তাহলে তার সঙ্গে অবশ্যই রাষ্ট্র থাকতে হবে। বাংলাদেশ থাকতে হবে। জয় বাংলার পাশাপাশি স্লোগান হতে হবে ‘জয় বাংলাদেশ’। এটিই প্রতিটি বাংলাদেশির স্লোগান।

অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে নির্ধারিত সম্মানিত অতিথি নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস উপস্থিত হতে না পারায় তার প্রতিনিধি ডেপুটি কমিশনার দিলিপ চৌহান যোগ দেন। তিনি অভিবাসীদের সুযোগ ও স্বপ্ন পুরণের প্রশ্নে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শহর নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উদযাপনের ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজনকে দৃষ্টান্তমূলক বলে অভিহিত করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের হাতে মেয়র এরিক অ্যাডামসের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মানসূচক ‘রিসাইটেশন’ প্রদান করেন। সেসময় মেয়রের জন্যও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি ইউনিভার্সিটিজ এর বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ড. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক আজকাল এর প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমেদ, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, নিউইয়র্ক মেয়রের উপদেষ্টা ফাহাদ সোলাইমান, জাতীয় চ্যাম্পিয়ন শুটার ও অলিম্পিয়ান এস এম ফেরদৌস, চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি কাজী আযম, সন্দ্বীপ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আশরাফ উদ্দিন, মূলধারার রাজনীতিক মামনুনুল হক, অধ্যাপক এম রহমান সুজন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মওলানা মুহম্মদ আব্দুস সাদিক, বাইবেল থেকে পাঠ করেন রেভারেন্ড জেমস রয় এবং রামায়ণ ও গীতার শ্লোক থেকে আলোচনা করেন রাশেশ্বরী গোল্লাপুরি।

আলোচনা পর্ব শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানসহ জনপ্রিয় সব দেশগান পরিবেশন করেন বিশিষ্ট শিল্পী রিজিয়া পারভীন ও চন্দন চৌধুরি। আবৃত্তি করেন অভিনয়শিল্পী ও আবৃত্তিকার টনি ডায়াস ও মোস্তফা কামাল। নৃত্য পরিবেশন করেন প্রিয়া ডায়াস।

শেয়ার করুন