৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৪৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


দেশকে মো. মোস্তাক মিয়া
বৈধতা দিতে এদের অধীনে নির্বাচন যেতে পারি না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৬-২০২২
বৈধতা দিতে এদের অধীনে   নির্বাচন যেতে পারি না


বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকমো. মোস্তাক মিয়া বলেছেন,গত ১৫ বছর ধরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একটি পাতানো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে আসছে। গুম, খুন, হামলা, মামলা করে তো জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তাই তাদের সকল অপকর্ম বৈধতা দেয়ার জন্য তো আমরা অবৈধ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিতে পারি না। এমন কাজ করলে জনগণ চিরতরে আমাদের মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। বিশ্বাসঘাতক বলবে। 

নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয়  দেশকে এসব কথা বলেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকমো. মোস্তাক মিয়া। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ পত্রিকার এ বিশেষ প্রতিনিধি।

মো. মোস্তাক মিয়া ১৯৭৯ সালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সদস্যপদ লাভের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। এরপর ১৯৮২ সন থেকে ৯০ সন পর্যন্ত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সন এ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলাসিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও কুমিল্লা সরকারি কলেজের ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

 ১৯৯৩ সন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি রিজভী আহমেদ ও ইলিয়াস আলী কমিটি, ফজলুল হক মিলন ও নাজিম উদ্দীন আলম কমিটির বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিল করে ছাত্ররাজনীতির সমাপ্ত করেন। ১৯৯৫ সন কুমিল্লা শহর বিএনপির সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। 

২০০০ সালে কর্নেল আকবর হোসেন কমিটি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির রাবেয়া ভুইয়া কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৬ সালে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক(কুমিল্লা বিভাগ)নির্বাচিত হয়েছেন। 

দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করার কারণে দলের শীর্ষ পর্যায়ে একজন ত্যাগী নেতা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকমো. মোস্তাক মিয়ার সাথে কুমিল্লার নির্বাচনের পাশাপাশি আরো অন্য বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ জুন কুমিল¬া সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এনির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ব্যাপারে অতীতের চেয়ে বেশি কঠোর হয়েছে। 

কিন্তু বিএনপির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দলের দু’জন নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এজন্য আজীবনের জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন কুমিল¬া সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক ওরফে সাক্কু। তিনি ছিলেন কুমিল¬া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। বর্তমানে তিনি কুমিল্ল¬া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন।

তাঁর সঙ্গে কুমিল্ল¬া মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দীন ওরফে কায়সারও প্রার্থী হয়েছেন।মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর নিজাম উদ্দীন স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। অন্যদিকে নিজাম উদ্দীনকেও প্রাথমিক সদস্যপদসহ সংগঠনের সব পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। একই সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি মনির হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে তাই প্রশ্ন ছিল কুমিল্লায় বিএনপিতে এধরনের ঘটনা কীভাবে দেখেন?

মো. মোস্তাক মিয়া: দলের মধ্যে এধরনের কর্মকাণ্ডের বিষয়ের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ আছে নেতৃবৃন্দের। সব দলেই কিছু লোক তো এধরনের আছেই। প্রত্যেক দলেই থাকে। এব্যাপারে দলের নেতৃবৃন্দ অবগত আছে। তাই দলের নেতৃবৃন্দ এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আরোকঠোর হবেন।

দেশ: প্রশ্ন হচ্ছে দলের মধ্যে একসময় এদুজনই ত্যাগী নেতা ছিলেন। দলের জন্য তারা অনেক কাজ করেছেন। এদের কর্মী-সমর্থক আছে দলে প্রচুর। দলের এমন নেতারা যে এখন নেতৃত্বেও সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করলো তা কীভাবে দেখেন।

মো. মোস্তাক মিয়া: এটাতো ঠিক তারা দলবিরোধী কর্মকাণ্ড করেছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। কারণ দল এখন একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধ্যভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।গত ১৫বছর ধরে এসরকার পাতানো নির্বাচন করে আসছে। তাই তাদেরকে বৈধতা দেয়ার জন্য তো আমরা অবৈধ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে পারি না। স্থানীয় সরকার বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন হোক। কোনোটাতে তো আমরা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিতে পারি না। সোজাকথা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। একথা ঠিক দু’জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে তারা তো দলের জন্য অনেক কিছু করেছে। কিন্তু তাদেরও তো দল অনেক কিছু দিয়েছে। এ দল করে তারা অনেক পদ-পদবি পেয়েছেন। তাদের তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে দল মূল্যায়ন করেছে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে।তাদেরকে মর্যাদাবান করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তাই বলবো এতো কিছুর পরও তারা যা করেছে তা দলের পক্ষে যায় না। বিএনপির মতো দলের সাথে এধরনের আচরণ করে তারা ভালো করেনি। তারা এসময়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন এদু’জন সরকারের সাথে কোনো ধরনের গোপন সমঝোতা করে এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা কি আপনার ভাষায় অবৈধসরকারকে বৈধতা দিতে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে?

মো. মোস্তাক মিয়া: আঁতাতের ব্যাপারে তো নানা কানাঘুষা ছিল। মেয়র সাহেব সম্পর্কেআঁতাত করা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানান ধরনের অভিযোগ ছিল। আরেকজনের ব্যাপারেও এখন আরো স্পষ্ট হয়ে গেলো। সে-ও দলের সিদ্ধান্ত না মেনে নির্বাচনে গেলো। যদিও তাদের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারপরেও তো তারা একটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দলকে ফেলে দিয়ে কাজটা ঠিক করেনি। একজনের বিরুদ্ধে অতীতে ছিল অভিযোগ। এবার নতুন করে উনার বিরুদ্ধে উঠলো-এই তো। 

দেশ: এদু’জন শক্তিশালী নেতা এধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে কুমিল্লায় বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হলো না? দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কি হতাশা দেখা দেবে না?

মো. মোস্তাক মিয়া: শোনেন বিএনপি একটি অনেক বড় জনপ্রিয় দল। এখান থেকে কেউ চলে গেলে, বেইমানি করলে সে বা তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সাময়িক হয়তোবা দল একটু সমস্যায় পড়বে, কিন্তু তেমন ক্ষতি হবে না। কারণ এদলে নেতাকর্মীর অভাব নেই। নেতৃত্ব দেয়ার মতো লোকেরও অভাব নেই। আর আমি মনে করি, তাদের এধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে দলেরই ভালো হলো। আগেভাগে দল টের পেয়ে গেলো কারা সংগঠনকে শতবাধার মুখে টিকে থাকবে। দলের আদর্শকে ধরে রাখবে। তাই আমি মনে করি, এরা চলে যাওয়ায় দলের জন্য ভালোই হয়েছে।


শেয়ার করুন