২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:১১:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আ.লীগ ভয় পাচ্ছে কী?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আ.লীগ ভয় পাচ্ছে কী?


বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বিশেষত প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি চাপ অব্যাহত রয়েছে। আর বিএনপি গো ধরে আছে তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। সরকার মনে করে তাদের অব্যাহত উন্নয়নের কারণে জনগণ তাদের সাথে রয়েছে। তাহলে যদি সত্যিকারের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জনগণ অবাধ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে বর্তমান সরকারি দলের আপত্তি কোথায়? 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতায় সুস্পষ্ট প্রতীয়মান বর্তমান সরকারের অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো মহল আস্থা রাখতে পারছে না। সরকার তিন টার্মে ১৫ বছর ক্ষমতায় থেকে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে সন্দেহ নেই। তবে একই সঙ্গে সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের অনিয়ন্ত্রিত লুটপাটের কারণে অর্থনীতি এখন মারাত্মক সংকটে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোতে তারল্য সংকট, মুদ্রাস্ফীতি সংকটজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অগ্নিমূল্য সরকার সামাল দিতে পারছে না। সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে আছে। সরকারের উদাসীনতার কারণে সরকার ঘনিষ্ঠ মহল কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সম্প্রতি ঘোষিত এবং প্রয়োগকৃত মার্কিন ভিসানীতি অনেকের মনেই ভীতি জাগিয়েছে যে এই মুহূর্তে অবাধ নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সরকারি দল জয় লাভ না-ও করতে পারে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ক্ষমতাশীল আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ছাড়া দেশ পরিচালনার মত তৃতীয় কোনো দল নেই। তাই বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো নির্বাচন কোনো মহলেই বিশ্বাস যোগ্যতা পাবে না এটি সরকার-ঘনিষ্ঠ সবাই জানে। এমতাবস্তায় যদি সরকারি দল এবং বিএনপি যদি নিজ নিজ অবস্থানে গো ধরে বসেই থাকে, তাহলে সংকট ঘনীভূত হয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তখন তৃতীয় পক্ষ ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করলে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। 

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতিতে এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল। বাংলাদেশের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি কিন্তু সংকটের পথে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স কমছে, রফতানি আয় নিম্নমুখী। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো দুই মাসের আমদানি সামাল দেওয়া ও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ না থাকার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। জ্বালানিনিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে। এখনই প্রাথমিক জ্বালানি আমদানি সংকটে পড়েছে। পেট্রোবাংলা, বিপিসি, পিডিবির মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হওয়ার পথে। অচিরেই মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য নেওয়া বিদেশি ঋত সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। আগামী সরকারের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েই আছে।

সরকারের প্রচার দুর্বলতার জন্য মেগা প্রকল্পগুলোর আর্থিক এবং সামাজিক প্রভাব বিষয়ে সাধারণ জনগণ সঠিকভাবে অবহিত হচ্ছে। সরকার মূলধারার শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকদের আড়ালে রেখে কিছু প্রান্তিক নেতাদের দিয়ে বিদেশি মহলের সঙ্গে আলোচনা করছে। মাঝেমধ্যে দুই-একজন মন্ত্রী বেসামাল কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। বাতাসে অনেক গুজব। জরুরি অবস্থা নিয়ে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, মার্কিন ঝড় কত কিছু।  

সরকার যদি তাদের জনঘনিষ্ঠতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকে, তাহলে সত্যিকার ‘নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন’ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অনীহা কেন? তাহলে কি সরকার জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। সরকার কিন্তু একটা নির্বাচন করে ফেলতে পারবে।  বিরোধীদলের জনঘনিষ্ঠতা নেই যে, রাজপথের অহিংস বা সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে ভবিষ্যৎ কোনো ধরনের সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। এমতাবস্তায় সরকারি দল এবং বিরোধীদল দেশের স্বার্থে আলোচনা করে একটি সর্বসম্মত নির্বাচনী সরকার বিষয়ে সম্মত হওয়া অতিশয় জরুরি। সময় কিন্তু হাতে অত্যন্ত সীমিত।

শেয়ার করুন