০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৫:১৭ অপরাহ্ন


নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই বিশ্বনেতাদের দোহাই আ’লীগের
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৯-২০২৩
নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই বিশ্বনেতাদের দোহাই আ’লীগের


দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এখন বিশ্বনেতাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশংসা বক্তব্যের দোহাই দিচ্ছে। একদিকে তারা আন্দোলনরত বিএননিসহ পুরো জোটকে বোঝাতে চাইছে যে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্রগুলি ইতিবাচক। অন্যদিকে নিজের দলের হতাশ উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীদের বোঝাতে চাইছে বাইরের কোনো চাপ নেই। থাকলেও তা ম্যাসেজ হয়ে যাচ্ছে। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার শেষ নেই। কি হচ্ছে বা কি হতে যাচ্ছে-এনিয়ে ভাবনার শেষ নেই। এমন সব চিন্তা কাজ করছে তৃণমূল থেকে একোরে শীর্ষ পর্যায়েই। তারা অতীতে অনেক বিষয়ে আশাবাদী থাকলেও এখন দিনের পর দিন নানান ধরনের টেনশনে আছে। কেননা খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই ওবায়দুল কাদেরই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, জনগণ শঙ্কায় আছে, না জানি বিএনপি কখন কী দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে।

কে কি বলছেন..

কিন্তু ক্ষমতাসীনরা আশঙ্কা কথা বাদ দিয়ে নেতাকর্মীদের আশার বাণী শোনাচ্ছেন। এখন দেখা যাক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কে কি বলছেন বা বলে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একেবারে শীর্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে বহিঃবিশ্ব বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের একেবারে কব্জায়। সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ থেকে একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে। এতে বলা হয় যে, ‘ফ্রান্স সরকার জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা উঠে আসে। এতে আরো দাবি করা হয়  ‘ফ্রান্স সরকার জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি দেশের আপামর জনগণকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত ও গর্বিত করেছে। সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অসাধারণ যোগ্যতা ও দক্ষতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্ব নেতাদের সম্মানসূচক অভিব্যক্তিতে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। এপ্রসঙ্গে বহুল আলোচিত একটি সেলফি প্রসঙ্গও উঠে আসে। এতে তিনি আরো তুলে ধরে বলেন, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁসহ বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের প্রশংসা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে কি এমন ঘটনা ঘটে গেলো যে হয়  ‘ফ্রান্স সরকার জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কর্মকান্ডে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ফেলেছে? আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কি ফ্রান্স খুব একটা মাথা ব্যাথা দেখিয়েছে যদিও আমেরিকার একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র এই দেশটি। তাছাড়া বাংলাদেশের দেশের জনগণ কি সমর্থন দিয়েই থাকে তাহলে ফ্রান্সের সার্পোটেই বা ইতবাচক সাপোর্টেরই বা প্রয়োজন হলো কেনো? কেনোই বা ভারতে জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তোলা সেলফি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে বলতে হচ্ছে ‘দিল্লির এক সেলফিতেই বিএনপির রাতের ঘুম হারাম, চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের আশা ভেঙে গেছে? প্রশ্ন হচ্ছে এক সেলফিতেই কি সব পাঠ চুকে যাবে?

কেন এমন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে..

নানান গুঞ্জন বাতাসে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মনে করেন বিএনপি’র সরকার বিরোধী আন্দোলন বা গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন দেশের একটি বিরাট অংশ সহানুভূতি দেখাচ্ছে বা সমর্থন দিচ্ছে। একিইভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এটাও মনে করে যে বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্ররা মাঠের অন্যতম বিরোধী দলের আন্দোলনে উৎসাহ যোগাচ্ছে, দেখাচ্ছে সহানুভূতি। আর একারণে আওয়ামী লীগে হতাশা যেমন আছে, আছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা। আর একারণেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অন্য নেতারা একসময়ে বলতেন, বিএনপি তাকিয়ে আছে আমেরিকার দিকে- কখন নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি দেবে তার আশায়। তাকাতে তাকাতে চোখের পাওয়ার কমে গেছে। এখন আর কিছু দেখতে পায় না। আর আওয়ামী লীগ তাকিয়ে আছে দেশের জনগণের দিকে। আবার কেউ কেউ এটাও বলেছেন বিএনপি বিদেশি প্রভুর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু এখন রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড়ই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় আছে কি হতে যাচ্ছে কিইবা হবে? কিছু হলেই বা কি হবে? আর এমন ভাবনা থেকেই এখন বাংলাদেশের বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রদের ইতিবাচক বক্তব্য মন্তব্য ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার করছে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা। উদ্বিগ্ন নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতেই আওয়ামী লীগ এখন বিদেশী বন্ধুদের যেকেনো বক্তব্যকে তুলে ধরছে-এমনটাই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন