১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১০:০৩:০৬ অপরাহ্ন


জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ অর্থমন্ত্রীর
৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৬-২০২৩
৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ শুরু করেন তিনি।

প্রস্তাবিত বাজেটের যে আকার ধরা হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫.২ শতংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.২ শতাংশ। রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি এবং অন্যান্য উৎস হতে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।



সব শ্রেণির মানুষের আশা-প্রত্যাশা এবং 

উন্নয়ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে


মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সাধারণ মানুষের জীবনচলায় স্বস্তি প্রদান, অর্থনীতির টেকসই পুনরুদ্ধার এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপন করে বলেন, সব শ্রেণির মানুষের আশা-প্রত্যাশা এবং উন্নয়ন ভাবনার প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে এবারের বাজেটে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি জোরদার করে দরিদ্র বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠির উপর মূল্যস্ফীতির চাপ লাঘবের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ থেকে বৃদ্ধি করে সাড়ে ৩ লাখ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু করা সম্ভব হবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পেনশন স্কীমের আওতায় বিভিন্ন বয়সীরা সুবিধা পাবেন বলে তিনি জানান। 

এর পাশাপাশি, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয় বাড়ানোর ব্যাপারে নতুন নতুন করদাতা অনুসন্ধানে বিভিন্ন প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। একইসাথে কর সংক্রান্ত কিছু সংস্কারের বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটের যে আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫.২ শতংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.২ শতাংশ। রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি এবং অন্যান্য উৎস হতে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন,'বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় এবং খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের প্রভাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়াবে বলে আশা করি।'

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, '২০০৯ সালে সরকার গঠন করার প্রাক্কালে জাতির সামনে রূপকল্প ২০২১ পেশ করা হয়েছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী সমতাভিত্তিক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। গত দেড় দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক ও অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছে তার মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি টেকসই ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ এর লক্ষ্য অর্জনে প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ' গঠনের উদ্যোগসমূহ কার্যকর ভূমিকা রাখবে। স্বপ্নের যে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে, তার চারটি মূল স্তম্ভ হলো- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমির ওপর ভিত্তি করে। এবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা, যোগাযোগ অবকাঠামোখাতে ৩২ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা এবং কৃষিখাতে ২৫ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। 


রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে 

রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ আশা করছেন যে আমদানি বৃদ্ধির হার হ্রাসের পাশাপাশি বর্ধিত রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির শিগগিরই উন্নতি হবে।

তিনি আজ জাতীয় সংসদে ২০০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করে বলেন, ‘আমদানি বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। একই সাথে, আমরা আমাদের রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি উদ্বুদ্ধকরণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। পাইপলাইনে থাকা বিদেশী ঋণ ছাড়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’  অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’ কামাল বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর বেশি জোর দিতে চায়।

‘ব্যালান্স অব পেমেন্টসে অস্থিরতা হ্রাস পেয়েছে উল্লেখ করে তিনি এর জন্য সরকারের ‘সময়োপযোগী কৌশল’-এর প্রশংসা করে আরও বলেন, ‘আমরা সতর্ক থাকব এবং আসন্ন আর্থিক বছরেও একটি সুবিধাজনক নীতি গ্রহণ করব।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিনিময় হারকে ক্রমান্বয়ে বাজারমুখী করার চূড়ান্ত লক্ষ্যে বিদ্যমান একাধিক বিনিময় হারের ব্যবধান ন্যূনতম পর্যায়ে আনার কাজ চলছে।

তিনি বলেন, সরকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমদানিকৃত জিনিসপত্রের মূল্য নির্ভুলতা যাচাই করতে এলসি খোলা, নিষ্পত্তি এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পদ্ধতিগত প্রয়োজনীয়তা পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, একই লক্ষ্য নিয়ে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেল ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে মোবাইল আর্থিক পরিষেবার মতো প্রেরক-বান্ধব প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশী ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ফি ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগগুলোর ফলে আমাদের রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ 


প্রতিরক্ষা খাতের বাজেট 


আগামী ২০২৩-’২৪ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪২ হাজার ৯৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-’২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য এ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪০ হাজার ৩শ’ ৬০ কোটি ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ কমে গিয়ে ৩৬ হাজার ৬শ’ ৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের জন্য ২০২৩-’২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২২-’২৩ অর্থবছরে এ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমে ৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে।


নারীর জন্য স্মার্ট কর্মজগত

সৃষ্টিতে কাজ করবে 

এ কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা  প্রদানের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য অনুকূল কর্মপরিবেশ সৃজনেও আমরা বদ্ধপরিকর। 

তিনি বলেন, কর্মজীবি মায়েদের নিরাপদে কাজ সম্পাদনের নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য ১২৫টি শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ হাজার ৭৩০ জনকে দিবাকালীন সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত, পিছিয়ে পড়া, দরিদ্র মহিলাদের তথ্য প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার সহজতর করা এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবার মাধ্যমে মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল করা ও তাদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত মহিলারা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দৈনন্দিন বিবিধ সমস্যার সমাধান ও বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন, ই-কমার্স উদোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছেন। 

বর্তমানে সাড়ে ১৪ হাজার উদ্যোক্তা ই-কমার্স প্ল্যাটফরম ‘লালসবুজ ডটকম’ এ নিবন্ধন ও পণ্য আপলোড করে বিক্রয় করছেন এ কথা  উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দেশের নারী উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াজাত পণ্য ও সেবা বিপণনের জন্য জয়িতা ফাউন্ডেশনের আওতায় ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় সদরে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নারীবান্ধব বিপণন অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। জয়িতা ফাউন্ডেশনকে আরও আধুনিক করা হয়েছে।  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সদরে জয়িতা ফাউন্ডেশনের কাজ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। তথ্যসূত্র বাসস’র। 


শেয়ার করুন