২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:৫৭:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


সিলেট টেস্টের পোস্টমার্টেম
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
সিলেট টেস্টের পোস্টমার্টেম সাকিব আল হাসান


বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মধ্যে দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীতে ৩০ এপ্রিল থেকে। বাংলাদেশ দলের অধীর আগ্রহ ওই টেস্ট ঘিরে। সিলেটে প্রথম টেস্টে ভরাডুবির পর নিজ মাঠে টেস্ট সিরিজে হারের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। অবস্থা বেগতিক বুঝে অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়েছে স্বাগতিকরা। কতটা দুশ্চিন্তা হলে এমন পরিস্থিতি হয় সেটা আর লিখে বুঝানোর প্রয়োজন নেই। তবে প্রথম টেস্টে অভিজ্ঞার প্রচুর ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সে আলোকে বলাই যায় এ দল নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা যাবে না। সাকিবকে ফিরিয়ে কিছুটা উজ্জীবিত করার প্রাণান্ত চেষ্টা আর কি! 

কিন্তু হঠাৎ টেস্টে এতটা বিপর্যয় কেন এ নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে প্রচুর সমালোচনা। আসলে সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত সিমিং সুইং উইকেটে বাংলাদেশ সাড়ে তিন দিনে টেস্ট ম্যাচ হেরেছে শ্রীলংকার কাছে। পরাজয়ের ব্যাবধান ৩২৬ রানের। শ্রীলংকা উভয় ইনিংস মিলে রান করেছে ৬৯৮ যার ৪৭৬ এসেছে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা এবং কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। বাদ বাকি ৯ জন করেছে ২২২ রান। বাংলাদেশ উভয় ইনিংস মিলে করেছে ৩৭০। বলা যায় বাংলাদেশ দুই শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানের কাছেই ম্যাচ হেরেছে। 

সবুজ ঘাসের উইকেটে টস ভাগ্য ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। নতুন বলে এই উইকেটে মারাত্মক সিম মুভমেন্ট ছিল, আকাশ মেঘে ঢাকা থাকায় দীর্ঘ দেহী বাংলাদেশ পেসাররা সুইং পাচ্ছিলো। শ্রীলংকান টপ অর্ডার দাঁড়াতেই পারেনি। প্রথম দিন প্রথম সেশনে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল অতিথি দল। শরিফুলের বলে শুন্য রানে কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচটি স্লিপ থেকে জয় লুফে নিলে হয়তো স্বল্প রানে শ্রীলংকার ইনিংস গুটিয়ে যেত, হয় নি সেটি। দ্বিতীয় সেশনে বলের সাইন চলে যাওয়ায় ব্যাটিং সহজ হয়ে যায়। এই সুযোগে ধনঞ্জয়া-মেন্ডিজ প্রতিআক্রমণ করে বাংলাদেশ ব্যাটিং এলোমেলো করে দেয়। এখানেই পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। এই জুটির ২০২ রানের সুবাদে ২৮০ করতে পারে ওরা প্রথম ইনিংসে। দিনের শেষ ঘন্টায় নতুন বলে বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। দ্বিতীয় দিন সকলেও নতুন বলে দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, একমাত্র তাইজুল প্রবল ইচ্ছা শক্তির প্রয়োগে দীর্ঘক্ষণ ১৪৭ মিনিট সময়ে ৮০ বল খেলে ৪৭ রান করে।

টপ অর্ডারের একজন ওর সঙ্গে থাকলে বাংলাদেশ হয়তো শ্রীলংকা দলের সংগ্রহের কাছাকাছি যেতে পারতো। ১৮৮ রানে ইনিংস শেষ করে ৯২ রানে পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে আবার বাংলাদেশ নতুন বলে শ্রীলংকার টপ অর্ডার ধসিয়ে দেয়। ১১৩ রানে ৫ উইকেট হারানোয় টেস্ট ম্যাচটি প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভ্যাস দেয়। তৃতীয় দিন সকালে চট জলদি ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে। আবারো প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলে সেই ধনঞ্জয়া কামিন্দু জুটি। ওদের যোগাযোগে ১৭৩ রান যোগ হওয়ায় বাংলাদেশের জয়ের টার্গেট ৫১১ রানের পাহাড় চূড়ায় পৌঁছে। বলা যায় ওদের দুইজনের একই টেস্টে উভয় ইনিংসে যুগল শতরান বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। তবু আশা ছিল লড়াই করবে বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় দিন শেষ বেলায় মাত্র ১৩ ওভারে মাত্র ৩৭ রানে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের পতন ঘটলে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। চতুর্থ দিনে মোমিনুল হক তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুললেও একমাত্র মেহেদী মিরাজ ছাড়া কোনো যোগ্য সঙ্গী না থাকায় ১৮২ রানের বেশি করতে পারে নি বাংলাদেশ। মোমিনুলের অপরাজেয় ৮৭ রানের ইনিংস প্রমাণ করে নিজেদের প্রয়োগ করে খেলতে পারলে এই উইকেটে রান করা বাংলাদেশ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের আয়ত্বে ছিল। বিশেষ করে দ্বিতীয় ইনিংসে যেভাবে নাজমুল শান্ত এবং লিটন দাস আত্মাহুতি দিয়েছে সেটি ছিল রীতিমত লজ্জাজনক। বাংলাদেশ হেরে যায় ৩২৮ রানের বিশাল ব্যাবধানে। ০-১ পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের সামনে এখন সিরিজ ধবল ধোলাইয়ের শংকা। 

ম্যাচটির ব্যাবচ্ছেদ করলে দেখা যাবে দুইদলের টপ অর্ডার উভয় ইনিংসে নতুন বলে ঝরে পড়েছে। সৌভাগ্য শ্রীলংকার ওদের অধিনায়ক এবং অপেক্ষাকৃত নবীন ব্যাটসম্যান কামিন্দু পুরানো বলে খেলতে পেরেছে। গুণগত মানে ওরা অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে অনেক উন্নত। ফিরে দেখলে বলতে হয় বাংলাদেশের অধিকাংশ নবীন খেলোয়াড় এই ধরনের উইকেটে এর আগে কখনো খেলে নি। এবারেও টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য কোনো প্রস্তুতি নেয়া হয় নি। অজুহাত দিবো না। তবু অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কঠিন উইকেটে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা এবং টেস্ট মেজাজের অভাবে হেরে গেছে। দেখতে হবে স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে প্রথম টেস্ট বিড়ম্বনা থেকে কতুটুকু শিক্ষা নেয় বাংলাদেশ?

দলের এই কঠিন মুহূর্তে অতিরিক্ত সমালোচনা না করে দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখা উচিত। কিন্তু সেটাও বা কতটা।বাংলাদেশ দলের চরম ব্যর্থতার শেষে সমালোচনা ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। বাংলাদেশের স্বনামধন্য কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম তার টাইম লাইনে যা লিখেছেন সেটা হুবহু তুলে ধরা গেল- “ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট শুধু স্কিলকে মার্জিত করে তাই নয়, ‘ক্রিকেটিয় চরিত্র’ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ‘Cricket creates character’, কথাটার উৎপত্তি এখান থেকেই। 

এই ফরম্যাটে কারোরই কোন ধরনের এক্সকিউজ দেয়ার সূযোগ নেই। সব কিছুই একেবারে ব্ল্যাক এ্যন্ড হোয়াইট। সিচুয়েশন বোঝ এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নাও। সেই অর্থে স্কোর বোর্ড প্রেশার বলেও কিছু নেই। স্কিল যতই থাকুক না কেন চাপ নেয়ার ক্ষমতা না থাকলে তুমি এই খেলার যোগ্য নও। কোথাও না কোথাও এই অপূর্ণতা ধরা পড়ে যাবেই। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে চলমান এই টেস্টের দুই ইনিংসেই তাইজুল প্রমাণ করে দিয়ে গেল যে চাইলে এখানে টিকে থাকা য়ায়। এবং টিকে গেলে একসময় পুরো ব্যাপারটা সহজও হয়ে যায়। যদি তা না হত তাহলে প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট হারানোর পর সেই জায়গা থেকে শ্রীলংকা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারতো না। 

লংগার ফরম্যাট মানেই হল হার না মানার প্রত্যয় নিয়ে স্রোতের বিপরিতে দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকা। শুধু স্কিল দিয়ে হয় না, আত্মসম্মান বোধের পরীক্ষা হয় এখানে। কমফোর্ট জোন বলে এখানে কিছু নেই। এখানে টিকে থাকতে হয় সব প্রতিকুলতাকে হার মানিয়ে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যারা এই কাজগুলি ধারাবাহিকভাবে বছরের পর বছর করে থাকে তাদেরই এক সময় টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে বিবেচিত হবার সৌভাগ্য হয়। 

আমাদের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট এর কিছুই দেয় না। বরং যে সততা নিয়ে, যে স্বপ্ন নিয়ে একজন মেধাবি তরুণ এখানে আসে সেটিও হারিয়ে যায় পরিবেশগত কারণে। একসময় সেও নিজেকে মানিয়ে নেয় এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সাথে। তার কাছে এটি হয়ে উঠে কেবলমাত্র রুটি রুজির পথ। এখানে প্রগ্রেস বলে কিছু নেই, প্রগ্রেস রিপোর্ট বলেও কিছু নেই। সব পক্ষ খুশি। অর্থাৎ সব ভালই চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাহিমের এমন স্ট্যাটাসেরও ব্যাপক রিয়াক্ট হতে দেখা যায়। যার প্রায় ৯৯% ই এ লেখা ও সমালোচনামুলক রাইটআপকে সমার্থন করেই। ফলে অনুমান করা যায় ক্রিকেট পাগল মানুষ আসলে কী যায়।

শেয়ার করুন