২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:১৯:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রওশনকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডেকে নেয়ার পেছনে কি?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
রওশনকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডেকে নেয়ার পেছনে কি? প্রধামন্ত্রীর সাথে রওশন এরশাদের বৈঠক/ছবি সংগৃহীত


জাতীয় পার্টিকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড় ধরনের বেকায়দায় পড়েছে। বিশেষ করে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়েই সব ধরনের টেনশন অস্বস্তি আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের। আর এজন্য চাপে রাখতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড এখন নানান ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে। জানা গেছে, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদদের সাক্ষাতের পেছনে এমন তৎপরতারই একটি অংশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

প্রকাশ্যে চলে এলো জাপা’র প্রকৃত আচরণ

গত ১১ ডিসেম্বর সোমবার ছিল মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে খবরে বেরিয়েছে তা-হলো ক্ষমতাসীনরা জাপা’র আচরণকে রহস্যজনক মনে করে। রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন টালমাটাল অবস্থায় দলটি কখন কি করে বসে তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করে বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে বিশ্বাস করা যায় না, জাতীয় পার্টি কখন কী করে, তার ঠিক নেই। ওরা (জাতীয় পার্টি) নির্বাচনে থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। সে বৈঠকেই অভিযোগ আনা হয় যে, জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, রংপুর-১ আসনের এমপি মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং রংপুর-৩ আসনের এমপি রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আর এমন ঘটনার নেপথ্যে ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ আনা হয় জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে। তাছাড়া কেউ কেউ প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়ে জানতে চান যে জি এম কাদেরের পেছনে আসলে কোন শক্তি কাজ করছে। কারা তাকে গাইড করছে? 

আবারো রওশনের ডাক পড়লো

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এমন আলোচনা গুঞ্জনের ক্লু খুঁজতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বসে নেই। আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড এমন বিষয়কে কোনোভাবেই হালকা করে নেয়নি। কেননা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আরো অনেক ক্লু বের করেছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের অস্বাভাবিক নিরবতাও আওয়ামী লীগের কাছে সন্দেহ ঠেকেছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা’র হুট করে অংশগ্রহণের ঘোষণা নিয়ে নানান রহস্যের ডালপালা গজায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। অর্থ্যাৎ যেদিন সংবাদ সম্মেলন করে জাপা নির্বাচনে যাওয়া ঘোষণা দেয় সেসময় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আশেপাশেই দেখা যায়নি। সেসময় থেকে দলটির এই নেতা বেশ লক্ষণীয়ভাবে নিরবতায় রয়েছেন। আবার নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের শক্ত শক্ত বক্তব্য ও মন্তব্য করে যাচ্ছে, যা ক্ষমতাসীনদের ভাবিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি রওশনপন্থিদের চ্যাপ্টার ক্লোজড বলে মন্তব্য করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দলে পন্থি বলে কিছু নেই। আমরা রওশন এরশাদকে সম্মান করি। রওশনপন্থিদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। যে চ্যাপ্টার ক্লোজড, সেটা বারবার কেন আনেন। অনুরোধ করছি বিষয়টা আর আনবেন না, তাহলে আমি কোনো উত্তর দেব না। আবার আরেক অনুষ্ঠানে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বলেছেন, আমরা পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছি। যত বেশি ভোটার আসবে ততো বেশি আমাদের লাভ। আর রাজনীতিতে কিন্তু শেষ বলে কিছু নেই। এই যে রাজনীতিতে কিন্তু শেষ বলে কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডে নজরদারিতে পড়ে গেছে জাপা। সর্বশেষ এক অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দেশে ভোটের হিসাবে বিভিন্ন সময় দেখা যায় অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোট বেশি। আওয়ামী লীগের পক্ষের ভোটের চেয়ে বিপক্ষের ভোট অনেক বেশি। ২০০১ সালে আমার আসনে দেখেছি আওয়ামী লীগের চেয়ে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোট ডাবল। জাতীয় পার্টির মহাসচিব থেকে এমন বক্তব্য পেয়ে দলটি সর্ম্পকে ঘোর কেটে যায় যে তারা যেকোনো সময়ে আওয়ামী লীগের বলয় থেকে সড়ে পড়ছে। আর একারণে বিশেষ করে পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদেরকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো ডেকে নিলেন গণভবনে তার অত্যন্ত বিশ্বস্ত রাজনৈতিক পার্টনার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে। ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে তিনি গণভবনে রওশন এরশাদের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছেলে সাদ এরশাদ ও তাঁর রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ্। এই সাদ এরশাদ সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘জি এম কাদের তাঁর আসন কিডন্যাপ (অপহরণ) করেছেন। আমি আব্বুর (এরশাদ) সিট ছাড়ব না। অন্যদিকে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদকে রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনয়ন না দিলে নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। তিনি জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকেও এমন হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে দেন। কিন্তু এতে কাজ হয়নি রংপুর-৩ ছাড়তে রাজি নন জি এম কাদের। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বৈঠকের ব্যাপারে প্রথমে চালিয়ে দেয়া হয় যে এটি হচ্ছে সৌজন্যমূলক আয়োজন। বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন এবং রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। কিন্তু বৈঠক শেষে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলে ফেলেন যে তিনি জাতীয় পার্টি (জাপা) সঙ্গে জোট বা কোনো ধরনের সমঝোতা না করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেছেন। এর পাশাপাশি নির্বাচন অধিক গ্রহণযোগ্য করার জন্য জাতীয় পার্টি যাতে এককভাবে সারা দেশে প্রতিযোগিতামূলকভাবে নির্বাচন করে, সেটি নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছেন তিনি।

ঝুলে যাবে সব কিছু

বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনা জমে উঠেছিল যে সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাপা’কে নিয়ে। বিশেষ করে দলের অন্যতম অংশীদার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে রাজনৈতিক ময়দান থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে কি-না না হয়েছে তা নিয়ে চলে নানান গুঞ্জন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল কেনো রওশনকে কার পরামর্শে দূরে ঠেলে দেয়া হলো। এমনকি শোনা যায় যে, রওশন এরশাদ জাপা’য় তার ব্যাপারে অতি সম্প্রতি রাজনৈতিক সঙ্কটে পাশে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে রওশন এরশাদকে এমন সঙ্কটকালীন সময়ে তেমন সাড়া দেওয়া হয়নি। আর এমন পরিস্থিতিতে চলে দেশের রাজনৈতির মাঠে নানান ধরনের আলোচনা। প্রশ্ন উঠে কি হচ্ছে জাতীয় পার্টিতে? কারা চালাচ্ছে জাপা’কে? ঠিক এই সময়ে জাপা’র লাগাম কার হাতে? কিন্তু সব জল্পনা কল্পনায় হঠাৎ যেনো ছেদ পড়েছে গত ১২ ডিসেম্বর মঙ্গলবারে গণভবনে রওশন এরশাদের প্রবেশে। আর এমন পরিস্থিতি আসলে কি-সের ইঙ্গিত দিচ্ছে তা সহসাই বলা যাচ্ছে না। তবে একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের সব পক্রিয়া শেষ। তাই জাপা’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার পন্থীদের পক্ষে আপাতত কিছুই করা যাবে না। আর এমনটা-ই জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে খোদ রওশন। রওশন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কয়েকটি প্রশ্নের জবাবও দেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে রওশন বলেন, ‘এখন তো আর সময় নেই। আর কী বলবেন।’ তবে রওশন এরশাদ মুখে তেমন কিছু না বললেও এসময়ে তাকে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে কাছে ডেকে নেয়ার অনেক কিছুর ইঙ্গিত বহন করে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ দলটির (জাতীয় পার্টি) সঙ্গে জোট বা কোনো ধরনের সমঝোতা না করতে যে পরামর্শ দিয়ে এলেন তার একটা ফলাফল অবশ্যই আছে? এমন নাটকীয় ঘটনায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের কি প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন দলটির নেতৃত্বের প্রশ্নে। অন্যদিকে কারো কারো মনে প্রশ্ন এমন পরিস্থিতিতে কি জাপা’র সঙ্গে কোনো ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা হচ্ছে না? সর্তকতার সাথে পা রাখছে আওয়ামী লীগ? নাকি ঝুলে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ-জাপা আসন ভাগাভাগির বিষয়টি? নাকি আসন ভাগাভাগি প্রশ্নের জাপা’র শক্ত প্রস্তাবের পাশাপাশি জি এম কাদেরকে শায়েস্তা করা ও একিই সঙ্গে বেকায়দায় পড়ে নতুন রাজনৈতিক চাল দিলো আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা? সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাপা’র প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদকে কাছে টেনে নেয়ার পেছনে এমন অনেক প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে উকি-ঝুঁকি দিচ্ছে।

শেয়ার করুন