০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৭:১২:২৮ পূর্বাহ্ন


কুমিল্লায় জিতলো আওয়ামী লীগ হারলো ইসি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
কুমিল্লায় জিতলো আওয়ামী লীগ হারলো ইসি


 কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (কুসিক) সম্পন্ন হওয়ার এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও ঘুরেফিরে আলোচনায় আসছে এতে আসলে জিতেছে কে? এনির্বাচনের পরও কি বিএনপি তাদের শরিকদের মন পাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)? নাকি এই সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে দল ও এর শরিকরা আরো শক্ত হবে,অনড় থাকবে। 

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন (কুসিক) ছিল নতুন কমিশনের অধীনে প্রথম বড় কোন ভোট। এবার ভোট হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না প্রশ্নবিদ্ধ সে ব্যাপারে নজর ছিল দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে। আর এজন্য এই ভোটে সব দলের অংশগ্রহণ চেয়েছিল ইসি।

তবে এতে প্রথমেই একধরনের হোচট খেয়েছে ইসি। কারণ দলীয়ভাবে বিএনপি এতে অংশ নেয়নি,যা নয়া ইসির জন্য ছিল এক ধরনের বিব্রতকর। কেননা দলের সাথে বিদ্রোহ করে পরে বহিষ্কার হয়েছেন নির্বাচনে অংশ নেয়া মনিরুল হক সাক্কুসহ ও নিজাম উদ্দিন কায়সার এবং অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার। 

এতে করে নির্ধারিত হয়ে যায় যে বিএনপি ছাড়াই হচ্ছে কুসিক নির্বাচন। এতো কিছুর পরও  আইন করে গঠিত ইসির নির্বাচনটি বড় ধরনের আলোচনা স্থান পায়। অন্যদিকে এতে বিএনপিঅংশ না নিলেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও নয়া ইসির ভূমিকায় চোখ রাখে তারা এমনকি পুরো দেশবাসী। এই সিটি করপোরেশন গঠনের পর থেকে মেয়র পদে ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। তবে সব খেলা শেষে নগরপিতা হন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত।

আর অন্যদিকে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৬ জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৪ জন, বিএনপির ৩ জন, জামায়াতে ইসলামীর ২ জন ও স্বতন্ত্র ২ জন জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের পাঁচজন, বিএনপির দু’জন ও স্বতন্ত্র দু’জন।

আলোচনা সমালোচনা 

এনির্বাচন সম্পন্ন হওয়া ও ফলাফল ঘোষণার সপ্তাহ পার গলে গেলেও আলোচনা সমালোচনা থেমে নেই। দেশের একটি বহুল প্রচারিত শক্তিশালী দৈনিকের সম্পাদকীয়তেও ফুটে উঠেছে এনির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের মন্তব্য। কুমিল্লা সিটি নির্বাচন,অনেক প্রশ্নের জবাব অজানাই থেকে গেল শীর্ষক এমন সম্পাদকীয়তে  নির্বাচনের ভোটগ্রহণ পর্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে বলা হয়। আরো বলা হয়,  এর আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারও নির্বিঘ্নে চালিয়েছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। 

প্রশংসা করে বলা হয়, শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, সেসব বিষয়েও বড় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কমিশন ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তি পূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুরসংখ্যক সদস্য মোতায়েনের পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসায়। এমনকি যে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক ও সন্দেহ আছে, সেই ইভিএম ব্যবহারেও নির্বাচন কমিশন বেশ সতর্ক ছিল।

যদিও কোথাও কোথাও বয়স্ক ভোটাররা অসুবিধায় পড়েছেন। কিন্তু শেষতক এ সম্পাদকীয়তে বলা হয় কথায় বলে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ‘শেষ ভালোটা’ দেখাতে পারলো এ কথা বলা যাবে না। সম্পাদকীয়তে লেখা হয় নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আছে, সুষ্ঠু ভোট হওয়া সত্ত্বেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। অনেক প্রশ্নের জবাব অজানাই থেকে গেল।

এব্যাপারে নানান হিসাব বিশ্লেষণ আর ক্যালকুলেশন তুলে ধরে মন্তব্য ছিল নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব আছে, সুষ্ঠু ভোট হওয়া সত্ত্বেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বলা হয়,‘অনেক প্রশ্নের জবাব অজানাই থেকে গেল’।

আসলেই কি অজানাই থেকে গেল?

দেশের আরো অনেক গণমাধ্যমেও এনির্বাচন নিয়ে নানান ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরও আলোচনা সমালোচনা কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। সমালোচনা কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না। আলোচনা একটাই-কী ঘটেছিল সেদিন? বলা হচ্ছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কে ফোন করেছিল? তিনি কেন হঠাৎ ফল ঘোষণা বন্ধ রাখলেন? বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন? কার সঙ্গে কথা বলেছেন? তিনি কি আসলেই চাপের মুখে পড়েছিলেন? যদিও তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী ফলাফল ঘোষণার পরে গণমাধ্যমে বলেছেন, ফল পরিবর্তনের প্রশ্নই আসে না। ওই চার কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই ফল ঘোষণা করেছেন। তাদের দেয়া ফলই আমি ঘোষণা করেছি। নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা অসত্য। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে অল্প ভোটে পরাজিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কুই বা কেন এতো নিশ্চিত যে কারচুপি হয়েছে?

গত দুইবারের এই মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, তাকে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করে পরাজিত দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে কেনইবা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিটি করপোরেশন নির্বাচন চলাকালীন সময় এলাকায় থাকা কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে নিয়ে গণমাধ্যমে কোনো মন্তব্য করতে চাননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি এব্যাপারে তার ব্যর্থতার দায়ভার না নিয়ে দেদার কি করে বলে ফেললেন, ‘এটি আমার দৃষ্টিতে পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করবো না।’

অথচ এর আগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ এনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনকে যে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল, তা তিনি অমান্যই করেননি। বরং সাহসের সাথে নির্বাচন কমিশনের চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। এতের ইসির ভাষার শিষ্টাচার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ভোটের দিন তাঁর এধরনের চ্যালেঞ্জে ভোটারদের পাশাপাশি প্রশাসনের মনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে কেউ মনে করেন। এতে কমিশন তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যে অপরাগ তা ফুটে ওঠে যা কি-না প্রশাসনের ওপর একধরনের প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠেছে কেনইবা সিইসির নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারলেন না?  

এতে করে কি কুমিল্লাবাসীর পাশাপশি নগর প্রশাসনে মধ্যে এ ধারণাবদ্ধমূল হয়নি যে কমিশনের চেয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যই ক্ষমতাবান?  অনেকে বলেছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে যে ১৪ জন মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে আরফানুলকে প্রার্থী ঘোষণার পর অপর ১৩ জনকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। যদিও এই ১৩ জনকে নিয়ে ঢাকায় বৈঠকও করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আর তাঁদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামতে বলা হয়। কিন্তু কাজে অসেনি। আর এজন্য দলের এতো গোলমাল সাংগঠনিক অবস্থায় রিফাতের জয়লাভটা অনেকের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর এজন্যই কি স্থানীয় সংসদ সদস্য নিজের অবস্থানে শক্ত থেকেছেন? 

কারণ অনেকে মনে করেছেন এলাকার সংসদ সদস্য (বাহাউদ্দিন) এ নির্বাচনকে ব্যক্তিগত জয়-পরাজয় হিসেবে দেখছেন,সংগঠনের জয়-পরাজয় তাঁর কাছে গৌণ। আবার অনেক প্রশ্নের মধ্যে আরেকটি হলো ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টিতে ৬০০ ভোটে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর হঠাৎ করে বাকি চারটিতে ৩৪৩ ভোটে পিছিয়ে পড়ার তত্ত্ব, যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি অনেকের কাছে। 

ইসির টনক নড়া

এদিকেকুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে শেষ কয়েক মিনিট নিয়ে বির্তকের ঢেউ যখন দেশে বিদেশে আলোড়ন তোলে তখন ইসির ঠাহর হয়েছে। এব্যাপারে তারা মুখ খুলতে হয়েছে শেষমেশ। অবস্থা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, ইসিকে তা আত্মপক্ষ সমর্থন করে একটি বিবৃতিও ইস্যু করতে হয়েছে। এতে তারা তাদের পক্ষ থেকে যা যা বলার চেষ্টা করেছে। বলা হয়েছে ফলাফল ঘোষণার শেষ কয়েক মিনিটের ঘটনা প্রসঙ্গে। তবে বিবৃতিতে উঠে আসেনি শেষ মূহূর্তে কোন বিশেষ ব্যক্তির ফোন পেয়ে তিনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার নামে অনেকক্ষণ দেরি করলেন। 

এতে বলা হয় কোনো কোনো (সকল নয়) পত্র-পত্রিকার নিবন্ধ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বক্তারা এই সময়কে এক বা দেড় ঘণ্টার বিলম্ব বলে রহস্য, অঘটন ইত্যাদি ইঙ্গিত করার চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি মোটেই তা ছিল না। ইসির ভাষায় বিরাজিত অবস্থায় চূড়ান্ত ফল প্রকাশে উল্লিখিত কারণে কম-বেশি ১৫ থেকে ২০ মিনিট দেরি হয়েছিল।’ কেনো রিটার্নিং অফিসার নির্বিঘ্নে চূড়ান্ত  ফলপ্রকাশে দেরি করেছেন তা তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা বলা হয় ইসির পক্ষ থেকে।

 নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যায় বলা হয়, ‘মাত্র ৩৪৩ ভোটে পরাজিত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে জনৈক ব্যক্তি ফলাফল ঘোষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে এক টেলিফোন কলে ফলাফল পাল্টে দেয়া হয়েছে মর্মে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে অনাকাক্সিক্ষত বিতর্ক সৃষ্টির অপপ্রয়াস হয়েছে। ফলাফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে ইভিএমে ধারণকৃত ফলাফল পাল্টে দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০৫টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রেই ঘোষণা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রভিত্তিক ইভিএম থেকে মুদ্রিত ফলাফল এবং প্রার্থীদের এজেন্ট এবং প্রিসাইডিং অফিসারদের স্বাক্ষরিত ফলাফলের সকল কপি প্রার্থীদের এজেন্টদের সরবরাহ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রিসাইডিং অফিসার নিজে রিটার্নিং অফিসারের নিকট এসে একটি কপি সরবরাহ করেন। রিটার্নিং অফিসার একত্র করে ফলাফল ঘোষণা করেন। 

শেষ কথা রিফাতের জয়, প্রশ্নের মুখে ইসি

এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপ শুরু হয়ে গেলেও এতে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। ইতোমধ্যে শুরু হওয়া ইসির মতবিনিময় ইভিএম নিয়ে সন্দেহের কথা জানাল জাপাসহ আটটি দল। এদিকে দলের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায় শুধু কুমিল্লার জন্য নয় এমনিতেই বিএনপিসহ তার নতুন-পুরোনো শরিকরা ইসির সাথে কোনো ধরনের আলোচনায় যাবে না। 

এব্যাপারে তাদের বক্তব্য হচ্ছে কুমিল্লায় যা হবার তা-ই হয়েছে। মাঝে একটু খেলা দেখানো হলো আর কি? তাদের মতে,কুমিল্লায় যদি একটু ভালো ভূমিকা রাখতো তাহলে ইসির সংলাপে যাওয়া নিয়ে নাগরিক সমাজসহ জনসাধারণের এক ধরনের চাপ থাকতো বিএনপির প্রতি।

 কিন্তু তা আর রইলো না নয়া ইসিরভূমিকায়। তাদের মতে,তারাতো শুধু ইসি না এসরকারকেই ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে যেতে যায় না। তাছাড়া নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন যেখানে একজন এমপিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সেখানে জাতীয় নির্বাচনের সময় পুরো সরকারকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? তা নিয়েও কথা উঠেছে। এখানে সর্বমহল থেকে একটি প্রশ্ন উঠেছে কুসিক নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণার শেষ মুহূর্তে  আসলে কে ফোন করেছিল? 

তাহলে এমন ফোনে কি ইভিএমের ফলাফলই পাল্টে গেলো। তাই এখন একথাও বলা হচ্ছে শেষমেশ আসলে ইভিএমেরই বা নিয়ন্ত্রণ কার কাছে থাকবে যখন পুরো জাতি একটা বড় নির্বাচনে আয়োজনে জড়িয়ে পড়বে। আসলে সার্বিকভাবে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কুসিক নির্বাচনে আসলে আরফানুল হক রিফাতের জয় হয়েছে আর হেরে গিয়ে বিশাল প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দক্ষ ও বিচক্ষণ আমলা প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল ও নতুন আইনে গড়া ইসি। অভিযোগের খাতায় নাম উঠে গেছে ইভিএমের। কারণ হিসেবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এবং এসআইপিজির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো (এনএসইউ) তার এক নিবন্ধেও উল্লেখ করেছেন  সদ্য সমাপ্ত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে।

তিনি একটি বহুল প্রচারিত দৈনিকে লিখেন এইভাবে যে  প্রশ্ন থাকে, ফলাফলে কারচুপি হয়েছে, এটা প্রমাণ করতে হলে পুনর্গণনা করতে হবে, যা ইভিএম পদ্ধতিতে লিখিত রেজাল্ট জালিয়াতি ছাড়া প্রমাণ করা যাবে না। কারণ, ‘অডিট ট্রেইল’ নেই। এটাই এই ইভিএমের সবচেয়ে বড় খুঁত। ‘অডিট ট্রেইল’ ছাড়া ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। এখানে যদি নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা আইন (সিটি করপোরেশন) ধারা ২০(খ) অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থীর কাছে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের ফরম ধারা ২০(গ) মোতাবেক দিয়ে থাকে, তবে প্রার্থী সহজেই কথিত জালিয়াতি হয়েছে কি না, নিশ্চিত হতে পারবেন।  অন্যথায় শুধু ইভিএম হয়তো সে সম্ভাবনা সঙ্কুুচিত করবে।

তবে ভবিষ্যতের নির্বাচনগুলোতে ইভিএমের ব্যবহার বিতর্কিত থাকবে ‘পেপার অডিট ট্রেইল’ না সংযোজন করলে। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন এপরও কথা থাকে যে, ইসি তি তার নিজস্ব ক্ষমতাও কি পুরোপুরি খাটাতে পারেন? তা যদি পারতেন তাহলে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারকে ইসি যা করতে বলেছিলেন তা বাস্তবায়ন হয়নি, বা তারা পারেনি। 

কারণ বলাই আছে যে, যদি নির্বাচন কমিশনের হাতে বিধির ধারা না-ও থাকতো, তবে সংবিধানের ১১৯ ধারা অনুযায়ী চিঠি এবং সিদ্ধান্তই যথেষ্ট। অন্যদিকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন সরকারের ইমেজেরও বিরাট ক্ষতি হয়েছে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনকালীন সময়ের ভূমিকার কারণে। সেদিন যদি ইসির নির্দেশ মেনে নিতেন আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার তাহলে তার এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ইমেজ আরো উজ্জ্বল হতো। কেউ কেউ মনে করেন ইসির নির্দেশের প্রতি সন্মান না দেখিয়ে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার নিজকে ও ক্ষমতাসীন সরকার, ইসিসহ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


শেয়ার করুন