২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৫৪:৩০ পূর্বাহ্ন


বঙ্গ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যবস্থাপনা
তোফাজ্জল লিটন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
বঙ্গ সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যবস্থাপনা বঙ্গ সম্মেলনের অনুষ্ঠানে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনসহ অন্যরা


যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের আটলান্টিক সিটিতে গত ৩০ জুন শুরু হয়েছে ৪৩তম বঙ্গ সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে হোটেল বুকিং, স্টল বুকিং, অনুষ্ঠানমালা নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। সম্মেলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল চরম অব্যবস্থাপনা এবং বিশৃঙ্খলা পরিবেশ। সান্ত্বনা বলতে সনু নিগামের গান। তার আবার হিন্দি। ১০ হাজার আসনের জিম হোয়েলান বোর্ড ওয়াক হলে ওই দিন সন্ধ্যা ছয়টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শহর থেকে ১২ মাইল দূরে ৩০০ আসনের ওশান ভিউ হোটেলে স্বল্প পরিসরে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

হলে ঢোকার জন্য সবাই হুলস্থূল শুরু করে। এ সময় পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে। বেশিরভাগ হোটেল বুকিং ও অনুষ্ঠানমালা বাতিল হয়ে যায়। বিপাকে পড়ে অন্তত ৫ হাজার পরিবার। যুক্তরাষ্ট্রে ২ জুলাই এই আয়োজন শেষ হয়। যুক্তরাষ্ট্রে কলকাতার অভিবাসীদের এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক গৌতম দত্ত শনিবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টায় বঙ্গ সম্মেলনের প্রধান মঞ্চে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনিবার্য কারণে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও কণ্ঠশিল্পী মেহের আফরোজ শাওনের অনুষ্ঠান প্রথম দিন বাতিল করা হয়েছে। শুধু এ অনুষ্ঠান নয়, বঙ্গ সম্মেলনের ওয়েবসাইটে নতুন যে অনুষ্ঠানসূচি দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, অন্তত ৪৫ শতাংশ অনুষ্ঠান বাদ পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে গৌতম দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জিম হোয়েলান বোর্ড ওয়াক হল কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের হলবুকিং বাবদ অগ্রিম ডলার না দিলে বুকিং বাতিল করা হবে বলে জানায়। আগে তাদের এ বাবদ আরো কম ডলার দেওয়ার কথা ছিল। এ পরিস্থিতিতে তাদের পুরো এক দিনের অনুষ্ঠান বাদ দিতে হয়েছে। 

৩০ জুন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও রাত ৮টায় এ অনুষ্ঠান শুরুর আগে আয়োজক সংগঠন নর্থ আমেরিকা বেঙ্গলি কনফারেন্সের (এনএবিসি) ইমেরিটাস চেয়ারম্যান প্রবীর রায় বলেন, ‘আমি প্রথম বঙ্গ সম্মেলন শুরু করে এ পর্যন্ত আছি। ৪২ বছরের বঙ্গ সম্মেলনে এমন বিশৃঙ্খল পরিবেশ কখনো তৈরি হয়নি। এই জন্য সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

২০ বছর ধরে বঙ্গ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী শীতাংশু গুহ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দিতে পশ্চিমবঙ্গের এই আয়োজনে আমরা প্রতি বছরই আসি। এবার যে অরাজকতা দেখেছি, তা বাংলাদেশিদের কোনো আয়োজনে হলে রক্তারক্তি অবস্থা হতো। এখানে সে রকম হয়নি। এবার শুরু থেকে শেষ এ পর্যন্ত সবকিছুতেই বিশৃঙ্খলা। হোটেল বুকিং। অনুষ্ঠানমালা। বুকিং করা স্টল মালিকেরা নানান ধরনের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসে দেখে স্টল বুকিং নেই তাদের নামে। অনেক স্টলে বিদ্যুৎ নেই। অংশগ্রহণকারী পরিচায়ক বেল্ট এবং উপহারসামগ্রী কোনো কিছুই ঠিক ছিল না।’

বঙ্গ সম্মেলনে নিউইয়র্ক থেকে অংশগ্রহণকারী গোবিন্দ জি বানিয়া বলেন, ‘জনপ্রতি ২১৫ ডলার খরচ করে বঙ্গ সম্মেলনের টিকিট কিনেছি। হোটেল বুকিংয়ের জন্য দিয়েছি আলাদা টাকা। এখানে এসে দেখি চরম বিশৃঙ্খলতা। আমাদের পরিবারের তিনজনকে দিয়েছে তিন জায়গায়। আমাদের মতো এমন ৫ হাজার পরিবার এ ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে।’

অব্যবস্থাপনার কারণে কোনো অনুষ্ঠানেই তেমন দর্শক নেই বলে জানান গোবিন্দ জি বানিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেকে এসে ফিরে গেছে। ১৫ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ৪ থেকে ৫ হাজার দর্শক সমাগম হয়েছে।’

এবারের বঙ্গ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন, লন্ডন থেকে আসা লেখক কোনাল বসু, পশ্চিমবঙ্গের কবি সুবোধ সরকার ও সোনু নিগম।  

বঙ্গ সম্মেলনের আহ্বায়ক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শেয়ার করুন