২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন


দেশকে শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু
বাংলাদেশ কতৃত্ববাদী শাসনের মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৮-২০২৩
বাংলাদেশ কতৃত্ববাদী শাসনের মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু


ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা বিএনপি’র সাথে যুগপৎ কর্মসূচির শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের বর্তমান সমন্বয়কারী শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেছেন, দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কতৃত্ববাদী শাসনের এক মহাক্রান্তিকালে অতিক্রম করছে। দেশে বর্তমানে যে অগতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী ও লুটেরা শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে তাতে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতা ও চরম দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু’র ১৯৬৯ সনে গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ এবং ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন সময়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, ১৯৮১ সনে ডাকসু নির্বাচনে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভিপি প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। পরবর্তী সময়ে দেশে মার্শাল ল’ জারি হলে সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করেননি বলে জানান তিনি।  ২০১২ সালে জানুয়ারি মাসে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর কয়েকজন অনুসারী ভাষা সৈনিক আবদুল মতিনকে চেয়ারম্যান এবং শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুকে মহাসচিব করে ভাসানী অনুসারী পরিষদ গঠন করা হয়। ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিন মৃত্যুবরণ করলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অসুস্থতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ভেঙ্গে তাকে আহবায়ক ও হাবিবুর রহমান রিজুকে সদস্য সচিব করা হয় এবং ভাসানী অনুসারী পরিষদকে রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সনের এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং জেলা কমিটিগুলোর সমন্বয়ে কাউন্সিল এর মাধ্যমে ভাসানী অনুসারী পরিষদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে নির্দিষ্ট সময়ে কাউন্সিল করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। ২০২৩ সালে বছর নভেম্বর মাসে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানা গেছে। ভাসানী অনুসারী পরিষদ গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরীক দল। বর্তমানে আমি গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। সম্প্রতি (২৯ জুলাই) সকালে গাবতলীর মাজার রোডে গণতন্ত্র মঞ্চের পূর্বঘোষিত অবস্থান কর্মসূচির স্থলে যোগ দিতে গেলে তাদের আটক করা হয়। আটকের পর তাদের দারুসসালাম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

দেশ: দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমনভাবে দেখেন।

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু: দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কতৃত্ববাদী শাসনের এক মহাক্রান্তিকালে অতিক্রম করছে। দেশে বর্তমানে যে অগতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী ও লুটেরা শাসন ব্যবস্থা চালু হয়েছে তাতে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্রমাগত ব্যর্থতা ও চরম দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করছে। গত ৫২ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু ও স্থায়ী নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। যারা যখনই ক্ষমতায় (বৈধ/অবৈধ) অদিষ্ঠিত হয়েছেন দ্রুত একটি অভিজাত শ্রেণী সৃষ্টির জন্য দুর্নীতিকে আশ্রয় করেছেন। যাতে এই অভিজাত শ্রেণী তাদের ক্ষমতার ভিত্তি হিসাবে বা সহায়ক হিসাবে কাজ করে। দেশের রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। অর্থ পরায়ণ ও ক্ষমতা লিপ্সু সম্প্রদায় দ্বারা আজ দেশে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আজ প্রমাণিত হয়েছে, প্রচলিত সংবিধান  ও শাসনব্যবস্থা নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যার্থ হয়েছে। এঅবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্পত্তির তথা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন সামাজিক চুক্তি অনিবার্য হয়ে উঠেছে । 

দেশ : এধরনের পরিস্থিতি আগে কোনো আমলে দেখেননি? বিএনপি কি দেশ ভালোভাবে চালিয়েছিল?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : এই ধরনের পরিস্থিতি জাতি অতীতেও প্রত্যক্ষ করেছে। বিএনপি যদি যথাযথভাবে দেশ পরিচালনা করতে তাহলে ১/১১ সৃষ্টি হতো না। 

দেশ: দেশে একটি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। এজন্য কি আপনারা এই সরকারকে সরাতে চান?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : হ্যাঁ এটা সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বা ঘোষণা এই সরকার ভুলুন্ঠিত করেছে। এমনকি বর্তমান সাধারণ মানুষের নিরাপদ চলাচালকে বিপজ্জনক করে তুলেছে, দেশে একটা লুটেরা মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছ। এমতাবস্থায় সংবিধান ও রাষ্ট্রের সংস্কার শাসন ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপস্তরের জন্য এই সরকার প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কারণে আমরা এই সরকারকে সরাতে চাই। 

দেশ: এসরকারতো অনেক উন্নয়ন করেছে। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে চলেছে। অথচ আপনারা বলে থাকেন এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতাকে ধ্বংস করছে। প্রশ্ন হচ্ছে যারা দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে দেশ চালিয়েছে এবং সরকার গঠন করেছে সেদলকেই সাথে নিয়েই তো আপনারা আন্দোলন করছেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন? 

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : আমরা মানব সভ্যার এমন এক পর্যায় অতিক্রম করছি যখন সারা পৃথিবীর (হাতেগুনা কয়েকটি দেশবাদ দিয়ে) মানুষের জীবন যাপনের উপায় ও উপকরণের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে এবং জীবন বোধ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে এই সরকার বেশ কিছু অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিশ্বসভ্যতার অংশ। তবে এ কথা অস্বীকার করা অনুচিত হবে যে, কতিপয় ক্ষেত্রে (যেমন পদ্মা সেতু) এই সরকার দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকের কমন হাতিয়ার হচ্ছে উন্নয়ন। যেমন আইয়ুব খান উন্নয়নকে তার ক্ষমতার ন্যায্যতা হিসাবে তুলে ধরার অপচেষ্টা করেছেন। 

দেশ: বিএনপি কি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে নিয়ে দেশ চালায়নি? আর আওয়ামী লীগ কি এদেশের স্বাধীনতা এনে দেয়নি? 

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ভোটাধিকার হরণ? মানবাধিকার লংঘন, বিনা বিচারে নাগরিক হত্যা, ভিন্নমতকে বুটের তলায় পিষ্ট করা? বর্তমান সরকারের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন সম্পর্ক নেই। একথা সত্য যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের সাথে করে করে দেশ চালিয়েছে কিন্তু আওয়ামী লীগ তার স্বার্থের জন্য জায়ায়াত ইসলামী বাংলাদেশকে বার বার ব্যবহার করেছে। ১৯৯৬ সালে জামায়াতকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেছে। ফলে এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, আওয়ামী লীগ তার অন্যান্য শাসককে ও লুটপাটকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। বর্তমান  সরকারের মধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বিদ্যমান। হ্যাঁ, বিএনপি জামায়াতি ইসলামী ও অপরাপর জাতীয়তা শক্তিকে সাথে নিয়ে চারদলীয় জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

দেশ : এসরকার কিংবা বলা চলে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাবেনই না বলে যাচ্ছেন। এটা কি আসলে? কেনো এমন করছেন। সরকারকে কি বিশ্বাস করেন না?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : গণতন্ত্র সুশাসন ও মানবাধিকার বিষয়গুলি এই সরকারের সাথে মানায় না। এই সরকারকে বিশ্বাস করার কোন জায়গা নেই। ২০১৮ সালে সরকার প্রধান বলেছিলেন আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমাকে বিশ্বাস করেন পরিণাম উনি দিনের ভোট আগের রাতে করেছিলেন যা বিশ্ববাসী আগে কখনো দেখেনি। আসলে সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধুকে ছোট করেছেন। 

দেশ: তাহলে আপনারা ক্ষমতা পরিবর্তন কিভাবে চান?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু: নতুন সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের মাধ্যমে আমরা সরকার পরিবর্তন দেখতে চাই। যে সরকারের কাজ হবে সামাজিক চুক্তি বাস্তবায়নের সহায়তা করা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। 

দেশ : বলা হচ্ছে বিদেশীদের নানান ধননের পদক্ষেপের আশায় দিন গুণছেন যে করে এই সরকার ক্ষমতা ছাড়ে? মানে আরো নিষেধাজ্ঞার আশায় আছেন?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : এটি খুবই দুর্ভাগ্যজন যে, বিদেশীরা আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা সুযোগে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায়। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অপমান বোধ করি। কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকই কথিত নিষেধাজ্ঞা কামনা করতে পারে না। 

দেশ : আপনারা বা আপনাদের জোট বিশেষ করে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কি এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করেন?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : এ দেশের মানুষ শাসক দলগুলো দ্বারা বার বার প্রতারিত হয়েছে। কিন্তু বিএনপি যে আজ স্বীকার করেছ বিদ্যমান সংবিধান ও রাষ্টের সংস্কার প্রয়োজন এবং একটা বড় অর্জন।

দেশ : এ সরকারকে আপনাদের পরামর্শ কি?

শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু : বর্তমান সরকার ও যত তাড়াতাড়ি এটা স্বীকার করে নেবে জাতির জন্য ততো মঙ্গলজনক হবে। একটা সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে জাতির ভবিষ্যতে উজ্জ্বল করা বিশ্বের বুকে আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করা।

শেয়ার করুন