২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৫৮:০৮ পূর্বাহ্ন


বাম জোটের হরতালে বেড়ধক লাঠি পেটা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৩-২০২২
বাম জোটের হরতালে বেড়ধক  লাঠি পেটা পল্টনে হরতালকারীদের উপর পুলিশের লাঠিপেটা : ছবি নিজস্ব


মঙ্গলবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ 

বাম জোটের ডাকা দেশব্যাপী শান্তিপূর্ন হরতাল শেষ ঘন্টায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হরতাল শেষ করে যখন মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখন বিনা উস্কানীতে পুলিশ জল কামান,মেরে ছত্রভংগ করে দেয়। এসময় বেড়ধক লাঠিপেটাও করেছে। এর পাশাপাশি তারা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। তবে বাম জোটের ডাকা হরতালে কোন উসকানি ছাড়া পুলিশী হামলা আক্রমণ করেছ বলে নেতৃবৃন্দ অবিযোগ করেছেন। এর পাশাপাশি  পুলিশী  উপর্যুপরি হামলা, আক্রমণ, গ্রেফতার ও নির্যাতন মোকাবেলা করে  বাম গণতান্ত্রিক জোটের আহবানে সারা দেশে গণদাবির হরতাল সফল সফল করায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক  দেশবাসীকে জোটের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। 

অপরদিকে যারা বাম জোটের গণদাবির হরতালের সমর্থন দিয়েছেন সবাইকে জানিয়েছেন জোটের শুভেচ্ছা। আর পুলিশ ও সরকারি দলের হামলা আক্রমণের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ২৯ মার্চ দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। 

ঘটনার বিবরণে জানা যায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা আধাবেলা হরতালের একেবারে শেষভাগে এসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হয়েছে বাম জোটের নেতাকর্মীরা। 

এর আগে সকাল থেকেই পল্টন-জিরো পয়েন্ট ঘিওে রাখে বাম জোটের নেতাকর্মীরা। খন্ড খন্ড মিছিল,শ্লোগান নিয়ে তারা পুরো এলাকায় হরতাল পালন করে। এছাড়া শাহবাগ মোড়ে রাস্তা আটকে হরতালের সমর্থনে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো সমাবেশ করে। টায়ার জ্বালিয়ে ও রাস্তার পাশের ব্যানার-পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করে ব্যারিকেড তৈরির মাধ্যমে এদিন সকাল থেকেই অবস্থান করেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। এসময় কয়েকদফা আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা তাদরেকে শাহবাগ চত্বর থেকে সরে যেতে বলে। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় শাহবাগ এলাকায় তৈরি হওয়া যানজটের কারণে পুরো এলাতায় সমস্যার কথা বলায় পরে সাড়ে ১০টায় শাহবাগ মোড় ছেড়ে দেয় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। এর পর তারা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে কাঁটাবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে পল্টনে যায়। 

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমাবেশ চলছিল। জোটের সমন্বয়কও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যখন কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাবেন, ঠিক তখন পুলিশের সঙ্গে বাকবিন্ডায় জড়ায় বাম জোটের নেতাকর্মীরা। এসময় বাম জোটের নেতাকর্মীদের অবস্থানে পল্টন মোড়ে যানজট লেগে যায়। তখন পুলিশ সদস্যদের সাথে নেতাকর্মীদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে বাম জোট নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। পুলিশ তাদের প্রতিহত করতে লাঠিচার্জ করে, এবং জলকামান নিয়ে গরম পানি নিক্ষেপ করে। এতে বেশকজন নেতাকর্মী আহত হন। এতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুমাইয়া সেতু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের নেতা আব্দুল করিম, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ       সম্পাদক শাওন বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ রাকিব হাসান সুজন, ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি শাহরিয়ার ইব্রাহীম মিমো, সহ-সভাপতি সালমান রাহাত, মহিউদ্দিন রুমি, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিজম ফকির, সদস্য আজিজুল হক আরমান, রাইসা আমিন স্নেহা, রাজবাড়ি জেলার সভাপতি কাওসার আহমেদ রিপন, ফরিদপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক শিতাংশু ভৌমিক অঙ্কুর আহত হন। অন্যদিকে সিপিবির হযরত আলী, মিয়া মো জুয়েল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির  শহীদুল আলম  নান্নু,সাইফুল ইসলাম, রাশিদা বেগম, জোনায়েত হোসেন। গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভূঁইয়া, নিজামুদ্দিন। 

হামলার নিন্দা জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল যৌথ বিবৃতিতে  বলেন, হরতালের প্রতি জনগণের সমর্থনে ভীত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পেটোয়া বাহিনী সারাদেশে ছাত্র ইউনিয়নসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের ওপরে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলা মামলা হুলিয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে তার ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা যাবে না। 

এদিকে জোটের  সমন্বয়ক সাইফুল হক  সংবাদ ব্রিফিং থেকে  হরতাল চলাকালীন রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আগামীকাল দেশব্যাপী বিক্ষোভ - সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

ঢাকায় বিকাল চারটায় পুরানা পল্টনে বাম জোটের এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ থেকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে। এর আগে হরতালের শেষ দিকে জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাসদ মার্কসবাদীর সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টি - মার্কসবাদীর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আবদুল আলী। সমাবেশ পরিচালনা করেন  সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ কাফি রতন। 

সমাবেশে জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, এই হরতাল বাজার  নিয়ন্ত্রণে সরকারী ব্যর্থতার বিরুদ্ধে, মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, বাজার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে,আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। তারা বলেন, সরকারের দমন করে শাসনের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ জেগে উঠছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, গণসংগ্রামের ধারায় এই সরকারকে বিদায় দেয়া ছাড়া দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষা করা যাবেনা। 

ভোর ৬ টা থেকে জোটের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহসাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদ এর সহ সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, আকবর  খান,বাসদ- মার্কসবাদীর মানুস নন্দি, ইউসিএল এর মোশাররফ হোসেন নান্নু, শহীদুল ইসলাম সবুজ,খালেকুজ্জামান লিপন সহ জোটের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ  রাজপথে  পিকেটিং ও অবস্থানে অংশ গ্রহণ করেন। 


শেয়ার করুন