২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:৬:১৩ অপরাহ্ন


আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৩
পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন


গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফার আন্দোলনে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি আসবে কিনা তা ভবিষ্যতে জনগনই নির্ধারণ করবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

একই সঙ্গে তিনি আ্ওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেন, রাজপথের আন্দোলনে ‘পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন’। 

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছি। দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি, বিদ্যুত-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রতিবাদে আমরা আবারো রাজপথে কর্মসূচি দেবো।”

সামনে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি থাকবে কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এখন পর্যন্ত নাই। ভবিষ্যতে আসবে কিনা এটা বলতে পারবো না। প্রয়োজন বলে দেবে, প্রয়োজন বলে দেবে ভবিষ্যতে কী হবে? জনগনই বলে দেবে। জনগন যদি বলে যে, এখন এখন হরতাল চাকা বনধ, তখন হরতাল চাকা বনধ হবে। জনগন বলবে। আমরা তো বলছি, শান্তিপূর্ণ, একেবারে পিসফুল। আমরা সবসময় পিসফুল প্রোগ্রাম চাচ্ছি-আমরা বিশ্বাস করি এটাতে।”


হরতালের কর্মসূচির বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মধ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ সমস্যাটা ওই জায়গায়। এর আগে আমি অনেকবার বলেছি যে, আপনারা আন্দোলন বলতেই ওইটা(হরতাল-অবরোধ) বুঝেন। সমস্যাটা ওইটা আর কি- এটা ঠিক না। আপনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দেখেন। কয়টি ওখানে হরতাল হয়? হরতাল হয় না। আন্দোলন হয়। রাস্তায় লোক নামে, লক্ষ লক্ষ লোক হেটে যায় ৃ ভারত জুড়ে প্রোগ্রাম করলো কংগ্রেস। হাটলো ১৪৯ দিন ধরে, হাটছে.. এগুলো তো আন্দোলন। আমরা যে কর্মসূচি করছি-এগুলো কি আন্দোলন না। এই আন্দোলনে আন্দোলনে আন্দোলনের মাধ্যমে দেখবেন একদিন জনমত এমন জায়গায় আসবে যে, তখন ওই হরতাল দিতে হবে না। ওরা এমনিতেই চলে যাবে।”


তিনি বলেন, ‘‘ ওরা(সরকারি দল) তো অলিখিতভাবে, অঘোষিতভাবে হরতাল দেয়। আমরা যখন বিভাগীয় সমাবেশ করেছিলাম তখন তারা তিন আগে থেকে হরতাল দেয়, সব বন্ধ করে দেয়, রাস্তা-ঘাট, বাস-ট্রাক, স্টিমার-লঞ্চসহ পরিবহন।”


১০ দফার চলমান আন্দোলন কোন পথে যাবে, কোন পর্যায় যাবে তা ভবিষ্যতে বলে দেবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তবে তিনি বলেন, ‘‘ আওয়ামী লীগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলো, ভাংচুর করেছিল্ সেটা আপনারা জানেন। তবে আমরা এটা মনে করি না, আমরা বিশ্বাস করি যে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদেরকে পরাজিত করব।” 

‘পাল্টা কর্মসূচি থেকে সরে আসুন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের প্রত্যেকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারো তারা ইউনিয়ন পর্যায়েও পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে করে আওয়ামী লীগের যে মূল চরিত্র সেটা উন্মোচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ হচ্ছে সন্ত্রাসের দল, আওয়ামী লীগ খুব ভালো সন্ত্রাসে। এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, তারা সন্ত্রাস, ত্রাস সৃষ্টি করা, ভয় দেখানো, আক্রমন করা, হামলা করা তারা অত্যন্ত পারদর্শী। তো ওইভাবে তারা আবারো আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে নসাত করার জন্য পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে।  এই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে, পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তারা চেষ্টা করছে যে, একটা অনিশ্চয়তার দিকে বাংলাদেশকে নিতে যেতে। আমি উদার্ত আহ্বান জানাচ্ছি আওয়ামী লীগকে তারা ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন।”


গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপি আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ের পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ১০ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যুগপতভাবে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। আওয়ামী লীগ প্রথম থেকে উস্কানি দিয়ে, হুমকি দিয়ে বিভিন্ন ভাবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই সংঘাত এড়িয়ে চলেছি। আওয়ামী লীগ আবার যে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে ইউনিয়ন পর্যায়। আমার কথা হচ্ছে- এবার প্রথম আমরা আওয়ামী লীগকে রিঅ্যাক্ট করতে বাধ্য করছি। এটা নতুন একটা ফ্যানোমেনা। অর্থাত তারা ভীত, সন্ত্রস্ত, তারা এখন নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্নভাবে তাদের অপকৌশলে আবার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা এই কাজগুলো করছে।

আমরা আবারো জোর দিয়ে বলতে চাই, আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি পালন করছি এবং করব। আমাদের আল্টিমেট লক্ষ্য হচ্ছে, জনগনের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনের মাধ্যমে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা, সংসদ বিলুপ্ত করতে বাধ্য করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।”

‘ঢাকায় আবারো পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা’


 মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ১০ দফা দাবি আদায়ে আবারো ঢাকা মহানগরের ৯ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা হবে। ৯ ফেব্রুয়ারি মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাবের মাঠ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব পর্যন্ত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে লিংক রোড, শিয়া মসজিদ মোড়, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড়, বিআরটিসি বাস স্ট্যান্ড মোড়, মোহাম্মদপুর আল্লাহকলি মসজিদ সড়ক হয়ে বছিলা সাত রাস্তার মোড় পর্যন্ত।


 গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে গতকাল রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


স্থায়ী কমিটির সভায় তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ব্যাপক মানুষের প্রাণহানি ও ধবংসস্তুপের নিচে অগনিত মানুষ আটকে পড়ার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তুরস্ক ও সিরিয়া সরকারকে গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে।


 বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিভিন্ন ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন(এইচআরডাব্লিউ) বিবৃতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরকারের বেআইনিভাবে ব্যবহার এবং ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গায় দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা ১৪টি মন্দির প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার নিন্দা জানানো হয় স্থায়ী কমিটি সভায়। 


মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ স্থায়ী কমিটি অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানায়।

একই সঙ্গে সম্প্রতি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের আয়োজিত আলোচনাসভায় খসড়া ‘তথ্য সংরক্ষন আইন’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্টদূতের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই বিষয়টি স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সভা মনে করে প্রস্তাবিত আইন স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মুক্ত ব্যবসার পরিপন্থি। বেআইনি কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে একের পর এক নির্বতনমূলক আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে দেশকে পুরোপুরি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের পরিণত করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, মাহবুবুল হক নান্নু ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন