বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মায়ানমারে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে আর সেখান থেকে ছোড়া মর্টারশেল বাংলাদেশের এসে পড়ছে। গত কয়েক মাস ধরেই মায়ানমার এই হামলা চালাচ্ছে। বাংলাদেশও পাল্টা জবাবে না গিয়ে তাদের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। মায়ানমার বাংলাদেশে মর্টারশেল নিক্ষেপ করছে আর বাংলাদেশ প্রতিবাদ জানাচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে মায়ানমার থেকে ছোড়া পাঁচটি মর্টারশেল নোম্যান্সল্যান্ডে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্রে এসে পড়ে।
মর্টারশেলের
আঘাতে ইকবাল হোসেন নামে একজন নিহত
হয়েছেন। এছাড়া দুই শিশুসহ পাঁচজন
গুরুতর আহত হয়েছেন। এদের
মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, তাদের কুতুপালং এমএসএফ হাপসাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ
করা যায়, এর আগে
একইদিন দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রæ সীমান্তে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের দ্বারা পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিক্ষোরণে
এক বাংলাদেশি যুবকের গোড়ালিসহ পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে
গেছে। খবর পেয়ে বাংলাদেশ
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ডের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে
তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটে ঘুমধুম ইউনিয়নে।
সেখানকার চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, ঘুমধুমের
৯টি পয়েন্টে মায়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে। ইতঃপূর্বে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে ২০ জনের বেশি
বাংলাদেশি এবং মায়ানমারের রোহিঙ্গা
নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।
কিছুদিন
থেকেই বাংলাদেশ সীমান্তে মায়ানমারের গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে।
সীমান্তরক্ষীরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির আস্তানা ধ্বংস করতেই মায়ানমারের সরকারি বাহিনী মর্টারশেল নিক্ষেপ করছে এবং ভারী
অস্ত্রশস্ত্রের হামলা চালাচ্ছে। মায়ানমারের যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার
থেকেও গোলা নিক্ষেপ করা
হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুদফায় মর্টারশেল ও যুদ্ধবিমান থেকে
নিক্ষেপ করা গোলা উড়ে
এসে পড়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। আমাদের কথা হলো, মায়ানমারের
অভ্যন্তরীণ যুদ্ধাবস্থার খেসারত কেন দিতে হবে
বাংলাদেশকে। এসব ঘটনাকে আমরা
উসকানিই বলতে চাই। মায়ানমার
আমাদের প্রতিবেশী দেশ। প্রতিবেশীর সঙ্গে
সুসম্পর্ক রাখাটাই ক‚টনীতির অংশ
হওয়া উচিত। এমনিতেই আমরা ১১ লাখের
বেশি মায়ানমারের অধিবাসী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি, যা আমাদের অর্থনীতি
ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক চাপ
সৃষ্টি করেছে। মায়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত তো নিচ্ছেই
না, উল্টো বাংলাদেশ সীমান্তে মর্টারশেল ও গোলা নিক্ষেপ
করে চলেছে। মায়ানমারের এই উসকানি অব্যাহত
থাকলে দু’দেশের মধ্যকার
সম্পর্ক জটিল আকার ধারণ
করবে। আমরা আশা করবো,
ভবিষ্যতে মায়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ
করবে এবং তাদের ছোড়া
মর্টারশেল বা গোলা বাংলাদেশ
সীমান্তে এসে যাতে না
পড়ে, সে বিষয়ে বিশেষ
দৃষ্টি রাখবে। মায়ানমার যে বাংলাদেশে ইচ্ছে
করেই মর্টার হামলা চালাচ্ছে তা দিবালোকের মতো
সত্য। এর পেছনে অন্য
কারো ইন্ধন আছে কি না
তাও খতিয়ে দেখতে হবে।
এদিকে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা করছি। শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের পক্ষে যদি না হয় প্রয়োজনে জাতিসংঘের কাছে তুলবো। আমরা সব কিছু করবো। তিনি বলেন, মায়ানমার কোনো সময়ই কথা দিয়ে কথা রাখে না। আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সব চেষ্টাই করে যাচ্ছি। মায়ানমারের মর্টার হামলায় বাংলাদেশিরা প্রাণ হারাচ্ছেন, জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এই অবস্থাতেও বাংলাদেশ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
শান্তির পথ খুঁজছে। প্রথম
দিনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর পরও টানা মর্টার
হামলা চালাচ্ছে। এখন সময় এসেছে
কঠোর প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে
তোলার। কারণ মায়ানমারের মারমুখী
আক্রমণ সামলাতে হলে বাংলাদেশকেও মারমুখী
হতে হবে। কারণ বাংলাদেশ
একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। মায়ানমার আন্তর্জাতিক
আইনও লঙ্ঘন করেছে। এর আগেও মায়ানমার
বাংলাদেশে এভাবে মর্টার হামলা করেছিলো, সেই হামলার পাল্টা
জবাব দিয়েছিলো বাংলাদেশ। পাল্টা জবাবের কারণে মায়ানমার সোজা হয়ে গিয়েছিলো।
এখনো সময় এসেছে সেভাবেই
জবাব দেয়ার।