২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:১৫:০১ অপরাহ্ন


গ্যাস সংকটের অন্তরালে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
গ্যাস সংকটের অন্তরালে


গ্যাস উৎপাদনে পেট্রোবাংলার উৎপাদন বণ্টন চুক্তির অংশীদার মার্কিন কোম্পানি শেভরণের গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে দীর্ঘদিনের। চুক্তি অনুযায়ী আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানির গ্যাস বিল ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। সেটা না হলে এ ক্ষেত্রে ৩১ম দিন থেকে ৪ শতাংশ হরে জরিমানার বিধান আছে। এভাবে ক্রমাগত ৬ মাস বিল পরিশোধে ব্যর্থ হলে শেভরণ গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার অধিকার সংরক্ষণ করে। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ডলার সংকটের কারণে গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পারছে না পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলাকে আবার এলএনজি আমদানির জন্য ডলার সংস্থান করতে হয়।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ লাভের হিসাব দিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারিদের মাঝে লাভের অংশ বণ্টন করে আসছে। কোম্পানি পরিচালকম-লীর সদস্য হিসেবে সেই লাভের অংশ পান জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাবৃন্দ। জানি সরকার ব্যাংকে গচ্ছিত পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর ফিক্সড ডিপোজিট নিয়ে গেছে। হয়তো রাষ্ট্রের প্রয়োজনেই ওই ডিপোজিট নেয়া। তবে এটাও শোনা যাচ্ছে গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের টাকাও পেট্রোবাংলার হাতে বর্তমানে নেই। তাহলে এমতাবস্থায় কি করবে পেট্রোবাংলা? 

২০০৯-২০২২ পেরিয়ে ২০২৩-এ পা রাখলো বর্তমান সরকার। একাধারে প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের ভুল পরিকল্পনায় বর্তমান অবস্থা। করোনা বা ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত দেয়া যুক্তিহীন। পর্যান্ত গ্যাস নেই জেনেও কেন গ্যাস সঞ্চালন খাতে বিপুল বিনিয়োগ করে জিটিসিএলকে পঙ্গু করা হলো। কেন গ্যাস বিতরণে বিপুল চুরি ও ফাঁকফোকর সময় মতো বন্ধ করা হয়নি? কি পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা, জ্বালানি মন্ত্রণালয়? আসলে এটাই বাস্তবতা যে সবাই সব কাজ করতে পারে না। ২০১০ থেকে এযাবৎ পেট্রোবাংলার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সবাই এই ব্যর্থতার জন্য সমভাবে দায়ী। 

বাংলাদেশে এখন দৈনিক গ্যাস চাহিদা ৪০০০ এমএমসিএফডি, এর বিপরীতে পেট্রোবাংলা সর্বসাকুল্যে সরবরাহ কমছে কমবেশি ২৯০০ এমএম সিএফডি।  দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে ২১৭০ এমএমসিএফডি আর দুটি এফেসারু দিয়ে আমদানি হয় ৭৩০ এমএমসিএফডি এলএনজি।  ‘নুন আন্তে পান্তা ফুরানো’  হতদরিদ্র গ্যাস সেক্টর বিদ্যুৎ, সার, শিল্প, সিএনজি, গৃহস্থালি কোনো খাতের চাহিদা মেটাতে পারে না। এর মাঝে ডলার সংকটের কারণে জুলাই ২০২২ থেকে জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ থাকায় গ্যাস সংকট চরমে পৌঁছেছিল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৬০ শতাংশ সরবরাহ করে শেভরণ তাদের জালালাবাদ, বিবিয়ানা এবং মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র থেকে। এমনিতেই গ্যাস উৎপাদন কমছে প্রতিদিন। ২০১৫ নাগাদ দেশীয় উৎপাদন কমে ২০০০ এমএমসিএফডি হয়ে যেতে পারে। এই সময়ের মাঝে বাড়তি এলএনজি আমদানি সরবরাহের অবকাঠামো গড়ে তোলা যাবে না। বিশ্ববাজারের দাম বাড়া কমার কথা নাই বা বললাম।  

এবার সরকার যখন ২০০৯-২০২৩ সাফল্যের খতিয়ান তৈরি করবে আমলা নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি সেক্টরের ব্যর্থতা বিশাল আকারে দেখা দেবে। 

২০২৪, ২০২৫ ঘনায়মান সংকট থেকে বাঁচতে হলে অবৈধ গ্যাস ব্যবহার শূন্য করা অত্যাবশ্যক। গৃহস্থালি এবং সিএনজি খাতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে কৃচ্ছ্র অবলম্বন করাটাও হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি গ্যাস অনুসন্ধানটাও ব্যাপকহারে গুরুত্ব দিয়ে চালিয়ে যেতে হবে। এতে একটা সমাধানের দিকে যেতে পারে বর্তমান সংকট নিরসনের উপায়ে।

শেয়ার করুন