২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৫৪:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


কিবরিয়ার দাফন সম্পন্ন :পাওয়া গেল আত্মীয়-স্বজন
বাসায় পড়েছিলো লাশ :দুর্গন্ধের পর উদ্ধার :মর্গে ৬ মাস
দেশ রিপোর্ট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০১-২০২৩
বাসায় পড়েছিলো লাশ  :দুর্গন্ধের পর উদ্ধার :মর্গে ৬ মাস


আমেরিকার মতো আধুনিক দেশেও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে। মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। হৃদয়স্পর্শী ঘটনা ঘটে। আমেরিকার মতো দেশে একটি লাশ ৬ মাস মর্গে পড়ে থাকবে- এটা কেউ বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে নিউইয়র্কের একটি মর্গে বাংলাদেশি গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের লাশ পড়ে ছিলো। তবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তার নামকে কেন্দ্র করেই। নামের কারণেই তার আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে বের করতে কঠিন হয়ে পড়ে। গোলাম মাহমুদ কিবরিয়ার সাথের তার আত্মীয়-স্বজনদের দূরত্ব সৃষ্টির একমাত্র কারণ ছিলো নেশা। জানা গেছে, গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ নাকি সারাক্ষণ নেশায় বুধ হয়ে থাকতেন। অ্যালকোহলিক গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ যে কারণে সব ভাইবোনের অপছন্দের কারণ ছিলেন। বোনদের বাসায় আসলেও খাওয়া-দাওয়া করতেন, কিন্তু কেউ রাখতে চাইতেন না। একজন নেশাখোরকে কেউ পছন্দ করতেন না। কারণ সবারই বাসায় স্বামী-সন্তান থাকতেন। নেশাখোরের যেন ছায়া না পড়ে অন্য কারো ওপর। যে কারণে অভিমান করে চলে যান অন্যত্র। কারো সাথে রাখেননি যোগাযোগ। এমন অভিমান করলেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময়ও পাশে ছিলো না কেউ। দুর্ভাগ্য গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের। ছিলো স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবার-পরিজন। ছিলো সুন্দর সংসার। নতুন জীবনের আশায় স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেছিলেন, কিন্তু তার সেই স্বপ্নও ফিকে হয়ে যায়। অ্যালকোহল তার সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেয়। অসহায়ের মতো মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। সেই মৃত্যুও ছিলো যন্ত্রণার। মৃত্যুর পরও তার স্বস্তি ছিলো না, মৃতদেহ ৬ মাস মর্গে পড়েছিলো।

গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের মৃতদেহ উদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ, নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মাহমুদ, ড্রামের অর্গানাইজিং ডিরেক্টর কাজী ফৌজিয়া, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া। তবে সবার আগে ক্রেডিট দিতে হয় নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল নাজমুল হাসান। নাজমুল হাসানের সাথে প্রথমে যোগাযোগ করেন এনওয়াইসি অফিস অব চিফ মেডিকেল এক্সামিনার অ্যামা ক্যানা। তিনি গত ১১ জানুয়ারি ডেপুটি কনসাল জেনারেলকে ই-মেইল দেন। ডেপুটি কনসাল জেনারেল যোগাযোগ করেন সাংবাদিক সোহেল মাহমুদের সাথে। তিনি সোহেল মাহমুদকে বলেন, আমি একটি লাশের বিষয়ে সমস্যা আছি। ডেপুটি কনসাল জেনারেল সাংবাদিক সোহেল মাহমুদকে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। সোহেল মাহমুদ ডেপুটি কনসাল জেনারেলের কাছ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেন। পোস্টটি শিরোনাম ছিলো- একজন বাংলাদেশির লাশ নিয়ে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ বিপাকে। বিষয়টি জানান, আব্দুর রব মিয়া এবং কাজী ফৌজিয়াকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেখে বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থানরত বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু সোহেল মাহমুদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং লাশ দাফন করা পর্যন্ত তিনি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন। অফিসিয়াল সমস্ত কাজ করেছেন জাহিদ মিন্টু এবং জায়গায় জায়গায় গিয়ে ক্লু বের করার চেষ্টা করেন সোহেল মাহমুদ। প্রথমে ঠিকানা বের করে সোহেল মাহমুদ এবং বাবু গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ ৩৩ লিটল নাসও স্টেট, ২০৮ ব্রæকলিনের সেন্টারে যান। সেখানে গিয়ে তারা সেন্টাওে ঢোকার উপায় খুঁজতে থাকেন। একসময় একজন কৃষ্ণাঙ্গের সাথে কথা বলেন। সোহেল মাহমুদ তাকে পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। কৃষ্ণাঙ্গ লোকটি তাদের বলেন, আমিও এখানে থাকি। আপনারা এখন কেন এসেছেন? ওই লোকটি তো ৬ মাস আগে মারা গিয়েছে। আমার বিল্ডিং সুপারের শরণাপন্ন হই। বিল্ডিং সুপারভাইজর আমাদের গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের বাসায় নিয়ে যায়। তার বাসাটি ছিলো দ্বিতীয় তলার ২০৮ নম্বর রুম। এর মধ্যে ম্যানেজার আসে। ম্যানেজার আমাদের জানান, তার নাম গোলাম মাহমুদ। তিনি আমেরিকার সিটিজেন। আমরা কাগজপত্র যা ছিলো তা সংগ্রহ করি। আমাদের জানানো হয়, ৪ জুলাই ছিলো গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের জন্মদিন। সেদিন খুব বেশি ড্রিঙ্কস করেন। তার লাশের আশপাশে ছিলো বোতল আর বোতল। সোহেল মাহমুদকে জানানো হয়, গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ যে মারা যায়, তার প্রথম টের পায় ক্লিনার। কারণ লাশ পচে গন্ধ বের হচ্ছিলো। তখনই পুলিশে খবর দেয়া হয়। তার ডেথ সাটির্ফিকেটে উল্লেখ করা হয় তার তার মৃত্যু ১৪ জুলাই। ধারণা করা হচ্ছে তার লাশ বাসাতেই পড়েছিলো। পুলিশ এসে তার লাশ সেন্টার থেকে মর্গে নিয়ে যায়। ৬ মাস পর্যন্ত তার লাশ মর্গেই ছিলো। সোহেল মাহমুদ জানান, ম্যানেজারের কাছ থেকে কাগজ নিয়ে ডেপুটি কনসাল জেনারেলের কাছে যাই। ডেপুটি কনসালও জানালেও তিনি কোনো তথ্য পাননি। তার কাছে যে কাগজ রয়েছে তাতে তার নাম রয়েছে গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ। দুজনেরই জন্ম তারিখ ঠিক এবং ছবিও মিল রয়েছে। পুরো নাম দিয়ে সোহেল মাহমুদ আবারো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেন। তার সাথে কাজী ফৌজিয়াও পোস্ট দেন। এর মধ্যে সোহেল মাহমুদের পোস্ট দেখে দু’জন তাকে কল দেন এবং কিবরিয়া তাদের বন্ধু বলে জানান। এর মধ্যে আননোন কল থেকে সোহেল মাহমুদের ফোনে একটি কল আসে এবং তাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে জানানো হয় এটি তার বোনের নম্বর। কাজী ফৌজিয়াকে নম্বর দেন সোহেল মাহমুদ। গভীর রাতে ভুলবশত কাজী ফৌজিয়া কল দেন ওই নম্বরে। কথা বলতে বলতেই কাজী ফৌজিয়াকে নাহিদা আঞ্জুম জানান, আমি তো ড্রামের সদস্য এবং গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের বোন। কথা বলা শেষ করে পরদিন সোহেল মাহমুদ নাহিদা আঞ্জুমের বাসায় যান।

নাহিদা আঞ্জুম জানান, আমার ভাই বাংলাদেশ থেকেই অ্যালকোহলিক ছিলেন। এখানে এসে তার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। তিনি জানান, তার বড়ভাই তাদের সবার জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই গোলাম কিবরিয়া মাহমুহ ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারিতে আমেরিকায় আসেন। আমেরিকায় এসেই সাউথ ক্যারোলিনায় চলে যান কাজ নিয়ে। প্রায় এক বছরের মতো সেখানেই ছিলেন। তারপর আবার নিউইয়র্কে আসেন, কিন্তু এখানে স্থায়ী ছিলেন না। কাজের সন্ধানে তিনি কানেকটিকাট, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া এবং ফ্লোরিডায়ও গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কিবরিয়া আমার তিন বছরের বড়। যে কারণে আমার সাথেই বেশি কথা শেয়ার করতো এবং মাঝেমধ্যে আমার বাসায় আসতো। কিন্তু খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা না হলেও থাকার সমস্যা হতো। সে যেহেতু সারাক্ষণ ড্রাঙ্কস থাকতো তাই তাকে কেউ বাসায় রাখতো না। আমরা চার বোন এবং এক ভাই এখানে। আমরা সবাই চেষ্টা করেছি তাকে ভালো করতে। কিন্তু অভিমান করে চলে গেল। নাহিদা আরো জানান, বাংলাদেশে থাকতে সে বেক্সিমকোতে চাকরি করতো। একসময় তার চাকরি চলে যায়। তখন সে ব্যবসা করার চেষ্টা করে। সে ছিলো খুবই ব্রেনি। একসময় সে পটুয়াখালী টেক্সটাইলের ভকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ছিলো। সেখানেই ভাবীর সাথে পরিচয় এবং তাদের মধ্যে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে একটি সন্তানও রয়েছে। যে সন্তানের জন্ম ২০০১ সালে। এরই মধ্যে তাদের সংসার ভেঙে যায়। আমার বড়ভাই তাদের সবার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ভাবী এবং তার ছেলে আসেননি। ভাবী এবং তার সন্তান এখন বাংলাদেশে রয়েছেন। সংসার ভাঙার পরই কিবরিয়া হতাশায় পড়েন এবং অ্যালকোহলিক হয়ে পড়েন। আমেরিয়ায় এসেও আরো বেশি অ্যালকোহলিক হয়ে পড়েন। তিনি সবসময় ড্রাঙ্কস থাকতেন। একসময় তার লিভার সমস্যা দেখা দেয়, অপারেশনও হয়। নাহিদা আঞ্জুম আরো জানান, ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর থেকে তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না। সে কোথায় আছে কেন আছে আমরা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে ফোন নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলে। তাকে কীভাবে খুঁজবো আমাদের জানা ছিলো না। আল্লাহকে বলেছি, আল্লাহ যেন আমার ভাইয়ের সন্ধান দেয়। রাস্তায় বের হলে তাকিয়ে দেখতাম, যদি আমার ভাইকে দেখা যায়। আমরা তো তাকে ভালো করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে অভিমান করে এভাবে চলে যাবে তা ভাবতেও পারিনি। নাহিদা আঞ্জুম সোহেল মাহমুদকে ধন্যবাদ জানান তার ভাইেেক খুঁজে বের করার জন্য।

সোহেল মাহমুদ জানান, গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ প্রথমে ব্রঙ্কসের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন। তারপর তাকে ব্রæকলিনের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে তার লাশ পাওয়া যায়।

গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের আত্মীয়-স্বজনকে খুঁজে পাওয়ার পর তার লাশ দেয়া হয় এবং তার নামাজে জানাজা গত ১৫ জানুয়ারি বাদ জোহর ব্রæকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় তার বড়ভাই এবং তিন বোন অংশগ্রহণ করেন। তার বড়ভাই জানান, কিবরিয়ার অভিমান ছিলো বেশি। নামাজে জানাজা শেষে তাকে নিউজার্সির মালবরো মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়। উল্লেখ্য, গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের দেশের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরায়।

সোহেল মাহমুদের পোস্ট

স্বপ্নের আমেরিকা!

হায় আমেরিকা!

৬ মাস ধরে একটা মানুষ হিমঘরে পড়েছিলো। ছয়টা মাস! মানবতার ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আমেরিকায় এ চিত্র। কেউ হয়তো বলবেন, এটা সাধারণ ঘটনা নয়। মানে, সাধারণত এমন ঘটনা ঘটে না আমেরিকায়। হয়তো ঘটে না। কিন্তু এই একটা ঘটনায় কী দেখলাম? এটা কি অবহেলা নয়?

গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের মরদেহ পাওয়া গেছে ১৪ জুলাই ২০২২ খ্রিস্টাব্দে। ঠিক ৬ মাস আগে। ধারণা করা হয়, এর কয়েকদিন আগে তার মৃত্যু হয়েছে। নিজের বাসায়। এক কক্ষের সে বাসায় তিনি একা থাকছিলেন এবং সেটি ছিলো সিটির একটা আশ্রয়কেন্দ্র।

গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের মরদেহ ৬ মাস ধরে সিটির হিমঘরে কেন ছিলো? একজন মার্কিন নাগরিক হবার পরও কি তার পরিচয়-বৃত্তান্ত খুঁজে বের করা সিটির জন্য কঠিন কোন কাজ ছিলো? যে আশ্রয়কেন্দ্রে গোলাম কিবরিয়া মাহমুদ ছিলেন, সেটির ম্যানেজার জানিয়েছেন, ৩ মাস পর্যন্ত তার ব্যবহারের জিনিসপত্র আর সাথে কিছু ডকুমেন্ট তারা সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন। এরপর সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়। সেখানে সবুজ রঙের একটা পাসপোর্টও ছিলো বলে জানায় আশ্রয়কেন্দ্রের ক্লিনার। এর মানে গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের পরিচয় বের করার মতো তথ্য আশ্রয়কেন্দ্রেই ছিলো। সিটির চিকিৎসা বিভাগ কিংবা পুলিশ বিভাগ সেগুলো কি সংগ্রহে নেয়নি? নিলে তারা গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের পরিচয় উদ্ধারে কিংবা তার পরিবার-পরিজনকে খুঁজে পেতে চেষ্টায় ৬ মাস ব্যয় করলো কেন?

নিউইয়র্ক সিটিতে এর আগে দুই বাঙালি তরুণের পরিচয় উদ্ধারে কাজ করেছিলাম। এর একজন ৬-৭ দিন ধরে হাসপাতালে অজ্ঞাতনামা হিসেবে পড়ে ছিলেন। আরেকজন ১৩ দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন, তাকে পরে পাওয়া গেছে হাসপাতালে। তাদের পরিচয় উদ্ধারেও পুলিশের কর্মতৎপরতা তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিলো। সেই তরুণদ্বয়ের পরিচয় উদ্ধারে যতো যোগসূত্র মিলেছিলো, গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের বেলায় এর চেয়ে বহু ভালো অবস্থা ছিলো। তার গ্রিনকার্ডের ফটোকপি ছিলো। সবুজ একটা পাসপোর্ট ছিলো, সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ড ছিলো। একটা সচল মোবাইল ফোন ছিলো। ছবি ছিলো। এতোকিছুর পরও আমেরিকার মতো দেশে একটা মানুষের পরিচিতি পেতে ৬ মাস লেগে গেলো নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের? তাও সেটি তাদের দ্বারা নয়।

সিটি কর্তৃপক্ষ যে কাজ ৬ মাসে করতে পারেনি, মাত্র কয়েক ঘণ্টায় সেটা করে দেখিয়েছি আমরা। আমরা মানে জনগণ। কর্তৃপক্ষ নয়। কর্তৃপক্ষ তাহলে কী করেছে? ওনারা হিমঘরের জায়গা খালি করেছে। রুটিন ওয়ার্ক। নাগরিকের সেবায় মত্ত হয়নি তারা।

গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের বাংলাদেশি পরিচয়টা জানতো সিটি। আরো আরো তথ্য ছিলো তাদের কাছে। সেটা বোঝা গেছে সিটির চিফ মেডিকেল এক্সামিনারের ইমেইল দেখে। তিনি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যে ই-মেইলটি পাঠিয়েছেন, তাতে কিছু তথ্য দেয়া। আচ্ছা, এই ই-মেইল দিতে তাদের ৬ মাস লাগলো কেন? হিমঘরের জায়গা খালি করা, তাই না? মানবিকতা কিংবা কর্তব্য নয়।

পুরো অবস্থা দেখে আমার মনে হয়েছে, এই অবহেলার অবসান হওয়া উচিত। গোলাম কিবরিয়া মাহমুদের পরিবারের উচিত হবে প্রতিকার চাওয়া।

শেয়ার করুন