৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৯:৩৫:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


কল্পনাকে উল্লেখ করে কী বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের
পোশাকশিল্পে কী অশনিসংকেত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১১-২০২৩
পোশাকশিল্পে কী অশনিসংকেত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন


বিএনপি হরতাল-অবরোধ ব্যাপক প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন সেক্টরে। কিন্তু মানুষের যে রাজনৈতিক চিন্তাধারা তাদের খুব একটা প্রভাব ফেলছে না। এ মুহূর্তে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন পরবর্তীতে কে দেশ চালাবে সেটাই যেন সবার কাছে মুখ্য। আর এ চিন্তাধারার অগ্রভাগ ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের রাষ্ট্রদূতদের পদচারণা খুবই লক্ষণীয়। মিডিয়া যেমন তাদের কাভারেজ দিচ্ছেন, মানুষও সেগুলো গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন। 

যেহেতু রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে সর্বাগ্রে থাকা মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বাংলাদেশে নেই, তাই যেন সবকিছু একটু ঝিমিয়ে। আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরের দিনই ওয়াশিংটন ফিরেছেন। কী কারণে সেটা পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তবে ব্যক্তিগত ছুটি বা পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যান কী হবে সেগুলো সেখানে বসে বৈঠকে তার মতামত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। না-ও হতে পারে এমনটা। কারণ পিটার হাস বাংলাদেশে যা করেছেন, সেটা তো যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন পলিসির অংশ বিশেষ। যা বাস্তবায়ন তিনি করেছেন, যেহেতু তিনি বাংলাদেশের দূতাবাসের দায়িত্বে। 

তবে ওয়াশিংটনেও বসে নেই পিটার হাস এটা আর বুঝতে বাকি নেই। হয়তো নতুন কোনো অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েই সহসা ফিরবেন এ রাষ্ট্রদূত। তবে আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া এক নীতিতো তোলপাড় বাংলাদেশ। বিশ্বজুড়েই শ্রমিক ও শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের পাশে দাঁড়ানোর ওই ঘোষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন উদাহরণ দিতে যেয়ে বাংলাদেশের এক শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করায় পুড়ছে বাংলাদেশ। ওই রেফারেন্সে মার্কিনিরা যে নতুন নীতির কথা বলছে তার খড়গ চলে আসতে পারে বাংলাদেশেও শঙ্কা সেখানেই। কারণ ক’দিন আগেই ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের নতুন বেতন স্কেল নিয়ে আন্দোলন গেছে। আন্দোলনরত শ্রমিক নিহত ও সংঘর্ষে উত্তাল ছিল বেশ কয়েকদিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বহু কষ্টে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের দমানো হয়েছে তার সঙ্গে মার্কিনিদের ঘোষণা দেওয়া নীতির সঙ্গে মিলে যায় কি না দুশ্চিন্তার ভাঁজ সেখানেই। 

মার্কিন প্রশাসনের দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্বজুড়ে যারা শ্রমিক অধিকার হরণ করবে, শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখাবে এবং আক্রমণ করবে তাদেরকে জবাবদিহিতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও ভিসা বাতিলের মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ১৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে সরকারের ওয়েবসাইটে। একই দিনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে এক প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। এতে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে জোরালো ভূমিকার কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি।

বাইডেনের ওই ঐতিহাসিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করতে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের কথা উল্লেখ করেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট শ্রমিক ও অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের পাশে দাঁড়াতে চাই। তিনি বেঁচে আছেন কারণ তার পক্ষে মার্কিন দূতাবাস কথা বলেছে। 

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১৬ নভেম্বর প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। বিষয়টিকে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে হোয়াইট হাউস। এ মেমোরেন্ডাম স্বাক্ষরের পরে সানফ্রান্সিসকোর একটি হোটেলে শ্রমিক নেতাদের সামনে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।

এ সময় ব্লিঙ্কেন বলেন, বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার সুরক্ষা ও সম্মানের সঙ্গে অনুমোদন দিতে সরকারসমূহ, শ্রমিক ও ওয়ার্কারদের সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, নাগরিক সমাজ এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখবো। এর অর্থ হলো, আমাদের সব রাষ্ট্রদূত, বিশ্বজুড়ে দূতাবাসগুলো যারা পরিচালনা করছেন তারা ওয়ার্কার এবং ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে কাজ করবেন, যাতে তাদের কণ্ঠের প্রতিফলন ঘটে। তিনি আরো বলেন, এসব ক্ষেত্রে যখন আমরা আমাদের কণ্ঠস্বরকে, আমাদের অ্যাডভোকেসিকে ব্যবহার করি, তখন যারা শ্রম অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তাদের সুরক্ষিত ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের উদ্যোগ বড় ব্যবধান তৈরি করতে পারে। 

ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং উচ্চ শ্রমমানকে এগিয়ে নিতে ওই মেমোরেন্ডামে স্বাক্ষর করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে ওকালতি করা এবং তাদের জীবনমান উন্নত করা আমাদের কূটনীতির কেন্দ্রে রয়েছে। এটি স্টেট ডিপার্টমেন্টে আমাদের প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিশ্বজুড়ে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয় যে, শ্রম অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বিষয়। এটি কেবল একটি ঘরোয়া সমস্যা নয়; এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়, বৈদেশিক নীতির বিষয়।

এই নীতির অধীনে বিশ্বব্যাপী শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ পদক্ষেপের কথা ব্যাখ্যা করেন ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকার রক্ষা ও প্রচারের জন্য প্রথমত আমরা সারা বিশ্বের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি খাতকে আলোচনায় যুক্ত করবো। এর অর্থ হলো, আমাদের সব রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসকর্মী দেশে দেশে শ্রমিকদের সঙ্গে, ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবেন, যাতে তাদের কণ্ঠস্বর আমাদের কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হতে পারে।

দ্বিতীয়ত: যারা শ্রমিকদের হুমকি-ধমকি দেবে, ভয় দেখাবে, শ্রম ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের পক্ষে কাজ করা ব্যক্তি, শ্রম সংগঠনের উপর আক্রমণ করবে তাদেরকে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। আমরা কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের সঙ্গে থাকতে চাই। কল্পনা আক্তার একজন বাংলাদেশি গার্মেন্টসকর্মী এবং গার্মেন্টস শ্রমিক অধিকারকর্মী। তিনি বলেছেন যে, তিনি জীবিত রয়েছেন কারণ মার্কিন দূতাবাস তার পক্ষে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন তাদের আওয়াজের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কাজ করতে শুরু করবে তখন যারা শ্রম অধিকার সুরক্ষায় এবং তা উন্নত করতে কাজ করছে, তাদের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে।

তৃতীয়ত: আমরা বহির্বিশ্বে শ্রমিক অধিকার এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবো। এজন্য শ্রমিক অধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের বৃহত্তর পর্যায়ে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে আমাদের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে তারা যে কোনো ধরনের হেনস্তা চিহ্নিত এবং প্রতিরোধ করতে পারে।

চতুর্থত: আমরা শ্রমিকের অধিকার এবং জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারগুলো এবং জি-২০ ও জাতিসংঘের মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবো। এসব আন্তর্জাতিক সংস্থায় আমরা যেসব কাজ করি, তার অংশ হবে এটিও। সারা বিশ্বে এসব সংস্থার গভীর প্রভাব রয়েছে। আমরা শ্রমের পক্ষে ওকালতি করতে এই সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করবো।

শেয়ার করুন