নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ব্যাপক পরিচিত, সিলেটের সেন্ট্রাল ফার্মেসি পরিবারখ্যাত পরিবারের তরুণী দেবপ্রীতা দে (ব্রতী) অকালে ঝরে গেছে। মাত্র ১৮ বছরের বয়সের এ তরুণী গত ২৮ জানুয়ারি রোববার ভোর রাতে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সাউদার্ন স্টেট পার্ক হাইওয়েতে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারায়। ‘সেন্ট্রাল ফার্মেসি’ পরিবারের পরিচিত মুখ দেবাশীষ দে বাসু এবং ভার্শতি দে দম্পতির কনিষ্ঠা কন্যা দেবপ্রীতা দে। পরিবারের সবাই তাকে ব্রতী নামে ডাকতো। তিন বোনের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।
পুলিশের দেওয়া বিবরণে জানা গেছে, সাউদার্ন স্টেট পার্ক হাইওয়ের এক্সিট ৩৫ মিস করার পর টার্ন নিতেই দুর্ঘটনা ঘটে। ইনফিনিটি গাড়ির আরোহী ছিলেন দেবপ্রীতা দে। তার বন্ধু জীবন লেইকেন (১৯) গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তারা লংআইল্যান্ডে বেড়াতে গিয়েছিল। ফেরার সময় ৩৫ এক্সজিট মিস করে সঙ্গে সঙ্গে টার্ন নেওয়ার সময় একটি জিপ গাড়ির সঙ্গে ইনফেনিটি গাড়ির ধাক্কা লাগলে গাড়িটি সড়ক পথ থেকে ছিটকে পড়ে গাছে ধাক্কা লাগে। ভোর পৌনে ছটার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইনফিনিটি গাড়ির উভয় যাত্রীকে মৃত অবস্থায় পায়। অপর গাড়ির চালককে আহত অবস্থায় নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার কোন কারণ জানা যায়নি। নিউইয়র্ক পুলিশের একাধিক বিভাগ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এ দুর্ঘটনা সম্পর্কে কেউ কোন তথ্য জানলে পুলিশকে জানানোর জন্যও এক বিজ্ঞপ্তিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
বরো অব ম্যানহাটন কমিউনিটি কলেজের শিক্ষার্থী দেবপ্রীতা দে পরিবারের সঙ্গে কুইন্সের জ্যাকসন হাইটস এলাকার করোনায় বসবাস করতেন। দুর্ঘটনার সময়টিতে তার বাবা মা দেশে অবস্থান করছেন। রোববার বেলা দুইটার দিকে পুলিশ পরিবারের খোঁজ করে দেবপ্রীতার বোনকে মৃত্যুর সংবাদটি জানিয়েছে।
পুলিশ ও হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩০ জানুয়ারি নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার রাতেই এমিরেটসের ফ্লাইটে মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। দেবপ্রীতার কাকা সুব্রত দে গৌতম জানিয়েছেন তিনি সহ নিউইয়র্ক ও কানাডা থেকে পরিবারের লোকজন মরদেহ নিয়ে দেশে যাচ্ছেন। ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা পৌঁছে সেদিনেই মৃতদেহ সিলেটে নিয়ে যাওয়া হবে। পারিবারিক সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবারেই সিলেট শহরের চালিবন্দরে দেবপ্রীতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
দেশে থাকা দেবপ্রীতার বাবা-মাকে দুর্ঘটনার সংবাদ জানানো হয়েছে। শোকে মুহ্যমান বাসু দম্পতি ও পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য শহরের চৌহাট্টায় বন্ধু ও স্বজনরা ভিড় করছেন শোক, সমবেদনা জানানোর জন্য। নিউইয়র্কে দুর্ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে জড়িত পরিবারটির খোঁজখবর নিতে লোকজনকে ভিড় করতে দেখা গেছে। জনসমাজ সংগঠক ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চৌধুরী জানিয়েছেন, দেবপ্রীতার মরদেহ দেশে পৌঁছা পর্যন্ত সব আনুষ্ঠানিকতার তিনি খোঁজখবর রাখছেন। সে এই বছর ম্যানহাটন কমিউনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল এবং প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে।
দেবপ্রীতা দের মর্মান্তিক মৃত্যুতে নিউইয়র্কের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠক শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। লেখক সাংবাদিক ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, সংগঠক জুয়েল চৌধুরী, মইনুল হক হেলাল, মুকুল হক প্রমুখ।