০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৭:১১ পূর্বাহ্ন


পারমাণবিক বিদ্যুৎ এলিট ক্লাবের সদস্য এখন বাংলাদেশ
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
পারমাণবিক বিদ্যুৎ এলিট ক্লাবের সদস্য এখন বাংলাদেশ রূপপুর প্রকল্প


অনেক গৌরব আর গর্বের মাইলফলক অর্জন করলো বাংলাদেশ। সেই কবে ১৯৬০-এর দশকে পাবনার রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (আরএনপিপি) জন্য জমি হুকুম দখল করা হয়েছিল। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার কাজটি গুরুত্ব দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সরকার নানা চ্যালেঞ্জের মুখেও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ফ্রান্সের আলোচনা শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংগঠন (আইএইএ) সদস্য হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ জয়ী বাংলাদেশ পুনর্নির্মাণের মহাকর্মযজ্ঞে ভাটা পড়ে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর। ১৯৭৫-১৯৯৬ কোনো সরকার কোনো উদ্যোগ নিলো না। ১৯৯৬ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে এসে আবার শুরু করলেও ২০০১ নির্বাচনে হেরে গেলে সেই উদ্যোগে আবারও ভাটা পড়ে। তবে ২০০৯-২০২৩ ক্রমাগত তিন টার্মস ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকার আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের অকৃত্রিম বন্ধু দেশ রাশিয়ান ফেডারেশনের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তায় গড়ে তুলেছে ২১২০০=২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার অত্যাধুনিক ভিভিইআর তৃতীয় প্রজন্ম প্লাস পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ৫ অক্টোবর ২০২৩ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানিসমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুতের এলিট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলো। অনুষ্ঠানে ডিজিটালি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন রাশিয়ান ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং আইএইএ মহাপরিচালক।

বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরাপত্তা সর্বোচ্চ নিশ্চিত করার জন্য প্ল্যান্টের অত্যাধুনিক ডিজাইন, নির্মাণকালে সর্বোচ্চ সতর্কতার পাশপাশি ইনার-আউটার কন্টেনমেন্টসহ কোর ক্যাচার সংযোজন করা হয়েছে। ১ হাজার মেধাবী বাংলাদেশি কারিগরি জনবলকে রাশিয়ায় প্রশিক্ষিত করে প্ল্যানটি নিরাপদ পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রথমবার আইন পরিবর্তন করে রাশিয়া ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম নির্দিষ্ট বিরাট ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে। 

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে কোনো অবস্থায় তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার কোনো স্বভাবনা নেই। শূন্য থেকে শুরু করা এই প্রকল্পে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় যারা সন্দেহের চোখে দেখছেন, তাদের একই ধরনের প্ল্যান্ট উন্নয়নশীল দেশের প্রকল্প বিষয়ে অনুসন্ধানের অনুরোধ করছি। ভারতের যে প্ল্যান্টের তুলনা করা হয়, সেটি পরিবেশ পরিস্থিতি বিচারে কোনোভাবেই রূপপুর প্ল্যান্টের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না।

এখন প্রশ্ন হলো, এতো দিনেও কেন বিদ্যুৎ সঞ্চালন সুবিধাদি নির্মাণ শেষ হলো না। ২০২৪ শেষ থেকে প্ল্যান্ট বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু সঞ্চালন সুবিধাদি কোনোভাবেই ২০২৬ আগে প্রস্তুত থাকবে না। সবকিছু মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং আরএনপিপি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। 

এদিকে প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী জানা যায়, রাশিয়ান সফট লোন এবং রাশিয়ান স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন রোসাটমের প্রযুক্তি সহায়তায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রতিটি ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রকল্পের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে। রাশিয়ান ফেডারেশনের পারমাণবিক জ্বালানি সরঞ্জাম ও পরিষেবা এবং রোসাটমের অন্যতম অংশীদার সংস্থা অ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট এ প্রকল্পের সাধারণ ঠিকাদার। কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের প্রথমদিকে এ প্ল্যান্টের উৎপাদন শুরু করার পরিকল্পনা করছে।

কনস্ট্রাকশন অব রূপপুর এনপিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শওকত আকবর জানান, ইতিমধ্যে ১ম ইউনিটের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ২য় ইউনিটের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সাধারণ চুক্তি অনুযায়ী, রোসাটম প্রথম তিন বছরের অপারেশনের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করবে। শওকত আকবর আরো বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিক্রেতা দেশ বর্জ্য জ্বালানি ফেরত নেবে। তিনি বলেন, ভারত ও চীনের মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের জ্বালানি সংমিশ্রণের তুলনা করুন।

এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না প্ল্যান অনুসারে, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশকে ২০৩০ ও ২০৪১ সালের লক্ষ্য অনুযায়ী কার্বন নিঃসরণ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

শেয়ার করুন