০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:১৭:২৮ অপরাহ্ন


ওলট পালট হয়ে গেছে আ. লীগের পরিকল্পনা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২৩
ওলট পালট হয়ে গেছে আ. লীগের পরিকল্পনা


বিএনপি’কে রাজনৈতিক মাঠে কঠোরভাবে প্রতিরোধের করার ডাক দিয়ে সে অবস্থা থেকে পিছু হটে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর পাশাপাশি বিএনপি’র পক্ষ থেকে নেয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির বিপরীতে নেয়া আওয়ামী লীগের অন্যসব পরিকল্পনাও ভেস্তে যাবার উপক্রম হয়েছে। ওলট পালট হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের পুরো রাজনৈতিক পরিকল্পনা। আমেরিকর নতুন ভিসা নীতির প্রতিক্রিয়ায় দলটি বিএনপি’কে মাঠে প্রতিরোধের মতো ধরনের কর্মসূচি থেকে পিছু হটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

কি আছে ভিসা নীতিতে

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন। এতে তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঐ দিনে বলেছেন, আজ আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য ইমিগ্রেশন এন্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ধারা ২১২ (এ) (৩) (সি) (৩ সি) এর অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এসময় তিনি জানান, এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। তাদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োাগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত বলেও বলা হয়।  যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বলেও বলা হয়। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে বাধা দেওয়া এবং নানা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।

এনিয়ে প্রথমে কে কি বললেন

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ‘বিচলিত নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এর পরে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি প্রত্যাহারের আবেদন করার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমরা একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার তা করছি, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন করছি। আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। সেখানে অন্যরা সাহায্য করলে ভালো। না করলেও আমরা তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভিসা নীতি বিএনপির জন্য বড় চাপ তৈরি করেছে এই ভিসানীতি। এখন আর তারা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিতে পারবে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ’যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। একটি সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে নির্বাচন হোক আমরা সেটা চাই, যুক্তরাষ্ট্রও আগামী নির্বাচনে সেটাই দেখতে চায়। এক্ষেত্রে বিএনপিই মূল বাধা।’

শরিকরা যা বললো

আওয়ামী লীগের ক্ষমতার শরিকদের মধ্যে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইন বলেছেন আরেকটু আগ বাড়িয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি না ইউরোপের নির্বাচনী নীতি সেগুলো নিয়ে মাথা ঘমানোর সময় দেশের জনগণের নেই বলে মন্তব্য করে বসেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিনী নয়া ভিসা নীতির ঘোষণাকে বিশ^ পরিসরে মার্কিনী মোড়লীপানার সর্বশেষ উদাহরণ হিসাবে বর্ণনা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নীতিতে অসন্তুষ্ট হয়ে তাদের রেজিম চেঞ্জ যে পুরানো নীতি অনুসরণ করছে এই নয়া ভিসা নীতি সেই কৌশলের অংশ। আর ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে বলে জানায় যে তাদের এই নতুন ভিসা নীতিতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসেনা। যারা ব্যাংক লুট করে টাকা পাচার করছে, অবৈধ বাণিজ্যে লিপ্ত এবং যে সব সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের শেষ আশ্রয়াস্থল হিসাবে বিবেচনা করে তারাই এই ভিসানীতিতে আতংকিত হবে এবং তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে উদ্যোগী হবে।

খাদ্যমন্ত্রী বুঝেছেন সবার আগে

তবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার পুরো বিষয়টির খারাপ দিক আঁচ করেই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জার। অথচ বিএনপি এটা নিয়ে খুশি হয়েছে। বিএনপি এ দেশের মানুষের জন্য নয়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতি করে।

বদলে গেলো মাঠের হুংকার

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে নতুন যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ে আস্তে আস্তে দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে। প্রথমে এর মর্মার্থ আওয়ামী লীগের সর্বমহলের আঁচ করা সম্ভব হয়নি। তবে গাজীপুরের সিটি কর্পোরেশনের ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের নতুন ভিসা নীতি প্রশাসনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অনেক মনে করেন ঐদিন এই ধরনের ঘোষণা না হলে মাঠে প্রশাসন কতটা কার্যকর থাকতো তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। তবে প্রশাসন টের পেলেও তখন পর্যন্ত বিন্দুমাত্র টের পায়নি মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা দলের সভানেত্রী অতীতের মতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন পদক্ষেপ তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবেন। আর এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করলেও মাঠ পর্যায়ে এর পরের কয়েকদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য দেয়া মাঠে প্রতিরোধের জন্য কঠোর মেসেজটি কার্যকর ছিল। আর একারণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি পালন ঘিরে গত শুক্রবারও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিন জেলায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়সহ দুপক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হন। খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

আরো পাল্টালো পরিস্থিতি

কিন্তু এর পর থেকে পরিস্থিতি আরো বদলে গেছে। আওয়ামী লীগরে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে ভাটা পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। কারণ  মাত্র কয়েকদিন আগেই বিএনপি নির্বাচন না করে নির্বাচন ঠেকাতে আসলে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন না করে নির্বাচন ঠেকাতে আসলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করা হবে। বিএনপিকে ক্ষমতাসীনরা আর শান্তির সমাবেশ করে জবাব দেবে না, দলটিকে ইউনিয়ন থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রতিহত করতে হবে।’ কিন্তু ভিসা নীতি ঘোষণার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উল্টা অন্য কথা বলা শুরু করেন। অভিযোগের সুরে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের এক যৌথসভায় ওবায়দুল কাদের বলেন অন্য কথা । বিরোধীরা আওয়ামী লীগকে আক্রমণকারী হিসেবে দেখাতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কোনো অবস্থাতেই আক্রমণকারী হবেন না। ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, বিএনপি এখন যেকোনোভাবে দেখাতে চায় যে আমরা আক্রমণকারী। কেরানীগঞ্জের ঘটনায় আক্রমণকারী তারা, অথচ তারা বিদেশিদের কাছে প্রচার করেছে যে আক্রমণকারী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাজেই কোনো অবস্থাতেই মাথা গরম করবেন না। বাংলাদেশের জনগণ আমাদের সঙ্গেই আছে। এদিকে প্রথামে একরকম বললেও পরে বলা শুরু করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন অন্যকথা। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ভিসা নীতি প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এখন বলছেন, ‘তারা আমাদের বলেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করতে চান, সেটাকে সাহায্য করার জন্য তারা তাদের ভিসা নীতি প্রচলন করেছে। আমরা চাইব এ ভিসা নীতির আওতায় জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হোক।’ অন্যদিকে আইনমন্ত্রী তো মার্কিনীদের নতুন ভিসা নীতিতে নতুন প্রস্তাব দিয়ে বসেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতির বিধিনিষেধ সব রাজনৈতিক দল বা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ হবে, সেটি আশা করে বাংলাদেশ সরকার। অর্থ্যাৎ তিনি সমানভাবে প্রয়োগ করার ব্যাপারে আবেদন জানিয়েছেন। 

আরো বদলে গেছে সিইসি’র ভাষা

বরিশাল সার্কিট হাউসের সম্মেলনকক্ষে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘ওনারা যদি চ্যালেঞ্জ ফেস না করে থাকেন, সেটি টলারেট করব না। যদি কোনো চ্যালেঞ্জ থাকে, সেটি তাঁদের মোকাবিলা করতে হবে।’ আর অন্যদিকে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা মাঠ কর্মকর্তাদের বিষয়ে সিইসি বলেছেন, ‘পক্ষপাতিত্বের কোনো স্কোপ (সুযোগ) নেই। আমরা খুব স্ট্রং ভাষায় বলেছি, আপনাদের নিরপেক্ষ থেকে কাজ করতে হবে। এটি মনে করলে চলবে না যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানেই সরকারের বাহিনী বা সরকারি দলের বাহিনী। তাঁরা সরকারিভাবে রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।’

গন্তব্য কোথায়

এমনিতেই বিএনপিকে প্রতিরোধ করা নিয়ে আ.লীগে নানা মত ছিল। মাঠে বিএনপি’কে এভাবে ঠেকানোর কর্মসূচি দলের শীর্ষ পর্যায়ের থেকে আসেনি বলে কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু তারপরেও বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচির জবাবে শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে আসছিল আওয়ামী লীগ। আর এতে করে একেক জায়গা থেকে খবর আসতে থাকে যে, বিএনপি’র কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বাধা দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে যে সরকার হার্ড লাইনে যাচ্ছে। ধারণা করা হয়, সরকার একটি একতরফা নির্বাচন করতেই এমনটা করছে। আর এতে করে বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে একের এক আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলের উৎকন্ঠা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগের হুংকারের বিপরীতে বিএনপি-ও প্রতিরোধের ভাষা আরো শক্ত করে। বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। মৌলিক অধিকার ও ভোটের অধিকারের জন্য মানুষ রাজপথে নামলে প্রতিরোধ করা হলে পাল্টা প্রতিরোধের কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। আর এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে উদ্বেগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দেশবাসির মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা দেখা দেয়। রাজনৈতিক সচেতনমহল বিষয়টি নিয়ে অনেক উদ্বিগ্নও ছিলো। কিন্তু মার্কিনীদের নয়া ভিসা নীতিতে যেনো উলোট পালট হয়ে গেছে। খোদ সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এনিয়ে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাই বাড়ছেই প্রতিদিন। কারণ কারণ আওযামী লীগের সর্বমহলে একটা স্পষ্ট ধারণা বদ্ধমূল ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব মেনেজ করে ফেলতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের পাশে একটি দেশ ভালো ভূমিকা রাখবে বলেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে শক্ত ধারণা ছিলো। কিন্তু  যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশটির নড়াচড়া তেমন দেখা যায়নি। বরং ভিন্ন কথা শোনা গেছে সম্প্রতি ভারতের একজন বিশ্লেষক ভারতের জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক প্রফেসর শ্রীরাধা দত্তের মন্তব্যে। দিল্লি কি তাদের সেই কূটনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করবে-  গণমাধ্যমে যুক্তি দেখিয়ে এব্যাপারে প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বলেছেন অন্যকথা। প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বলেন, “আওয়ামী লীগ দিল্লির ওপর ভরসা করে এবং এখনও করবে, কিন্তু ভারতেরও কিছু সমস্যা রয়েছে। ভারত কি আমেরিকাকে বলবে বাংলাদেশ নিয়ে তোমরা যা করছো সেটি ঠিক নয়? আমার মনে হয়না ভারত তা করবে। প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত আরো বলেন, “এটা ঠিক যে কূটনীতি বিভিন্ন চ্যানেলে হয়, ভারত হয়ত ট্র্যাক টু বা ট্র্যাক থ্রি চ্যানেলে একথা তুলবে, কিন্তু ভারত সরকার কখনই মার্কিন সরকারের কাছে গিয়ে বাংলাদেশ বা আওয়ামী লীগের হয়ে দেন-দরবার করবে না।”

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতে বিএনপি’র বিভিন্ন কর্মসূচির বিপরীতে পাল্টা কিছু না করলেও একেবাবে মাঠ ছেড়ে দেবে না। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুনভাবে আওয়ামী লীগ দেশে-বিদেশে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অতীতের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে আর্ন্তজাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে বরে কেউ কেউ মনে করেন। এধরণের পদক্ষেপের পাশাপাশি অন্য কিছু দেখতে আরো সময় লাগতে পারে। কারণ আপাতত আওয়ামী লীগ ’প্রতিরোধ’ করার মতো পুরানো প্লানে এগুচ্ছে না তা নিশ্চিত অনেকে। আওয়ামী লীগের ধারণা ছিলো রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে মাঠে কঠোর থাকলে বিএনপি ভড়কে যেতে পারে। এতে করে আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষেত্রে ইমেজে ধাক্কা লাগলেও দিনের পর দিন প্রতিরোধে ডাক দিয়েই যাচ্ছিল ক্ষমতাসীন দলটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের এক ঘোষণায় আওয়ামী লীগের প্রতিরোধের ডাক থেমে গেছে। এযাত্রায় আওয়ামী লীগের প্লান বলা চলে ভণ্ডুল।

শেয়ার করুন