২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন


দেশকে অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি
আমাদের জীবন রহস্যের বাইরে নয়
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
আমাদের জীবন রহস্যের বাইরে নয় স্বস্তিকা মুখার্জি


স্বস্তিকা মুখার্জি। কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেত্রী। কাজ করেছেন বলিউডেও। সম্প্রতি তিনি চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বাংলাদেশের একটি রহস্য থ্রিলার চলচ্চিত্রে। নাম ‘ওয়ান ইলেভেন’। এই চলচ্চিত্র এবং ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির।  

প্রশ্ন: চলচ্চিত্রে আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। রেকর্ড বইয়ে অনেক জনপ্রিয় কাজ আছে আপনার। কিন্তু শুরুটা কিভাবে হয়েছিল?

স্বস্তিকা মুখার্জি: আমার বাবার সন্তু মুখার্জি ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা। সঙ্গত কারণেই আমার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার কথা ছোট বেলায়। কিন্তু সেটা হয়নি। ১৯৯৮ সালে আমি বিয়ে করেছিলাম। ২০০০ সালে জন্ম নেয় মেয়ে অন্বেষা। ততদিনে আমার সংসার নরবড়ে হয়ে গেছে। একটা বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছিল তখন। এর থেকে বের হতে ২০০১ সালে আনন্দ শঙ্কর সেন্টার ‘কালচার লার্নিং ড্যান্স’-এ ভর্তি হই। ওখানে তনুশ্রী শংকরের কাছে থেকে নৃত্যর তালিম নেই। এরপর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করার সময় টিভি সিরিয়াল ‘দেবদাসী’ তে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পাই। চলচ্চিত্রে প্রথম কাজ করি ২০০৩ সালে উর্মী চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘হেমন্তের পাখি’তে। তারপরের খবর তো আপনারা জানেনই। 

প্রশ্ন: কিন্তু সিনেমায় আপনার চরিত্রগুলো নিয়ে নানা রকম কথা উঠেছে। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

স্বস্তিকা মুখার্জি: আমাদের এখানে সমস্যাটা কী জানেন, যেভাবে অনস্ক্রিন আমাদের দর্শক দেখেন ব্যক্তিগতভাবেও সে রকমই ভাবেন। আমাকে অ্যালকোহলিকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখার পর আত্মীয়-স্বজনরা তো ফোন করে বলত আহা রে মেয়েটা সকাল থেকে মদ খেয়ে পড়ে থাকে। বাবা-মা দেখেও না। মা বলত, দেখ এ সব ছবি করিস, আর লোকে এ সব কথা বলছে। আমি বলতাম, কী করব বল? তুমিও বলবে, একদম কথা শোনে না। কী করব বল? তুমি আবার কাউন্টার যুক্তি দিতে যেও না (তুমুল হাসি)। ফলে কোনও একটা সিনে বিকিনি পরে নাচা বা দাঁড়িয়ে থাকার থেকে এই ধরনের চরিত্রগুলো করা অনেক রিস্কি। গোটা জার্নিটাই সাহসী। সেটা ক্যারি করাটাই আসল।

প্রশ্ন: মাঝখানে আপনি অসুস্থ ছিলেন। এখন কি অবস্থা? 

স্বস্তিকা মুখার্জি: এখন ভালো আছি। সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে আমার সার্জারিটা হয়েছে। তারপর এক মাস রেস্ট নিয়েছি। ধকলটা কাটিয়ে ওঠেছি। সে সময়টা বাড়িতেই ছিলাম। বেডরেস্ট তো আর হয় না, হোমরেস্ট হয়। এখন বেশ ভালো আছি। 

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমায় কাজ করতে আসছেন। কেমন লাগছে?

স্বস্তিকা মুখার্জি: ওপার বাংলায় কাজ করার ইচ্ছা আমার প্রবল এবং সেটা বহু বছর ধরে। ২০০৮ সালে প্রথমবার সেখানে কাজ করেছিলাম। তখনই গিয়েছিলাম ঢাকায়। সেটা ছিল কমার্শিয়াল সিনেমা। শুটিং করেছি। তারপর বহু পরিচালক-প্রযোজকের সঙ্গে কথা হয়েছে, স্ক্রিপ্ট আদান-প্রদান হয়েছে, কিন্তু ঠিক কাজটি করা হয়নি, ব্যাটে-বলে হয়নি সবটা। ওয়ান ইলেভেন দিয়ে অবশেষে নতুন কাজ হতে যাচ্ছে। আমি অপেক্ষায় আছি শুটিং শুরু করার।

 প্রশ্ন: ওয়ান ইলেভেনে অভিনয়ে রাজি হওয়ার ক্ষেত্রে কোন দিকটি আপনাকে আকর্ষণ করেছে?

স্বস্তিকা মুখার্জি: আমার ছবির পরিচালক। তিনিই ওয়ান ইলেভেন ছবির গল্পটা আমাকে পাঠিয়েছিলেন ২০২১ সালে। কোভিডের পুরো যন্ত্রণার মধ্যেই আমি প্রথম গল্পটা পড়েছিলাম এবং ২০২১ সাল থেকেই কামরুল রিফাত ও ওনার টিম, ওনাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ চলছিল। তারপর আমি স্ক্রিপ্টটা পড়েছি। অনেক ড্রাফট পড়েছি, চরিত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে, জুম কলে অনেক মিটিং করেছি এবং এক রকম মুগ্ধতা তৈরি হয়েছে পুরো গল্পে। তারা যেভাবে শুটিং করতে চান, পুরো বিষয়টার সঙ্গে একমত হয়েছি। সেই মুগ্ধতা থেকেই কাজটা করতে চাওয়া। আর আমি সব সময় এমন চরিত্র করতে চাই, যেগুলো আগে কখনও করিনি। আর বাংলাদেশের একটা কাজ করব, মনের মতো না হলে হয়তো কাজটা করা হতো না। এটা আমার মনের মতো একটি কাজ। 

প্রশ্ন: এ চলচ্চিত্র মিষ্টি থ্রিলার নাকি পলিটিক্যাল থ্রিলার?

স্বস্তিকা মুখার্জি: আমাদের জীবনটা তো রাজনীতির বাইরে নয় এবং রহস্যের বাইরেও নয়। আমরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মনে হয় না বুঝতে পারি যে আমাদের দিনটা ঠিক কীভাবে কাটবে বা কাজের ক্ষেত্রেও, আমার প্রফেশনের ক্ষেত্রেও, শুটিংয়ে দুপুরবেলা ঠিক জানি না সন্ধ্যাবেলা সিনগুলো কী রকম যাবে। রহস্য আমাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েই থাকে সর্বদা। সেটা ছবির ক্ষেত্রে হোক বা গল্পের ক্ষেত্রে। না জানাটার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। সেজন্য আপনারা যখন ওয়ান ইলেভেন ছবিটা বড়পর্দায় দেখবেন কৌতূহল থাকবে। এটুকুই বলব, ছবিটিতে যে সবকিছু মিশে আছে আমাদের জীবনের মতো। 

প্রশ্ন:  নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ কলাতে ধূসর চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। এবারও কি তেমন কিছু ঘটতে যাচ্ছে?

স্বস্তিকা মুখার্জি:  নিঃসন্দেহে। আমি গদবাঁধা কোনো চরিত্রে কাজ করব না। যেসব চরিত্রে আমাকে দর্শক দেখে ফেলেছেন সেগুলো রিপিটও করব না। সব সময় চাই একদম নতুনভাবে দর্শকের সামনে আসব। সেটা নতুন চরিত্র হোক, সাজপোশাক হোক, চেহারা হোক। ওয়ান ইলেভেন ছবিতেও আমার চরিত্রটা একদম নতুন। ও রকমভাবে আমাকে দর্শক আগে কখনও দেখেননি। আমি আশা করছি এ চরিত্রেও দর্শক মুগ্ধ হবেন। 

প্রশ্ন: ওয়ান ইলেভেন পরিচালনা করবেন নতুন নির্মাতা। তার ওপর আস্থা রেখে কতটা নির্ভার আপনি?

স্বস্তিকা মুখার্জি:  আমার ২৩ বছরের ক্যারিয়ারে মনে হয় আমি সবচেয়ে বেশি নতুন পরিচালক, নতুন প্রযোজকের সঙ্গে কাজ করেছি। পরিচালকদেরও প্রথম ছবি এবং আমারও তাদের সঙ্গে প্রথম ছবি। বাংলার অনেক পরিচালক আছেন যাদের প্রথম ছবি আমার সঙ্গে হয়েছে এবং তারপর বোম্বেতে গিয়েও তারা কাজ করেছেন। তখন আমি আবার তাদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি কখনোই নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে ভীত ছিলাম না। আর দেখুন সব প্রফেশনে সবারই একটা প্রথম দিন থাকে। আমারও ছিল, আমার জীবনেও একটা প্রথম দিন ছিল, একটা প্রথম কাজ ছিল এবং আমি জানি যে নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে না চাওয়ার হতাশা কতটা। আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের জীবনে সেটার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমার নিজের যে অভিজ্ঞতা সেই হতাশার বিরক্তি থেকে মনে হয় আমি সব সময় নতুনদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। কামরুল ইসলাম রিফাত এবং এ ছবিটি নিয়ে আমি আশাবাদী। তার টিম, অ্যাসোসিয়েট, ডিরেক্টর অ্যাসিস্ট্যান্ট; সবার সঙ্গে প্রচুর আমার কথা হচ্ছে, ফোনে যোগাযোগ রয়েছে। এতটাই দক্ষতার সঙ্গে তারা কাজ করছেন যে আমার আর ধৈর্য থাকছে না। আমার সঙ্গে যখনই কথা হচ্ছে, আমি বলছি যে আমরা কত তাড়াতাড়ি শুটিংটা শুরু করতে পারব।

 প্রশ্ন:  বাংলাদেশের গুণী অভিনেতা আফজাল হোসেন। তার সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারটি আপনাকে কতটা উৎসাহ জোগাচ্ছে?

স্বস্তিকা মুখার্জি:  আমি বাংলাদেশের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর কাজের ভক্ত। সেখানকার অনেকের কাজ ফলো করি। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে হোক বা এখানে কলকাতায় যে ছবিগুলো রিলিজ করে, সেগুলো দেখার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে বসে থাকি। আফজাল হোসেনের সঙ্গে কাজ করাটাও একটি খুব বড় পাওনা। বড়পর্দায় আমাদের একসঙ্গে দেখে দর্শকেরও ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। আফজাল হোসেন তো আছেনই, বাকি যে কলাকুশলীরা আছেন তাদের সঙ্গে কাজ করাটাকেও আমি আনন্দের মনে করি। এবার শুটিং শুরুর অপেক্ষা।

শেয়ার করুন