২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:৪৫:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


উত্তাল মার্চ
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রভূমির দিকে
ফকির ইলিয়াস
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
একটি স্বাধীন রাষ্ট্রভূমির দিকে


এটা বাঙালী জাতির জানা হয়ে গিয়েছিল, একটি রক্তাক্ত সংগ্রাম ছাড়া মুক্তির উপায় নেই। একাত্তরের ১৬ মার্চ ঢাকায় প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু বৈঠকে যান গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে। গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা আর দলীয় প্রতীক নৌকা। প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের হাতে ছিল বাঁশের লাঠি। পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ ইপিআর জওয়ানদের হাত থেকে সেদিন অস্ত্র তুলে নেয়। নির্বাচনে জয়ী পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে অপেক্ষমান দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আরও আলোচনা হবে। কাল সকালে আমরা আবার বসছি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।”

প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু দলের শীর্ষস্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলে। সংবাদ সংস্থা এএফপির খবরে সেদিন বলা হয়, ভারত সরকার তার ভূখন্ডের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমান পূর্ব পাকিস্তানে যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্য পরিবহন বন্ধ করার জন্যই এ ব্যবস্থা। ঢাকায় আর্ট কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা করেন। সভাশেষে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন নেতৃত্বে মিছিল হয়।

শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠনে পিপিপি চেয়ারম্যান ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা করে এদিনও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতারা বিবৃতি দেন। করাচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি কাজী ফয়েজ মোহাম্মদ বলেন, গণতন্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল একটি, তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে, অন্যের কাছে নয়।

বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা ও অস্ত্র পরিবহনের কাজে শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ব্যবহার করার প্রতিবাদ জানিয়ে করাচিতে করপোশেন কার্যালয়ে চিঠি দেন দু’জন পরিচালক।

এদিকে ১৭ মার্চ পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করে ইয়াহিয়া সরকার। আওয়ামী লীগ তদন্ত কমিটি বর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, এই তদন্ত কমিশন চাইনি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণকে এই তদন্ত কমিশনের সাথে কোনও সহযোগিতা না করতে আহ্বান জানান তিনি।

১৯ মার্চ, ১৯৭১ জয়দেবপুরে জনতা-সেনাবাহিনী সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর উসকানিমূলক হামলায় এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়। সেনাবাহিনীর এমন কর্মকান্ডকে উসকানিমূলক বলে অভিহিত করেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই দিনই মুজিব-ইয়াহিয়া তৃতীয় দফায় বৈঠক অনুষ্ঠিত। ৯০ মিনিটের বৈঠকে ইয়াহিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া অন্য কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

 ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ বলেন, মুজিবকে সমর্থন দেওয়া গণতন্ত্রে বিশ্ববাসীর অবশ্য কর্তব্য। চলমান অসহযোগ আন্দোলনের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘গান্ধিজীর পরে শেখ মুজিবুর রহমানই এতখানি বিশাল আয়তনে অহিংস শক্তি প্রদর্শনের ক্ষমতা লাভ করিলেন’। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমান যেরূপ সাফল্যের সহিত জনসাধারণকে সর্বাত্মক ঐক্যে তাহার পশ্চাতে কাতারবদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছেন, সমগ্র ইতিহাসে অন্য কোনও নেতার জীবনে এরূপ দৃষ্টান্ত খুঁজিয়া বাহির করা খুবই দুষ্কর।’

২০ মার্চ, ১৯৭১ মুজিব-ইয়াহিয়া চতুর্থ দফায় বৈঠক হয় ঢাকায়। সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছিল। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। জয়দেবপুরে কারফিউ অব্যাহত রাখে পাকিস্তানী খুনীরা।

২১ মার্চ, ১৯৭১ ইয়াহিয়া-মুজিব অনির্ধারিত বৈঠক নয়। ৭০ মিনিটের এই বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। প্রতিরোধ দিবসের কর্মসূচি প্রদান করে স্বাধীন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। কর্মসূচির মধ্যে ছিল ভোর ছয়টায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন। সাড়ে ছয়টায় প্রভাত ফেরি সহকারে শহীদদের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ। সকাল ৯টায় পল্টনে জয়বাংলা বাহিনীর কুচকাওয়াজ। বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররমে ছাত্র জনসভা। এইদিন জয়দেবপুরে কারফিউ প্রত্যাহার হয়। ৪২ ঘণ্টা কারফিউ অব্যাহত রাখার পর প্রত্যাহার করা হয়। কঠোর সামরিক প্রহরায় ১২ জন সহচরসহ ঢাকায় আসেন ভুট্টো। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। সাংবাদিকদের ভুট্টোর আশপাশে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

সবমিলিয়ে একটি সংকটাপন্ন পরিস্থিতির দিকে এগোতে থাকে বাঙালীর ভবিষ্যত।

শেয়ার করুন