২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


১০ দফার আন্দোলন ১৮ কোটি মানুষ বাঁচানোর আন্দোলন- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৩-২০২৩
১০ দফার আন্দোলন ১৮ কোটি মানুষ বাঁচানোর আন্দোলন- মির্জা ফখরুল


১০ দফার আন্দোলন কোনো জোট বা দলের নয়, ১৮ কোটি মানুষ বাঁচানোর আন্দোলন বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ এই বাংলাদেশ টিকে থাকবে কি থাকবে না, গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না নাকী অন্যান্য দেশ উত্তর কোরিয়ার মতো পুরোপুরি একটা রেজিমেন্টেড কর্তৃত্ববাদী একটা দেশে পরিণত হবে। আজকে আপনাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শুধু ১২ দল, বিএনপি, ১০ দলৃ এটা কোনো দলের ও জোটের আন্দোলন নয়, আজকের আন্দোলন এই সংগ্রাম সমস্ত ১৮ কোটি মানুষের বেঁচে থাকার আন্দোলন-সংগ্রাম। আসুন আমরা নেমে পড়ি। আমরা নেমে পড়েছি। গত ২২ আগস্ট থেকে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে। আমরা প্রতিদিন যুদ্ধ করছি, লড়াই করছি। আসুন আরো মানুষকে সম্পৃক্ত করুন এবং তাদের নিয়ে এই সরকারকে সরিয়ে আমরা একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করি যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারব, একটা সরকার একটা পার্লামেন্ট গঠন করতে পারব।”


ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে ‘আগামী বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২৭ দফা রুপরেখার গুরুত্ব ও অপরিহার্য্তা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।


‘সুপ্রিম কোর্টের ঘটনা: সরকার আছে কিনা সন্দেহ’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের বলা হয় অফিসিয়ার্স অব দ্যা কোর্ট।সেই বিচারালয়ে যারা কাজ করেন বা বিচার ব্যবস্থায় সহযোগিতা করেন তাদের যে বার্ষিক নির্বাচন হয়-এটা একটা ঐতিহ্য। এটাকে সবাই সন্মানের চোখে দেখেন।এটাকে জাতির বিবেক হিসেবেও দেখা হয়।সেই নির্বাচনে গতকাল যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এটা জাতির জন্যে, এদেশের বিচার ব্যবস্থার জন্যে একটা জঘন্যতম কলঙ্কজনক ঘটনা। আমরা ইতিমধ্যে এই ঘটনার নিন্দা করেছি, আমরা ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই ঘটনা প্রমাণ করে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা? বাংলাদেশে বর্তমানে কোনো গণতন্ত্র তো নেই, কোনো আইনের শাসনও নেই এবং কোনো গভমেন্ট আছে কিনা সেটাও আমার সন্দেহ হয়।”


তিনি বলেন, ‘‘ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবীদের নির্বাচন আমরা বরাবরই েেদ্খছি যে,এই নির্বাচনে হয় সুষ্ঠু নির্বাচন এবং এটা একটা আদর্শ যে যারা দায়িত্বে থাকেন তারা আইনজীবী হন, যারা নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করেন তারাও আইনজীবী এবং সুষ্ঠু ও সৌহার্দ পরিবেশে নির্বাচন হয়। গতকাল তারা(ক্ষমতাসীনরা) এই ব্যবস্থাটা ভেঙে দিয়েছেন। কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছেন। অর্থাত এই যে আওয়ামী লীগ যাদের এখন একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো, রাষ্ট্র যেটাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিলো, রাষ্ট্র তো একটা চুক্তি সেই চুক্তিটি তারা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেয়া এবং তারা ভেঙে দিয়েছে। তাদের নিজস্ব বিধি, বিধান, সংবিধান তারা চালু করেছে।”


 ‘যমুনা নদী প্রকল্প’


 মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনি চিন্তা করতে পারেন যমুনা নদী, আমাদের হাজার বছরের ধরে প্রবাহমান যমুনা নদী চলছে। নদীর সমস্যা থাকে বন্যা হয়, প্লাবন হয়, পলি পড়ে, খরা আসে। কিন্তু এই নদীকে ছোট করে দেয়ার চিন্তা- ১২ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট। এটাকে কি বলবেন আপনি? এর মধ্যে ৮শ কোটি টাকা বরাদ্ধ হয়ে গেছে। একটা সীমা থাকে, চক্ষু লজ্জ্বা থাকে-এদের কিচ্ছু নাই। এতো মোটা চামড়া হয়ে গেছে। সেই চামড়া যদি ভেদ করতে না পারে আপনি কেনো স্বাধীন আছেন।”



বুদ্ধিজীবিদের সমালোচনা


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার মাঝে মধ্যে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি, এদেশের কিছু বুদ্ধিজীবী আছেন, কিছু বিভিন্ন পেশার লোকেরা আছেন তারা এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করে কথা বলে, এই নেত্রীকে সমর্থন করে কথা বলেন এবং চাটুকারিতের চরম শীর্ষে যায় –তখন খুব কষ্ট হয় যে, কোন রাষ্ট্র আমরা যুদ্ধ করলাম। জামাল (মোস্তফা জামাল হায়দার) ভাইকে জিজ্ঞাসা করি, ইব্রাহিম(সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম) ভাইকে জিজ্ঞাসা করিৃ কি করলাম ভাই, কেনো করেছি।এটা বাস্তবতা।”


 

ফখরুল বলেন, ‘‘এদেশ আমরা চাইনি ভাই-পরিস্কার করে চিতকার করে বলতে পারি। এতে যদি কেউ আমাকে ফাঁসি দেন, ফাঁসি দিতে পারেন-আমি এই বাংলাদেশ চাইনি। আমি চেয়েছি সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, জনগনের বাংলাদেশ। যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, যেখানে মানুষ সাম্য থাকবে, যেখানে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ থাকবে, যেখানে সত্যিকার অর্থে মানুষের মর্যাদা নিয়ে চলতে পারবে।”


 


তিনি বলেন, ‘‘ আজকে মানুষ ভাত পায় না, চাল পায় না। লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে ঘন্টার ঘন্টা। মা তার সন্তানকে ডিম দিতে পারে না প্রোটিনের জন্য। এগুলো কোনো মিথ্যা কথা? এগুলো বলতে গেলেই আপনাদের একজন গোয়েবেলসকে হার মানায় মন্ত্রী আছেন তথ্য মন্ত্রী সমানে বলতে থাকেন আমরা নাকী দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাই, সমস্যা তৈরি করতে চাই, আগুন সন্ত্রাস করার জন্য নাকী আমরা তৈরি হচ্ছি।”

তিনি বলেন,  আগুন সন্ত্রাস তো শুরু করেছো তোমরা, যা কিছু করেছো তোমরা। লজ্জ্বা করে না এদের যখন এরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে। তোমরাই তো তত্ত্বাবধায়কের বিধান নিয়ে এসেছিলে এই জামাত(জামায়াতে ইসলাম) এবং জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে এবং ১৭৩দিন হরতাল করেছো। সেই হরতালে একটা ঘটনায় শেরাটনের সামনে বাসের মধ্যে গান পাউডার দিয়ে ১১ জনকে পুঁড়িয়ে মেরেছো, হাজার হাজার লোককে মেরেছো, লগিবৈঠা পিটিয়ে মানুষকে মেরেছো। আর এখন তোমরা বলো যে, না এটা সভ্য দেশে নাই। আরে তোমরা সভ্য নয় বলে এটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) দরকার আছে। যারা ক্ষমতায় আছো তারা মধ্যযুগীয় অসভ্য বর্রব থেকেও খারাপ। সেই কারণে তোমরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধবংস করে দিয়েছো।”


১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও বিএলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্ররাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির আবদুল করিম আব্বাসী, শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, এনডিপির আবু তাহের, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুর রকীব, মাওলানা আবদুল করিম, ন্যাপ-ভাসানী আজহারুল ইসলাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইকবাল হোসেন প্রধান প্র্রমূখ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


সরকার বিরোধী যুগপত আন্দোলন শুরু করতে গত ২২ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোট বিলুপ্ত হয়ে ‘১২ দলীয় জোট’ গঠিত হয়।


শেয়ার করুন