১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০১:৩৯:৪২ পূর্বাহ্ন


বিএনপির সেল গঠনে আ.লীগের ঘুম হারাম
বদলে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৬-২০২৩
বদলে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট করা হচ্ছে অতি উৎসাহী পুলিশের তালিকা


বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা এবং মিথ্যা-গায়েবি মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহে দলটির নতুন উদ্যোগে শঙ্কা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালি মহল এমনকি তৃণমূলেও। এর পাশাপাশি বিরোধী দলের উদ্যোগে এধরনের তথ্য অনুসন্ধান কাজ নিয়ে প্রশাসনও অস্বস্তিতে ও বিভিন্ন ধরনের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিএনপি’র এসব তথ্য সংগ্রহ করে কাকে কখন কিভাবে পাঠাবে কিংবা উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে - সে ব্যাপারেও প্রশাসনে ভীষণ উদ্বেগ কাজ করছে। অনদিকে আওয়ামী লীগে রয়েছে চাপা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

বিএনপির সেল গঠন

বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের তালিকা এবং মিথ্যা-গায়েবি মামলা সংক্রান্ত  প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে তৃণমূলে চিঠি দিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এএসপি ও এসপিদের নাম ও পরিচয় পাঠাতে বলা হয়েছে। ১৮ মে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সব সাংগঠনিক জেলায় পাঠানো হয়।

কি করবে এই সেল?

কেন্দ্রীয়ভাবে এই সেল গঠন করে পুলিশের সাবেক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে এর দায়িত্ব। যদিও গণমাধ্যমে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে এটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। সর্বশেষ আপডেট পাঠানোর জন্যই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দলের পক্ষে। তবে বিভিন্ন মহলে এনিয়ে ভিন্ন ধারণা দেখা দিয়েছে। কেননা বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুম-খুন ও মামলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, তাদের শত শত নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার। গায়েবি মামলায় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এমন বক্তব্য কি আসলইে সত্য? না-কি মাঠের গর্জন। এবিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা আছে দলে ও দলের বাইরে এমনকি আর্ন্তজার্তিক অঙ্গনে। কেননা গুম-খুন-মামলা ব্যাপারে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আর্ন্তজাতিক মহল এর সত্যতা চেয়ে তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন শক্ত কূটনৈতিক চ্যানেলে বলা হয়েছে গুম-খুনের ব্যপারে বিএনপি’র অভিযোগ রং মেশানো, বানানো তথ্যনির্ভর না-তাই এগুলি সত্য নয়। আর একারণে ধারণা করা হচ্ছে বিএনপি এধরনের সেলে দল, প্রশাসনের কারো নাম চলে এলে প্রভাবশালীরা মারাত্মক বেকায়দায় পড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি এই সেলের মাধ্যমে  প্রভাবশালী দেশসহ অনেকে যারা এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে তাদের হাতে তুলে দিতে পারে।  কেননা বিএনপি’র হাইকমান্ড থেকেই এটি প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটি কূটনৈতিক চ্যানেলে কোনো স্পর্শকাতর জায়গায় পৌঁছে যাবে। এব্যাপারে জেলা ও মহানগরের সভাপতি বা আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘এতে ওই সময়ের সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও পরিচয় উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ওই সময়কার সংশ্লিষ্ট সার্কেল এএসপি বা এডিশনাল এসপি (মেট্রোর ক্ষেত্রে এসি-জোন) এবং এসপির (মেট্রোর ক্ষেত্রে ডিসি-ডিভিশন) নাম ও পরিচয়, মিথ্যা বা গায়েবি মামলা রুজুকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয় এবং মিথ্যা বা গায়েবি মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম ও পরিচয়ও পাঠাতে বলা হয়েছে। ফলে বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনকেও ভাবিয়ে তুলেছে। 

করা হচ্ছে অতি উৎসাহী পুলিশের তালিকা

এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তার প্রতিও নজর রাখছে বিএনপি। সম্প্রতি পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেশের ৯ বিভাগের ১৮ জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করতে গিয়ে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ বিএনপির জনসমাবেশে হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। কেরানীগঞ্জের হামলার ঘটনায় দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী নিপুণ রায় চৌধুরী আহত হয়েছেন। তবে হামলায় আইন শৃংখলা বাহিনীর একটি অতি উৎসাহী মহল করেছে বলে বিএনপি মনে করে। এধরনের কর্মকর্তা বা কর্মচারিরা বিএনপি’র পক্ষ থেকে নেয়া আন্দোলনে প্রতিবন্ধক হিসেবেও মনে করা হচ্ছে। তাই নির্বাচন ও চূড়ান্ত আন্দোলন সামনে রেখে এসব কর্মকর্তাকে চাপে রাখার কৌশলেই এমন তালিকা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে আন্দোলনের পাশাপাশি গায়েবি মামলা এবং গুম-খুন-নিপীড়নের সঙ্গে জড়িত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। তবে একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না, এমন নীতি ঘোষণার পরদিনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিএনপি’র থেকে গুম-খুন ও মামলা মোকাদ্দমার ব্যাপারে নতুনভাবে তালিকা চেয়েছেন। 

একিইভাবে বিএনপির সঙ্গে ঢাকয় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির বৈঠকেও গুম-খুন হয়রানি নির্যাতন নিয়ে বিএনপি’র অভিযোগের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ অতি উৎসাহী নেতাকর্মীদের ব্যাপারেও তালিকা হচ্ছে। কেননা দেখা গেছে মার্কিন নতুন ভিসানীতির ব্যাপারেও যখন চারিদিকে উভয় দলের উদ্বেগ উৎকন্ঠা সেসময়ে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীদের তৎপরতায় কমতি নেই। আর একারণে দেখা গেছে, অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে ফরিদপুরে দায়ের হওয়া মামলায় রাজশাহীর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদকে (৬৫) গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে তাঁকে একটি পুলিশ ভ্যানে করে ফরিদপুর আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেন। এসন ঘটনাকে খোদ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও অতি উৎসাহী বলেই গন্য করা হয়। অপরদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের ওপর বগুড়া শহরের একটি আবাসিক হোটেলের কক্ষে ও এর আগে তাঁদের গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং কয়েকটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মঞ্চের নেতারা। হামলাকারীরা গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের বহনকারী একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দুই দফা হামলায় ছয় নেতা আহত হয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের বলেছেন, ‘কোনও অবস্থাতেই মাথা গরম করা যাবে না। আমরা কাউকে আক্রমণ করবো না। তারপরেও যারা এমন করছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে বিএনপি’র পক্ষ থেকে যা অনেক আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগে,যদিও মুখ ফুটে কিছু বলা হচ্ছে না। 

শেষ কথা

অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ও চাপে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃশ্যপটই বদলে গেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি অন্যদিকে অতিসম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে আওয়ামী লীগসহ পুরো ক্ষমতাসীন মহলে ভেতরে ভেতরে তোলপাড় চলছে। প্রশাসন, দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।  ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকা রাষ্ট্রদূত পিটার হাস মাঠের প্রধান বিরোধী দলকে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা মোক্কাদমা কিংবা গুম খুনের তালিক সরবরাহ করতে বলেছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এছাড়া এপ্রসঙ্গে সাবেক বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের নামই আসতে পারে বলে বলা হচ্ছে। ফলে বিএনপি’র পক্ষ থেকে গঠন করা সেলটি আসলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত ২৪ মে যে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে হচ্ছে কি-না তা নিয়েই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের মধ্যে, পাশাপাশি প্রশাসনেও। 

শেয়ার করুন