২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:০৭:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


টানা বড় কর্মসূচিতে বিএনপি
রাজপথের আন্দোলনেই চূড়ান্ত ফয়সালা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
রাজপথের আন্দোলনেই চূড়ান্ত ফয়সালা বিএনপির সভাবেশে উপস্থিতি


দীর্ঘ আন্দোলনের শেষ লগ্নে এসে উপস্থিত বিএনপি। নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ পথচলা এখন সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা বা পদত্যাগের দাবিতে এসে উপনীত। এ দাবিও ঘোষণা করার পর থেকে হাঁটি হাঁটি করে এগোচ্ছিল। এখন থেকে যতক্ষণ সরকারের পতন না ঘটবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আর কর্মসূচিহীন থাকছে না দলটি। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত যে সময়টুকু, দুইভাবে বিভক্ত করেছে বিএনপি। এর প্রথম ধাপের কর্মসূচি ইতিমধ্যে ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে তারা। তবে এ সময়টুকুতে অহিংসই থাকছে তাদের কর্মসূচি। পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তার স্বরূপটাও কেমন সেটা এ পর্বের পরেই চূড়ান্ত করবে। 

তবে প্রথম পর্বের আন্দোলনের রূপরেখা দেখে অনুমান করা যাচ্ছে যে, দ্বিতীয় বা শেষ ধাপের আন্দোলন আরো কঠোর হবে। বিএনপি টার্গেট করেছে তফসিল। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার আগেই দাবি পূরণ করতে। সেটা সম্ভবপর না হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের রূপরেখায়ই নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে ফেলবে। বিএনপি কোনোভাবেই সেটা হতে দিতে চায় না। যদিও শুধু বিএনপি চাইলো, আওয়ামী লীগ সেটা মানলো না, এর মধ্যেই দেশের রাজনীতি সীমিত নয়, এটা বুঝতে বাকি নেই। একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোটের। আর ওই দাবি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের চাপও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

বিএনপির শেষ ধাপের প্রথম পর্বের কর্মসূচি: 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম দফার টানা যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। তাতে মূলত ইঙ্গিত করছে শেষ পর্বের বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়িয়ে একটা যথাযথ আন্দোলনের পরিবেশ তৈরি করা। এটা অহিংস রাখার কারণ মানুষের মধ্যে যেন কোনো আতঙ্ক সৃষ্টি না হয়। কারণ অহিংস, নরমাল আন্দোলন হলে সেটাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধাদান বা আইনশৃঙ্খলার অবনতির মাথাব্যথার কারণ নেই। এতে করে আন্দোলনের মাঠে মানুষ নেমে আসবে অনায়াসে।  

এতে করেই এবারের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রোডমার্চ ও সমাবেশ জাতীয় কর্মসূচি।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা আড়াইটায় দলের চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার টঙ্গী (গাজীপুর) ও কেরানীগঞ্জে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২১ তারিখ (বুধবার) ময়মনসিংহ বিভাগের কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ, ২২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় দুটি সমাবেশে এবং একই দিনে বাদ জুমা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় সারা দেশের জেলা মহানগর উপজেলা পৌর ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।  

২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগের রোডমার্চ, ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার রায়ের বাজার ও আমীন বাজারে দুটি সমাবেশ, ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ এবং একই দিনে ঢাকায় পেশাজীবীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লায় সমাবেশ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা দলের সমাবেশ, ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবীদের সমাবেশ, পহেলা অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ, ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ ও ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচি ঘোষণাকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির সিনিয়র নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় নেতারা জানান, ৩ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম দফার এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলো। দ্বিতীয় দফায় পরবর্তী ঘোষণা করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আন্দোলন কখন, কোনদিকে রূপ নেবে, সেটা রাস্তাই বলে দেবে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো সরকার টিকে থাকতে পারে না। এই সরকারও পারবে না।” তবে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, বিএনপি তফসিলের ঠিক আগ মুহূর্তে অর্থাৎ শেষ ধাপের প্রথম পর্বের পর সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো বড় কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে।  

আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা জানান দিয়েছিল। সিইসি জানিয়েছেন, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর কঠোর নজরদারি করবেন তারা। ফলে নির্বাচনের বিষয় ও দেশের রাজনীতির হালহকিকত প্রসঙ্গেও একটা দুশ্চিন্তা নির্বাচন কমিশনের। একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধাদান বা এক তরফা (২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন) নির্বাচন আয়োজনে সহায়তাকারী উভয়কে ভিসানীতির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান দিয়েছে। এতে করে দুশ্চিন্তা নির্বাচন কমিশনেরও। কারণ তারা বিগত দুই নির্বাচনের আদলে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে গেলে যাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে গোটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সবার জন্য মার্কিন ভিসানীতি প্রয়োগ হতে পারে। ফলে এটা সিইসির জন্য ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। 

যেহেতু ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন সম্পাদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাহলে তার অন্তত দুই মাস আগেই তফসিল ঘোষণা করার কথা। তবে এসবই সিইসি পরিস্থিতি অনুসারে সময়ক্ষণ নির্ধারণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি চাইছে আন্দোলনটা ধীরে ধীরে কন্টিনিউ রেখে তফসিল ঘোষণার আগে বড় ও কঠিন কর্মসূচিতে চলে যাওয়া। যাতে সরকারকে তাদের দাবি আদায়ে বাধ্য করানো যায়। এসব কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে ঢাকা ঘেরাও, সচিবালয় ঘেরাওসহ নানা সময়োপযোগী কর্মসূচি, যা ইতিমধ্যে দলের শীর্ষনেতৃত্ব ভাবতে শুরু করেছেন বা ছক কষেছেন। 

আর এসব কর্মসূচিতে সরকার পক্ষ বাধা দিলে ‘যদি পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে’ তাহলে এক পর্যায়ে অসহযোগ আন্দোলনের দিকেও যেতে পারে বিএনপিসহ তাদের সমমনা দল। বাংলাদেশের অতীত রাজনীতি ও আন্দোলনের গতিপথ এমনটাই দেখা গেছে। 

বিএনপির এ পর্বের কর্মসূচিতে কে কোথায় পালন করবেন দায়িত্ব: 

মঙ্গলবার বিএনপি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবি আদায়ে বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচিতে কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন। 

* মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা জেলার জিঞ্জিরা/কেরানীগঞ্জ এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে সমাবেশ-মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান, কেরানীগঞ্জ-গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী-টঙ্গী। 

বৃহস্পতিবার ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট রোডমার্চ-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরে যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা সমাবেশ মির্জা আব্বাস ও ড. আব্দুল মঈন খান-যাত্রাবাড়ী, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-উত্তরা। 

শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশুরোগ মুক্তি কামনায় বাদ জুমা সারা দেশে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে দোয়া। 

শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী রোডমার্চ- নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান।  

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগরের নয়াবাজার ও ঢাকা জেলা আমিন বাজারে সমাবেশ নজরুল ইসলাম খান-নয়াবাজার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান-আমিন বাজার। 

মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগ রোডমার্চ-মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। 

মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবী কনভেশন-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. আবদুল মঈন খান। 

বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর গাবতলী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লায় জনসমাবেশ-নজরুল ইসলাম খান ও বেগম সেলিমা রহমান-গাবতলী, ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী-ফতুল্লা।  

শুক্রবার ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মহিলা সমাবেশ-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান। 

শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শ্রমজীবী কনভেনশন-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান। 

রোববার ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ-ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান। 

সোমবার ২ অক্টোবর ঢাকায় কৃষক সমাবেশ-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর কুমিল্লা, ফেনী, মিরসরাই, চট্টগ্রাম রোডমার্চ-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া আইনজীবীদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে এবং আন্দোলনরত সব দল সমর্থন জানাবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

শেয়ার করুন