২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:৪৬:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখে পদক্ষেপ
আশ্বাসে আশ্বস্ত নয় যুক্তরাষ্ট্র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
আশ্বাসে আশ্বস্ত নয় যুক্তরাষ্ট্র


বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে-ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি পেয়েছে সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। ঢাকার এ প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়েছে তারা। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে ওয়াশিংটন ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা এমনই মন্তব্য করেছেন।

বাংলাদেশ সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঢাকাকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখতে চায় ওয়াশিংটন। এ জন্য দরকার একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। এ স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি অর্জনে প্রয়োজন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর আদর্শিক পরিস্থিতি। এ কারণে যে কোনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

ধারণাবশত বলা হচ্ছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ ইস্যুতে এক প্রকার নমনীয়তা আসবে। তবে উজরা জেয়া বাংলাদেশ সফরের আগে ভারত সফরের সময়ও পরিষ্কার করে দিয়েছেন-তা হয়নি। দেশটিতে একটি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অবাধ নির্বাচনের কথা বলেছেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ইস্যুতে রাশিয়া ও চীন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান করছে।

এদিকে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দ্বিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের প্রতি অব্যাহত সমর্থন জানাতে উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। উজরা জেয়া বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এক প্রশ্নের জবাবে উজরা জেয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সব মন্ত্রীর কাছ থেকে অবাধ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার শুনেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করা। বাংলাদেশের অংশীদার হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখার কথা জানান তিনি।

উজরা জেয়ার সফরে কী বার্তা পাওয়া গেল-জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান বলেন, এ সফর দুই দেশের অভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনার পথকে আরো প্রশস্ত করেছে। এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদারের জন্য জরুরি ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংশোধনের যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তা ইতিবাচক ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করবে-দেশটি থেকে আগামীর প্রতিক্রিয়া কী আসবে। বাংলাদেশের নির্বাচন বিষয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে তা আঞ্চলিক দেশগুলোর অবস্থানের থেকে আলাদা।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করেন না সাবেক রাষ্ট্রদূত এম. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, তাদের বার্তায় কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। বরং বাংলাদেশকে ভেতর ও বাইরে-দুই দিক থেকেই তারা দেখতে চেষ্টা করেছে। দুই দেশের বিগত ৫০ বছর এবং সামনের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বকে ওয়াশিংটন গুরুত্ব সহকারে নেয়। সেই প্রেক্ষাপটে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার এবং মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোর ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অংশগ্রহণমূলক বাংলাদেশ তৈরি হলে সামনের দিনে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হবে ঢাকা। সেই বার্তাই যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে।

সাবেক এ কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিককে সামনে নিয়ে এসেছে। শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়; এ অঞ্চলে যে রকম দায়িত্ব পালন করা দরকার, বাংলাদেশ তা করতে পারলে যথাযথ সুবিধাগুলো বাংলাদেশ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ঢাকা ও দিল্লি দুই জায়গাতে মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়া দরকার এবং এটি হলে দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে দুই দেশ। এ কথা উজরা জেয়া ভারত ও বাংলাদেশে বলেছেন। এ নিয়ে সক্রিয়ভাবে ওয়াশিংটন ভূমিকা রাখবে- সে বার্তাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা যা করা প্রয়োজন, তা করবে দেশটি। এটি নির্বাচন ও সংলাপ কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে হতে পারে। আগামী দিনের স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে তারা পাশে থাকবে-তা জোরের সঙ্গে জানান দিয়েছে।

বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে উজরা আশ্বস্ত হয়েছেন কি না-জানতে চাইলে বৈঠকগুলোতে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি শুনেছেন এবং প্রতিশ্রুতিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বিষয়ে আশ্বস্ত হয়েছেন- এ কথা বলা যাবে না।

শেয়ার করুন