২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৫৮:৫৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশকে রুহিন হোসেন প্রিন্স
নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভালো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১১-২০২৩
নির্দলীয় সরকার ছাড়া ভালো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই রুহিন হোসেন প্রিন্স


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, নির্দর্লীয় সরকার ছাড়া দেশে ভালো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। তাই যে তফসিল ঘোষণা করেছে তা বাতিল করতে হবে। সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চিতের জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রুহিন হোসেন প্রিন্স এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ 

দেশ: তফসিলের বিরুদ্ধে বামজোট হরতাল ডেকেছে। কিন্ত আপনাদের দলের পাশাপাশি আরো অন্য বিরোধী দল ছাড়াই সরকার দেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করে ফেলতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এঅবস্থায় আপনার মতামত কি?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: আমারা সর্বশেষ যে তথ্য পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে সরকার একতরফা এবং প্রহসনের নির্বাচনের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষাণা করেছে। আমরা দেখেছি দেশের অধিকাংশ ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল যারা দেশের রাজনীতিতে এবং দেশকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রয়েছে তারা এই তফসিল প্রত্যাখান করেছে এবং বিরোধীতাও করেছে। আমরাও মনে করি এই তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজনের জন্য। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহসহ বামপন্থীরা এধরনের প্রহসনে পা দেবে না। আমরা সরকারকে অনুরোধ জানাই তারা যেনো আরেকটি প্রহসনমূলক নির্বাচন আয়োজনের থেকে সরে আসে। তফসিল যেটা ঘোষণা করেছে তা বাতিল করুন। সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চিতের জন্য নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকার গঠনের জন্য আলোচনা শুরু করুন। এবং দ্রুততার সাথে তা সম্পন্ন করুন। নতুন করে তফসিল ঘোষণা করুন। সরকার যদি এই কাজটি তা না করে অর্থাৎ একতরফা নির্বাচন আয়োজনের যে ব্যবস্থা করেছে তা বাতিল না করা হয় তাহলে চলমান যে সংঘাত সংঘর্ষ এবং সঙ্কট চলছে যেটা কিনা জীবনযাত্রাকে অচল করে তুলেছে। আমাদের ধারণা এধরনের পরিস্থিতি আরো বেড়ে যাবে। যা দেশের ও তার জণগণের জন্য মোটেই কল্যাণকর হবে না। 

দেশ: বর্তমান সরকার অতীতেও বিশেষ করে ২০১৪ বা ২০১৮ সালেও নির্বাচন করেছে। তাদের জনসমর্থন না থাকলে কি এমন নির্বাচন করতে পারতো? আপনারাসহ অন্য বিরোধী দলের তেমন রাজনেতিক সাংগঠনিক শক্তি না থাকায় এটা সম্ভব হচ্ছে-বিষয়টা কি এমন না?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: না বিষয়টা ঠিক এমন না। জণসমর্থন থাকলেও সেটা যেভাবে প্রতিফলিত হওয়ার পরও স্বৈরশাসকরা তা মানে না বা মেনে নিতে চায় না। তারা তাদের ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র ব্যাবসায়ী মিলে অন্য এক গোত্রে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিতে তারাই কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা ভয়ের রাজনীতি কায়েম করে এবং স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করতে পারে। এরসরকার সেটাই করে যাচ্ছে। এটার পরিণতি ভবিষ্যতের জন্য মোটেই ভালো হবে না। এবং দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। ২০১৪ বাং ২০১৮ সালে এই একিই কায়দায় একতরফা নির্বাচন করে ফেললে সঙ্কট আরো গভীর হবে। অন্যদিকে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় সামনে দিনে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট থেয়ে আসছে- সুতরাং এমন পরিস্থিতি বা সঙ্কট উত্তরণে রাজনৈতিক ঐক্যমত থাকে- তাহলে সঙ্কট নিরসনে জাতিকে ঐকবদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটা ভূমিকা রাখতে পারবে। শুধু তা-ই না সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি আমেরিকাসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশ বাংলাদেশের ওপর যেভাবে খবরদারি করছে সেখানে চলমান বিভেদ শঙ্কা টিকে থাকে তখন এরা আধিপত্য বিস্তারে আরো সুযোগ পাবে। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে এবং একাজে সরকাকেই এগিয়ে আসতে হবে। এর বিকল্প পথ আছে বলে আমরা মনে হয় না।

দেশ: এক্ষেত্রে আপনারা বামপন্থীরা এবং এর পাশাপশি বাকি বিরোধী দলের কি ভূমিকা নেই? শুধু বারবার কেনো সরকারের ওপর দায় ফেলছেন?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: হ্যাঁ একটি দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে সবারই দায় দায়িত্ব আছে। কিন্তু যখন দেশে একটি প্রহসনের নির্বাচন হয়- তখন করণীয় পর্যায়ে উদ্যোগি ভূমিকা নিতে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হয়। সুতরাং সরকারের দায়দায়িত্বটা অনেকটাই প্রধান। সরকার তার দাযিত্ব পালন করলে সেক্ষেত্রে অন্যরা যার যার স্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবে। সরকার তা না করলে অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে তো লাভ হবে না। 

দেশ: কিন্তু সরকারের একেবারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে তারা দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা করার তা-ই করেছে বা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তারা কমিশন করে একটি নির্বাচন কমিশনও গঠন করেছে। বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান সংস্থা দেশকে তো বলে যাচ্ছে যে সরকার বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করবে- সেক্ষেত্রে..

রুহিন হোসেন প্রিন্স: না এটকে এভাবে বললে হবে না-আমাদের তিনটা কাজ করতে হবে। তিনটা কাজের মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশন হবে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। হতে হবে স্বাধীন স্বার্বভৌম। যা আসলে সকলের কাছে আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান বলে দৃশ্যমান হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে নির্বাচননের সময় যারা দায়িত্ব পালন করে বিশেষ করে আইন শৃংখলা বাহিনী থাকবে নিরপেক্ষ। এরা নির্বাচন কমিশনের অধীন্থ থেকেই কাজ করবে। অর্থ্যাৎ এরা সরকারের কোনো ধরনের কথা না শুনে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। সবশেষ হলো নির্বাচনী সংস্কৃতি এমনভাবে ঘরে উঠবে যেখানে হোন্ডা গুন্ডা মাস্তানি টাকার খেলা থাকবে না। এগুলি সেখানে প্রধান হবে না। এমন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই দেশে বলা যাবে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা রযেছে। যেখানে আসলে জনগণের অংশগ্রহণই প্রধান হবে। কিন্তু ৫২ বছরেও তো সেধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। এটা কোনো শাসক দলই করেনি। বর্তমানে নির্বাচন ইচ্ছা করলে বা তাদের আন্তরিকতা থাকলেও দলীয় সরকার থাকলে সেক্ষেত্রে তারা ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। 

দেশ: একারণেই কি আপনারা ..

রুহিন হোসেন প্রিন্স: এই কারণেই বলছি নির্দর্লীয় সরকার ছাড়া দেশে ভালো নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। 

দেশ: কিন্তু এমন পরিস্থিতিতো আপনার ভাষায় দেখা যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কি?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: উপরে যে কথাগুলি বললাম তা যদি সরকার না মেনে চলে বা না মানে তাহলে তো সংঘাত সংঘর্ষ লেগেই থাকবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক সঙ্কট প্রকট হবে। বিদেশী আধিপত্যবাদ এর সুযোগ নেবে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে এই সঙ্কট আরো ঘনীভূত হবে। এবং তার থেকে উত্তরণ একপর্যায়ে কঠিন হয়ে যাবে। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন সরকার এগুলো বোঝে না?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: সরকার বুঝলেও ক্ষমতাটা এমন জিনিস হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে একপক্ষ থাকে সেখানে ক্ষমতাটা ধরে রাখাই মূখ্য হয়ে উঠে। এখানে তাই চলমান আন্দোলনে দেখা যায় একপক্ষকে বলতে শোনা গেছে যে তারা কাউকে টেনে-হিচড়ে নামাবে। অন্যপক্ষ বলে রাজপথে নামতে দিবো না। এটাতো গণতন্ত্রের ভাষা না। একারণে এধরনের রাজনীতিটা এখন প্রধান হয়ে উঠেছে। এখনো এমন ধারাই দেশটা শাসন করে যাচ্ছে। এখানে যদি একটি নীতিনিষ্ঠ বাম প্রগতিশীল শক্তি গড়ে উঠতো তাহলে জনগণ এই ধারার রাজনীতিকে বাদ দিয়ে এই বাম প্রগতিশীল শক্তিকে বেছে নিতো। সেক্ষেত্রে জনগণ কর্তৃত্ববাদ বা স্বৈরাচারী ধ্যান ধারণায় নিমজ্জিত শক্তির বিরুদ্ধে সমবেত হতো। তাই বাংলাদেশে যেখানে চলে গেছে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে যা খুশি তাই করতে হবে-এতে ব্যাক্তি গোষ্ঠী লাভবান হতে পারে দেশ লাভবান হবে না।

শেয়ার করুন