২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


খালেদাকে নিয়ে সরকারের নতুন ফাঁদ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৩-২০২৩
খালেদাকে নিয়ে সরকারের নতুন ফাঁদ খালেদা জিয়া


খালেদা জিয়া কারাবন্দি, গৃহবন্দি না মুক্ত। খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন, কী পারবেন না। খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, কী পারবেন না এ নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা। অথচ সদ্য ওঠা এ ইস্যু নিয়ে বিএনপির কোনো প্রশ্নই উত্থাপন করেনি। বিএনপি সরকারের কাছে জিজ্ঞাসাও করতে যায়নি উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে। সরকারের আইনমন্ত্রীই হঠাৎ করে এমন ইস্যুর উত্থাপন করেন এবং সে নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন। সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ে এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য। 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ২৩ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, ‘যে দুটি শর্তে তাঁকে (খালেদা জিয়া) মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা ছিল ঢাকায় নিজের বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। উক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না। আপনারা যখন প্রশ্ন করেছিলেন রাজনীতি করার বিষয়ে কোনো শর্ত দেওয়া হয়েছিল কি না-এ রকম কোনো শর্ত দেওয়া হয় নাই। আমি সত্য কথা বলি। এ জন্য সত্য কথা বলেছি।’

খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে যুক্ত হতে আইনগত বাধা আছে কি না-সে প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনাদের আমি আইনগত বাধা কোথায় সেটা আগেও বলেছি। উনি নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ উনি দণ্ডিত। (তিনি) রাজনীতি করতে পারবেন না, এ রকম কথা তো কোথাও নাই।’ 

একই প্রসঙ্গে ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান, সরকারের মন্ত্রীরা খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নিয়ে সাংঘর্ষিক বক্তব্য দিচ্ছেন, এ বিষয়ে দলের (আওয়ামী লীগের) বক্তব্য কী? জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তিনি কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি যে দণ্ডিত, যেটুকু পেয়েছেন মানবিক কারণে শেখ হাসিনার উদারতার জন্য পেয়েছেন। কী জন্য, মানবিক কারণটা কেন? অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে, তাঁকে দণ্ডাদেশ মুক্ত করেননি, স্থগিত করেছেন। কী জন্য তিনি অসুস্থ। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কারাগারে। তাঁর রাজনীতি করার সুযোগ নেই। দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়। দণ্ডিত ব্যক্তি তো জেলে যাবেন।’ 

এর আগের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই। তিনি কারাগারে থেকেও দল পরিচালনা করতে পারবেন, বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে পারবেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী আইনে যা আছে, তাই মানতে হবে। এখানে সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ কারো কিছু করার নেই। আবার তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতিও করতে পারবেন না। 

তবে খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এটা আওয়ামী লীগের একটা কৌশল। নতুবা মন্ত্রীরা একেক জন একেক রকম কথা বলবেন কেন? অন্যদিকে বিএনপি এ প্রসঙ্গটাকে একটা ফাঁদ হিসেবে মনে করছেন সরকারি দলের। 

খালেদা জিয়া ইস্যুতে মির্জা ফখরুল 

তবে খালেদা ইস্যুতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ক্লিয়ার করেছেন দলের বিষয়টি। ২৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার সেগুনবাগিচায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে নিয়ে বিভিন্নভাবে নাটক শুরু করেছেন। তাদের (আওয়ামী লীগের) মন্ত্রীরা একবার বলে যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। আরেকজন বলেন যে, তার রাজনীতি করতে বাধা নেই। এই কীসের মাজেজা ভাই। হঠাৎ করে আপনাদের এতো দরদ উথলে উঠলো কেন যে, আপনারা বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার ব্যাপারে একেবারে পাগল হয়ে গেলেন?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উদ্দেশ্য একেবারেই খারাপ, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। তারা দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়, তারা দেশের মানুষের যে দৃষ্টি তাকে ভিন্নদিকে নিয়ে যেতে চায়। আমাদের সামনে দৃষ্টি মাত্র একটাই যে, আমাদের অধিকার ফেরত চাই, আমাদের ভোটের অধিকার ফেরত চাই, এই সরকারকে আমরা আর দেখতে চাই না। এই সরকারকে এই মুহূর্তেই পদত্যাগ করতে হবে এবং পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। ওই সমস্ত কথা বলে জনগণকে ভিন্নপথে মন ভোলানো যাবে না।’ ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া যখন রাজনীতি করার সময় আসবে, উনি রাজনীতি করবেন। সে কারাগারেই থাকুক, জেলে থাকুক আরে সেখানেই থাকুক তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। কারণ তিনি এ দেশের জনগণের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী এবং গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় মাতা। সুতরাং আপনাদের (সরকার) এই নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন নেই। তার সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন, দল নেবে। আপনারা আগ বাড়িয়ে এসব কেন বলছেন। আর এতো যদি চান, তাহলে খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। তাকে দিয়েছেন ছয় মাসের সাজা স্থগিত, ছয় মাসের সাজা স্থগিত আর বলছেন, যে তিনি সবকিছু করতে পারবেন। এই সমস্ত কথা বলে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ হবে না।’

‘জনগণের অসুখের দিকে তাকান’

মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা (সরকার) আসল জায়গায় আসুন। জনগণের যে অসুখ সেটার দিকে তাকান। জনগণের অসুখ একটাই যে, তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না। জনগণের পার্লামেন্ট নেই। তারা কথা বলতে পারে না। সেজন্য আমাদের সবচেয়ে বড় যে দাবি এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে, যার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে এবং সবার অংশগ্রহণ নতুন নির্বাচন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু

তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানে নেই বলে সরকার যে বক্তব্য রাখছে তার জবাব দিতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তোমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিলেন, তখন কি সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল? ছিল না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন দেখেছেন যে, জনগণ এটা চায়, এটা করলে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হবে তখন তিনি পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশন বসিয়ে নতুন সংসদে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংবিধান সংযোগ করেছিলেন। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল বিএনপি সেদিন বিরোধীদলে গিয়েছিল ১১৬টি আসন নিয়ে। কোথায় সেদিন বিএনপি তো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মেনে অন্য কোনো কাজ করেনি, নির্বাচন তো তার মতো করতে চায়নি।’

ভোট চুরির রেকর্ড আওয়ামী লীগের দাবি করে তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় আওয়ামী লীগ বলে বিএনপি নাকি ভোট চুরি করেছে। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বিএনপি কোনোদিন ভোট চুরি করেনি। ভোট চুরি করেছেন আপনারা।  আজকে শুধু নয়, ১৯৭৩ সালে ভোট চুরি করেছেন। পরবর্তীকালেও ভোট চুরি করেছেন। গত দুইটি সংসদ নির্বাচনেও ভোট চুরি করে, কারচুপি করে, ভয় দেখিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাচন করেছেন। আপনাদের লজ্জা হওয়া উচিত একটা দেশের রাজনৈতিক দলের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন।’ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন বাহিনীকে ব্যবহার করে সরকার একের পর এক কাজ করার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘আওয়ামী লীগই আইসিইউতে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন করতে চাই। বাহ কি নির্বাচন। আবার বলে যে, বিএনপি নাকি আইসিইউতে যাবে। বিএনপি আইসিইউতে যাবে না। আপনারা ইতিমধ্যে আইসিইউতে চলে গেছেন। দেউলিয়া হয়ে গেছেন রাজনৈতিকভাবে। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে এতো ভয় কেন? ভয় একটাই যে, আপনারা জানেন যে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আপনাদের জামানত থাকবে না, ২০ আসনও পাবেন না।’ ফখরুল বলেন, ‘আমরা অহিংস, সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করছি। ওরা বারবার অগ্নিসন্ত্রাসের কথা বলে লাভ নেই। অগ্নিসন্ত্রাস ক্ষমতাসীনরাই করে জনগণ তা জানে। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে আর চাপানো যাবে না। জনগণ সব জেনে গেছে। আসুন আন্দোলনকে আরো তীব্র করে তুলি, বেগবান করে তুলি এবং জনগণের শক্তি দিয়ে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করে এদেরকে আমরা পরাজিত করি। আপনারা মনোবল দৃঢ় রাখুন, আন্দোলনে আরো সক্রিয় হোন।

‘বর্তমান সংসদ প্রসঙ্গে’

দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সংসদ একটা বানিয়েছে, যে সংসদের নির্বাচনই হয়নি। প্রশ্ন করারও কেউ নেই, জবাব দেওয়ার কেউ নেই। এই পার্লামেন্ট আমাদের দরকার নেই। একইভাবে তারা ২০১৪ সালে নির্বাচন করেছিলো। তখন বিনাভোটে ১৫৪ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল যারা সংসদের মেম্বার হয়ে গেলেন। আর আমাদের বেশকিছু লোকজন বিশেষ করে জাতীয় পার্টি ডুগডুগি বাজিয়ে ওদের সঙ্গে যোগ দিলো। আরো আছে। শুধু জাতীয় পার্টি না। আমাদের অনেক বাম নেতা একসময়ে প্রখ্যাত নেতা যারা এখনো অনেক বড় বড় কথা বলেন, তারা সেদিন নৌকার সঙ্গে মহাজোট করে সেই নির্বাচনে গিয়েছিলেন, তাই না। ভাগ নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখন আবার একটু অসুবিধা হচ্ছে। মন্ত্রিত্ব দেয়নি যে কারণে ভাগবাটোয়ারা ঠিকমতো হচ্ছে না। এখন বলে ১৪ দল আর কাজ করে না, আমাদের সঙ্গে কথা রাখা হয়নি। এরা আওয়ামী লীগের চেয়ে খারাপ। আজকে এ দেশে কিছুসংখ্যক লোক তৈরি হয়েছে, তাদের কাজ হচ্ছে তাবেদারি করা, তোষামোদি করা এবং জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা।’

একসময়ে বাম রাজনীতি করা মির্জা ফখরুল সরকারের সমর্থিত বাম নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি খুব পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই যে, আজকে গণতন্ত্র আছে কি না-এই কথা তারা বলেন না কেন? তারা কেন এই কথা বলেন না আজকে জনগণ ভোট দিতে পারে না, ভোট দিতে গেলে ভোট তারা দিতে পারেন না। কেন বলেন না আজকে এই সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার, তারা দুর্নীতি করে মানুষের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে-এ কথাগুলো তারা মুখ দিয়ে কেন বলেন না। একসময় তারা বড় বড় বিপ্লবী কথা বলতেন। বিপ্লবী কথা বলেন। এখনো সুযোগ পেলেই আমাদেরকে তারা বিভিন্নভাবে দোষারোপ করতে থাকেন। কিন্তু তারা তাদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব পালন করেন না।”

উল্লেখ্য, জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

শেয়ার করুন