০৮ মে ২০১২, বুধবার, ০৬:৫৮:৩৯ পূর্বাহ্ন


গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল
‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সংলাপ নেই’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সংলাপ নেই’


নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন না হলে কী হবে তা জনগনই সিদ্ধান্ত নেবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না হলে বিএনপি কি করবে’ –সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ কি হবে? জনগনই সিদ্ধান্ত নেবে। ডেফিনেটলি। বরাবর যেভাবে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটা যে এসছিলো সেটা তো একটা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এসেছিলো-এটা অস্বীকার করতে উপায় নেই। আমরা গ্রহন করেছি।কারণ আমরা জনগনকে বিশ্বাস করি, ভালোবাসি। আমরা চাই যে, জনগনের মতামতটা উঠে আসুক সেই কারণে আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আপনি জনগনকে মানবেন নাই, টোটালি বিচ্ছিন্ন করে দেবেন, উড়িয়ে দেবেন, জনগনের মতামতকে কোনো পাত্তাই দেবেন না। এখন তো সেই রাস্তায় চলে গেছেন- যে এট এ্যানি কষ্ট ক্ষমতায় থাকতে হবে। জনগন কোথায় সেখানে?


‘আমরা লেভেল প্লিয়িং ফিল্ড চাই’

দাবি না মারলে ওয়াকওভার দেবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমরা ওয়াকওভারে কখনোই বিশ্বাস করি না। আমরা যেটা বিশ্বাস করি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ফর ইলেকশন। আমাদের মূল বিষয় হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার আগে আমরা যেটা বলেছি সবার আগে ১০ দফা কর্মসূচি যেটা দিয়েছিৃইউ রিজানইড ফাস্ট। সংসদ বাতিল করেন, নতুন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নির্বাচন হবে..এক‘শ বার নির্বাচনে যাবো। নির্বাচন ছাড়া তো আমি যে রাজনৈতিক দল করি, যে লক্ষ্য নিয়ে করি রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে জনগনের কাজ করবো, উন্নয়ন করবো, এক‘শভাব। তার জন্য তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। আপনি জোর করে ক্ষমতায় থেকে ৃ.।”

তিনি বলেন, ‘‘ ২০১৪ সালে বয়কট করেছিলাম। ২০১৮ সালে আমরা ওয়াক ওভার তো দিতে চাইনি। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী নিজে একবার না দুই দফা তিনি সকলের সামনে প্রমিজ করলেন যে, একদম নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, কোনো রকমের অত্যাচার-নির্যাতন হবে না, পুলিশি নির্যাতন হবে না, প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, ভোটে কারচুপি-ছলচাতুরি এগুলো হবে না। বার বার করে উনি বলেছেন।  কি লাভ হয়েছে। এখন আপনি যা ই বলেন, যত সুন্দর ভাষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার যাই বলেন কি হবে?...।”


‘নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সংলাপ নেই’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে আসতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের বিষয় আসলে তখন আমার দল বিবেচনা করবে। আমাদের স্পষ্ট কথা- নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো আলাপ নাই।”


‘সাংবাদিকদের নির্যাতন প্রসঙ্গে


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে ভোরে একজন সাংবাদিককে সিআিইডি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেৃ এটা ভয়াবহ ঘটনা। আমি গতকাল রাতে যেটা দেখলাম সময় ও একাত্তর টেলিভিশনে যে, তারা একটা ফিচার করেছে যে, এই মুহুর্তে কেনো সরকারকে বিব্রত করার জন্য এই ধরনের একটা সে রিপোর্ট করেছে। কি অপরাধ করেছে সেই সাংবাদিক তো বুঝলাম না। আমার কথা হচ্ছে যে, সত্য যে ঘটনা সেই ঘটনা সে তুলে ধরেছে। একজন মানুষের যে উক্তি সেই উক্তিটা তুলে ধরেছে। কি এমন অপরাধ হয়েছে? অপরাধটা কি বলছে যেৃ ২৬ মার্চের দিন এটা করা হয়েছে যে, স্বাধীনতাকে অপমান করা হয়েছে, তার মানহানি করা হয়েছেৃ এটা বলা হচ্ছে।”


 


তিনি বলেন, ‘‘ একজন মানুষ যদি স্বাধীনতার দিন ক্ষুধার্ত বোধ করে, সে যদি বঞ্চিত বোধ করে এবং সে যদি ওই কমেন্টটা দেয় যে, আমার এই দেশ স্বাধীন হয়ে কি লাভ হলো? কি অপরাধ হয়েছে, অপরাধটা কোথায়? এটা তো সত্য যে, স্বাধীনতা আমাদেরকে খেতে দেয় না, যে স্বাধীনতা এভাবে মানুষকে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, হত্যা করে সেই স্বাধীনতা সম্পর্কে তো প্রশ্নই উঠতে পারে। তা লাভ কি? খেদ উক্তি যেটাকে বলে। তার অর্থ তো এই নয় যে, সে স্বাধীনতা বিরোধী। সাংবাদিক শাসুজ্জামান শাসন রিপোর্ট করেছেন তারজন্য তাকে তুলে নিয়েছে সিআইডি।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ এগুলো আপনার আরো ক্ষতি করছে সরকারের। সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরার কারণে একজন সাংবাদিককে যদি হেনস্তা করতে হয় সেটা কি সরকারকে কোনো প্লাস পয়েন্ট দিচ্ছে, কোনো ক্রেডিট দিচ্ছে। ইন নো ওয়ে।”

ইতিহাস বলে বাংলাদেশে সবসময় এই ধরনের কাজ যে সরকারগুলো করেছে, পাকিস্তান আমলে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে কেউই কিন্তু রক্ষা পায়নি। এটা করে তো সরকারের লাভ হবে না।আমি শাসসুজ্জামান শামসের আটকের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।”


স্থায়ী কমিটির সভায় ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিকদের দেশে বসবাসকারী নিকট আত্বীয় স্বজনদের উপর ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল ‘আল জাজিরা’র বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলকার নাইন সায়েব খান সামির ভাই মাহিনুর আহমেদ খানকে গত ১৭ মার্চ সাদাপোষাকধারী লোকেরা মারাত্মকভাবে কুপিয়ে আহত করার ঘটনাও নিন্দা জানানো হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।



‘নওগাঁয়ে সুলতানা জেসমিন হত্যা নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘একথা নিসেন্দেহে প্রমাণিত যে, সুলতারা জেসমিন র‌্যাব কাস্টডিতে মারা গেছে যা চরমভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক অধিকারগুলো এ বিষয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবি জানাচ্ছে এবং সুলতানা জেসমিনকে হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছে। স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একজন মহিলাকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলা ব্যাতিরেখে তুলে নেওয়া এবং ফলোশ্রুতিতে তার মৃত্যু আবারো প্রমাণ করেছে যে, এই সরকারের অধীনে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথেচ্ছাভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেই চলেছে।’’

মঙ্গলবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত জানাতে বিএনপি মহাসচিব সংবাদ সম্মেলনে আসেন।


 

 

 

শেয়ার করুন