০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৩:৪৪ পূর্বাহ্ন


জাতীয় হিন্দু মহাজোটের অভিযোগ
এক বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৩
এক বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে


জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখ পর্যন্ত গত এক বছরে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৫৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যার হুমকি ৮৪৯ জন, হত্যা চেষ্টা ৪২৪ জন, জখম ও আহত করা হয়েছে ৩৬০ জনকে, নিখোঁজ হয়েছে ৬২ জন, চাঁদাবাজি হয়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা, মোট ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ৮৯ লাখ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা। পরিবার ও মন্দির লুট হয়েছে ৩১৯টি। বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে ৮৯১টি, অগ্নিসংযোগ হয়েছে ৫১৯টি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর ১৭৩টি।

ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গত ৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাডুক এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সাথে ছিলেন হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট দীনবন্ধু রায়, প্রেসিডিয়াম মেম্বার অভয় কুমার রায়, যুগ্ম মহাসচিব সুজন দে, সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক প্রদীপ চন্দ্র চন্দ, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক সুমন সরকার, দফতর সম্পাদক কল্যাণ মন্ডল, হিন্দু মহিলা মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট লাকী বাছাড়, হিন্দু স্বেচ্ছছাসেবক মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌরাঙ্গ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক তোলন চন্দ্র পাল, হিন্দু যুব মহাজোটের সভাপতি প্রদীপ শঙ্কর, নির্বাহী সভাপতি গৌতম সরকার অপু, সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ান মৃণাল মৃধা, প্রধান সমন্বয়কারী প্রশান্ত হালদার, দফতর সম্পাদক রঞ্জন সরকার ধর্মবিষয়ক সম্পাদক গোপাল সরকার রোমেল, ছাত্র মহাজোটের সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় কুমার রাহুল, সঞ্জিব বিশ্বাস পিন্টুলাল দাস, কিশোর চন্দ্র দাস প্রমুখ। 

সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয় যে, এই সময়ে ভূমি দখল হয়েছে ৮ হাজার ৯৯০ একর ৬৩ শতাংশ, যার মধ্যে, ম্রৌ, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল ও ত্রিপুরা পাহাড়ি আদিবাসীদের ৬ হাজার ৫৫০ একর এবং সমতলের হিন্দুদের ২৪৪০.৬৩ একর শতাংশ। ঘরবাড়ি দখল হয়েছে ৫৭টি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫০টি, মন্দিরের ভূমি দখল হয়েছে ৫১টির। দখলের তৎপরতা ৯৮৪ একর ১২ শতাংশ। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ ৫৭২টি পরিবার, উচ্ছেদের চেষ্টা ৩ হাজার ৬৯৪টি পরিবার, উচ্ছেদের হুমকি  ৩৫ হাজার ৮১৮টি পরিবার। দেশত্যাগের বাধ্যকরণ ৪৪৫টি পরিবারের মধ্যে বম সম্প্রদায়ের ২০০ পরিবারকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দেশত্যাগে হুমকির শিকার ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার, নিরাপত্তাহীনতায় ১ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি, অপহরণ করা হয়েছে ১২৭ জনকে, অপহরণের চেষ্টা ২৭ জনকে। ৩৯ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, গণধর্ষণের শিকার ২৭ জন। 

তবে একইসাথে বলা হয় যে, দেশে ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন বাড়লেও ২০২২ সালে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু নির্যাতন কমেছে। প্রতিমা ভাঙচুর, জমি দখলসহ কিছু ক্ষেত্রে নির্যাতন কমেছে। আর এজন্য সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের তৎপরতা ও ত্বরিতগতিতে ব্যবস্থা নেয়ার কারণেই সংখ্যালঘু নির্যাতন কিছু ক্ষেত্রে কমেছে। সেজন্য তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের সাধুবাদ ও ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি আশা করেন প্রশাসন বর্তমান অবস্থার মতো আন্তরিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করলে সংখ্যালঘু নির্যাতন উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধকল্পে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন-ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়। এর পাশাপাশি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং একটি উপ-রাষ্ট্রপতি ও উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানানো হয়।

শেয়ার করুন