২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০১:১২:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-১০-২০২২
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে


বছরের ২৪ মার্চ শাহ্বাগ চত্বর থেকে পদযাত্রাসহকারে আড়াই লক্ষ সংখ্যালঘু জনগণের স্বাক্ষরসম্বলিত এক স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রদান করা হয়। এতে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের প্রতিশ্রুতি- সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্যবিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন দ্রুত বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন আইন প্রণয়নে অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।


একই সাথে দাবি জানানো হয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের জন্যেও। এর পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই একই দাবিতে সারাদেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। তা ্সত্ত্বেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে এ ব্যাপারে সরকারের কোন উদ্যোগ দেখা যায় নি, যাতে এ দেশের হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ও আদিবাসী সম্প্রদায় যারপরনাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির স্বার্থে এর নিরসন হওয়া অপরিহার্য।


গণঅনশন শেষে ঐক্য পরিষদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে এসব কথা বলা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।  আগামি ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নের আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের আহ্বানে সম্প্রতি ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন কর্মসূচি সফলভাবে পালিত হয়েছে।


রাজধানীতে কেন্দ্রীয়ভাবে এই কর্মসূচি পালিত হয় শাহবাগে। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন নিজ নিজ ব্যানার নিয়ে এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। 



গণঅনশনের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, চলতি বছরের শারদীয় দুর্গাপুজো সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গণতন্ত্রমনা সকল রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সচেতন সক্রিয়তায় নির্বিঘ্নে, শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে  অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বৌদ্ধ পূর্ণিমাও নির্বিঘ্নে উদযাপিত হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।




কিন্তু ’৭৫ পরবর্তীকাল থেকে অদ্যাবধি রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিকভাবে অনুসৃত পাকিস্তানি আমলের সংখ্যালঘু নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ায় ১৯৭০-এর আগে ১৯-২০%, ১৯৭৪ সালে ১৪.৭%,২০১১ সালে ১১.৬% থেকে ২০২২ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবানুযায়ী ৮.৬% এ নেমে এসেছে। ধারাবাহিক অত্যাচার, উৎপীড়ন ও উচ্ছেদে সংখ্যালঘু-আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেশত্যাগএই মাত্রায় অব্যাহত থাকলে আগামিতে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূণ্য হয়ে পড়তে বেশি সময় নেবে না। আমরা মনে করি, ক্ষমতায় থাকার ও ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিই শুধু গণতন্ত্র নয়, সমঅধিকার ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতিকে রক্ষা করাও গণতন্ত্রের অন্যতম মূল আধার।


ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সকল জনগণের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার সুনিশ্চিতকরণের লক্ষে অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চিরতরে বন্ধে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তিসমূহের মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।


সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালিত হয়। খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে ঐক্য পরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা গণঅনশনে যোগ দেন। বক্তব্য রাখেন নেতৃবৃন্দ। 


ঢাকার শাহবাগের গণঅনশনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি,বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকার নেতাখুশী কবির, ইতিহাসবিদ ও মানবাধিকার নেতা অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, এ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, এমপি সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী ফারুকীএবংসাংগঠনিক সম্পাদকআলহাজ্ব শাহ মোহাম্মদ আলী হোসাইন,



অধ্যাপক ড. জগন্নাথ হলপ্রভোস্টমিহিল লাল সাহা, সাবেক প্রভোস্ট জগন্নাথ হল অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠনের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত আই কোড়াইয়া,বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের (প্রভাষ-পলাশ)নির্বাহী সচিবপলাশ কান্তি দে, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের (রায়-সোনালী)সাধারণ সম্পাদকড.এম কে রায়,বাংলাদেশ ঋষি পঞ্চায়েত ফোরামের সাধারণ সম্পাদকরাজ কুমার দাস, অনুভবের সাধারণ সম্পাদক অতুল চন্দ্র মন্ডল, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন)সাধারণ সম্পাদকচারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, সনাতন ঐক্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় সদস্য সাজু চৌধুরী।


বাংলাদেশ রবিদাস ফোরামের হিমাংশু সিংহ, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি পংকজ কুমার সাহা ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, বাংলাদেশ আইনজীবী ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাড. বিভাস রঞ্জন বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুনীল রঞ্জন বিশ্বাস, বাংলাদেশ মহিলা ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুপ্রীয়া ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব অধ্যাপক রঞ্জিত নাথ, ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কাজল কুমার দাস ও সদস্য সচিব শিপন বাড়াইক, সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী ঐক্য পরিষদের এ্যাড. অনুপ কুমার সাহা। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও মি. নির্মল রোজারিও,সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, সাংবাদিক বাসুদেব ধর, জয়ন্ত সেন দীপু, মিলন কান্তি দত্ত, মঞ্জু ধর, যোসেফ সুধীন মন্ডল, জয়ন্তী রায় ওড. প্রশান্ত কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. তাপস কুমার পাল, নির্মল কুমার চ্যাটার্জী, হরিচাঁদ মন্ডল সুমন, এ্যাড. শ্যামল কুমার রায়, ব্যারিস্টার প্রশান্ত ভুষণ বড়ুয়া,এ্যাড. কিশোর রঞ্জন মন্ডল, রবীন্দ্র নাথ বসু ও রমেন মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক সুখেন্দু শেখর বৈদ, সাগল হালদার, এ্যাড. দীপঙ্কর ঘোষ, পদ্মাাবতী দেবী, দপ্তর সম্পাদক মিহির রঞ্জন হাওলাদার, যুব বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী পিন্টু, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য শিবু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. অপূর্ব ভট্টাচার্য, শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. তপো গোপাল ঘোষ, রাজনীতি বিষয়ক সম্পাদক এ্যাড. বিনয় কুমার ঘোষ বিটু প্রমুখ।


সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন শেষে জল পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করাবেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার নেতা ড. মিজানুর রহমান।


কর্মসূচি 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা গণঅনশন শেষে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হলে আন্দোলনের পরবতী কর্মসূচি হিসেবে একই দাবিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা অভিমুখে রোড মার্চ করে আগামী বছর ৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকার শাহ্বাগ চত্বরে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকায় শাহবাগে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ। 


শেয়ার করুন