সুন্দরবন রক্ষায় মানববন্ধন
তথাকথিত উন্নয়নের ফলে শুধু সুন্দরবনই নয় বরং দেশ থেকে সব ধরনের বন আজ ধংসের দারপ্রান্তে। সুন্দরবন দিবস- ২০২৩ পালন উপলক্ষ্যে এক মানববন্ধন ও র্যালিকে দেশের পরিবেশবাদিরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন, নাগরিক উদ্যোগ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, উবিনীগ, বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সিডাস, ক্যাপস, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ বাউল ও লোকশিল্পী সংস্থা, নগরবাসী পরিবেশ আন্দোলন, হকার্স ইউনিয়ন ও গ্রীন ভয়েসসহ অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার এ মানববন্ধন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় জাদুঘরের সামনে, শাহবাগ, ঢাকায় “সুন্দরবন বিনাসী সকল কর্মকাণ্ড বন্ধের” দাবিতে এক মানববন্ধন ও র্যালিতে বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমনের সঞ্চালনা করেন।
এতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাপা যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, স্থপতি ইকবাল হাবিব, আলমগীর কবির, বাপা নির্বাহী সদস্য ও সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাপা নির্বাহী সদস্য ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, ইবনুল সাঈদ রানা, সুন্দবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সাংবাদিক নিখিল ভদ্র, পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, নগরবাসী পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি হাজী শেখ আনছার আলী, গ্রীন ভয়েস ঢাকা বিভাগের সভাপতি আব্দুস সামাদ প্রধান, গ্রীন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, আব্দুল কাদের জিলানী, ইসরাত জাহান, তিতলী নাজনিন প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ সংহতি প্রকাশ করেন।
অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, সুন্দরবন দক্ষিণ এশিয়ার ফুসফুস। সুন্দরবন এদেশের রক্ষা কবজ। যতবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ এসেছে ততবারই সুন্দরবন মায়েরমত তার বুক দিয়ে আগলিয়ে রেখেছে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলকে। তথাকথিত উন্নয়নের ফলে শুধু সুন্দরবনই নয় বরং দেশ থেকে সব ধরনের বন আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু উন্নয়ন বিমুখ না তবে যে সকল উন্নয়ন দেশের পরিবেশ বন ও প্রকৃতি উজাড় করে করা হয় সেই ধরনের উন্নয়ন আমরা চাই না। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প হয়েছে বটে কিন্তু এর সুফল সুন্দরবনকে উপেক্ষা করে মূল্যহীন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাই তিনি সমাবেশ থেকে সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বাংলাদেশের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন ও দেশের একমাত্র রক্ষা কবজ সুন্দরবন রক্ষার জন্য সমাবেশ থেকে দু’হাত জোড় করে কতৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান। অসংখ্য জীববৈচিত্রের আঁধার খ্যাত সুন্দরবন থেকে উন্নয়নের নামে সকল ধরনের বন বিনাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবী জানান তিনি।
মিহির বিশ্বাস বলেন, এই ভালোবাসা দিবস হোক সুন্দরবনসহ দেশের সকল বনকে ভালোবাসার। কারণ দেশের ফুসফুস খ্যাত এই বনকে রক্ষা করতে না পারলে আমরা কেউ ভালো থাকব না। সুতরাং চলুন আমরা দেশের বনকে ভালোবাসি, প্রকৃতিকে এবং দেশকে ভালোবাসি।
আলমগীর কবির বলেন, সুন্দরবনকে বাঁচাতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর সেই বাণীকে অবমাননা করা হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এ বনের গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে সুন্দরবন বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সুন্দরবন ধংস হলে দেশের মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তিনি সুন্দরবন বিনাসী সকল কর্মকান্ড অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, সুন্দরবনের জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে না পারলে এই বনকে বাঁচানো যাবে না, তাই তিনি দেশের সবাইকে সুন্দরবনের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।
এছাড়াও দিবসটি উদযাপন বাপা মোংলা শাখায় ‘বাঁচাই সুন্দরবন বাঁচাই পরিবেশ, টেকসই হোক আমাদের বাংলাদেশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন একাডেমী, ব্লু-প্লানেট ইনিশিয়েটিভ (বিপিআই), বাদাবন সংঘ এবং ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর যৌথ উদ্যোগে মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে মোংলা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক সমাবেশ ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মোংলার আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপংকর দাশ, শিক্ষাবিদ সুনীল কুমার বিশ্বাস, সুন্দরবন জাদুঘরের পরিচালক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জেমস্ শরৎ কর্মকার, সুন্দরবন একাডেমীর সুনীতি রায়, বাদাবন সংঘের অজিফা খাতুন, ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম লিডার আলমগীর শিকদার, জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল, বাপা নেতা নাজমুল হক, আব্দুর রশিদ হাওালাদার, কমলা সরকার, শেখ রাসেল, হাছিব সরদার।
