২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:৩২:০৮ অপরাহ্ন


প্রবাসে ইতিহাস সৃষ্টি করলো ব্রুকলিনের পথমেলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৭-২০২২
প্রবাসে ইতিহাস সৃষ্টি করলো ব্রুকলিনের পথমেলা ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউতে গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ইতিহাস সৃষ্টিকারী বৃহৎ পথমেলায় মানুষের ঢল/ছবি সংগৃহীত


ব্রুকলিনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত চার্চ অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড অ্যাভিনিউতে গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো প্রবাসে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ যাবৎকালের সবচাইতে বৃহৎ পথমেলা। সেদিন ব্রুকলিনে মেলায় মানুষের ঢল নেমেছিল। বাংলাদেশি আমেরিকান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অব নিউইয়র্ক এবং ৬৬ প্রিসেক্ট কমিউনিটি কাউন্সিল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ব্রুকলিনে মৌসুমের প্রথম এই মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কন্ট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, কাউন্সিল মেম্বার এবং মেলার গ্র্যান্ড মার্শাল শাহানা হানিফ ডিস্ট্রিক্ট ৩৯, কাউন্সিল মেম্বার রিতা জোসেফ ডিস্ট্রিক্ট ৪০, ৬৬ প্রিসেক্টের কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইনস্পেকটর  জেসন হ্যাগস্টেড, এক্সও ক্যাপটেইন ব্র্যাট গ্রানোউইটার, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জ্যামস জেমন।

অত্যন্ত সুশৃঙ্খল এই মেলায় সর্বাধিক পরিমাণ স্টল দেখা যায়, পাশাপাশি বেশ কয়েটি হোম কেয়ার, আর্জেন্ট কেয়ার, এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশনসহ নানাধরনের স্টল অংশগ্রহণ করে এই মেলায়। মেলায় শাহানা হানিফ ঘোষণা করেন চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এলাকাকে লিটন বাংলাদেশ হিসেবে। তিনি বলেন, এটি পাস হয়েছে। এখন শুধু বাকি আনুষ্ঠানিকতার। আপনাদের নিয়ে সেউ উৎসব আমরা করবো এই ব্রæকলিনে।

দুপুর আড়াইটায় সংগঠনের সভাপতি কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজমের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ  ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফিতা কেঠে ও বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট, বাংলা সিডিপ্যাপের প্রেসিডেন্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো  বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, স›দ্বীপ সোসাইটির উপদেষ্টা লুৎফুল করিম, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি প্রার্থী কাজী নয়ন, মেলার আহŸায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্ট্রিক লিডার অ্যাট লার্জ অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, চাইনিজ কমিউনিটি লিডার লু লুইস, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট  রফিকুল মাওলা, মার্কস হোম কেয়ারের আমীর হোসাইন কামাল, হেলথ ফার্স্টের  সালেহ আহমেদ, মেলার সাংস্কৃতিক বিষয়ক চেয়ারম্যান এস এম ফেরদাউস, রাজনীতিবিদ আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, নিউইয়র্ক আমেরিকা বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব, সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানী, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট বখতিয়ার উদ্দীন, গোলাম মাহমুদ, প্রফেসর সৈয়দ আজাদ, ইকবাল হায়দার, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, সালেহ মানিক প্রমুখ। 

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান ছাড়াও এই মেলা থেকে চার্চ ম্যাকডোনাল্ডকে ‘লিটল বাংলাদেশ’ ঘোষণা সংক্রান্ত পাস হওয়া বিলের বিস্তারিত বর্ণনা করেন সিটি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ। যা একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা বলে উপস্থিত দর্শক এবং আয়োজকরা মনে করেন। তিনিও তার বক্তব্যে বাংলাদেশিদের জন্য এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন, তখন হাজার হাজার দর্শক হাততালির মাধ্যমে শাহানা হানিফকে অভিনন্দন জানান। তিনি আরো বলেন এই এলাকায় আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সুতরাং এই এলাকার জন্য তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তিনি অতীতেও  করেছেন এবং আগামীতেও করবেন। তিনি আরো বলেন, আমি যে স্কুলে পড়েছি, সেখানে বাংলাদেশি নতুন প্রজন্ম পড়ছে। আমি চাই তারাও আমার মতো এগিয়ে আসুক। তিনি বলেন, এটি সহজ নয়, আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং জব। তিনি বলেন, আমি প্রতি বুধবার বৃহত্তর নোয়াখালি সোসাইটির ভবনে বসি, আপনাদের যে কোনো প্রয়োজনে আপনারা আসতে পারেন। তিনি ধন্যবাদ জানান, সাংবাদিক সোহেল মাহমুদকে। কারণ বাংলা তাকে সোহেল মাহমুদ শিখিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। মেলার গ্র্যান্ড মার্শাল শাহানা হানিফকে ব্যাচ পরিয়ে দেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নূরুল আজিম।

মেলার উদ্বোধক অবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে আয়োজক সংগঠনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মেলা বা অন্য যে কোনো অনুষ্ঠানই আমরা করি না কেন, সব সময় আমাদের মনে ধারণ করা উচিত বাংলাদেশকে। যে দেশকে আমরা জীবনবাজি রেখে স্বাধীন করেছি। তিনি বলেন, দেশের যে কোনো দুর্যোগে এবং সংকটে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। আশা করি আপনারাও আমার মত এগিয়ে আসবেন এবং সংকটে সাড়া দেবেন।

গত প্যান্ডামিকে কমিউনিটি এবং মানবতার পক্ষে অবদানের জন্য প্যান্ডামিক হিরো হিসেবে চার জনকে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন চিকিৎসাক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. হামিদুজ্জান, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং মেলার প্রধান অথিতি ডা. চৌধুরী সরওয়ারুল হাসান। প্যান্ডামিকের সময়ে নিউইয়র্ক থেকে নিয়মিত প্রিন্টিং ভার্সন পত্রিকা প্রকাশ করার জন্য নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাগরকে এবং সমাজ কর্মে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়, বীর মুক্তিযাদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ, বিশিষ্ট রিয়েল স্টেট ইনভেস্টর ও তরুণ সমাজকর্মী নূরুল আজিম, চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশিষ্ট ব্যাংকার  সৈয়দ এম রেজা, সংগীতশিল্পী ত্রিনিয়া হাসান এবং সংগঠন হিসেবে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবকে। এছাড়াও ৬৬ প্রিসেক্টের বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে তাদের কর্মদক্ষতা ও কমিউনিটিতে সহযোগিতার জন্য আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন প্রিসেক্টের কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইনেসপেক্টর  জেসন হ্যাগস্টেড ও কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জ্যামস জেমন প্রমুখ।

আমেরিকার স্থানীয় এবং সিটি ও স্টেটের অনেক নির্বাচিত  অফিসিয়াল’স উপস্থিত হতে না পেরে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রক্লোমেশন ও সাইটেশন প্রদান করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক ৪৪ থেকে নির্বাচিত অ্যাসেম্বলি মেম্বার রবার্ট ক্যারল তার অফিসের ল্যাজিসলেটিভ ডিরেক্টর ডেভিড পেসেপ্সকীর মাধ্যমে প্রক্লোমেশন ও সাইটেশন প্রদান করেছেন সংগঠনের সভাপতি কাজী আজম,  সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক  চৌধুরী, কনভেনর শাহ নেওয়াজ ও মেম্বার সেক্রেটারি ফিরোজ আহমেদকে। ডিস্ট্রিক্ট ৩৮ থেকে নির্বাচিত অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার তার প্রতিনিধি হিসেবে তার অফিসের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স লিয়াজোঁ মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে তার শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছেন এবং সমাজিক কাজে সহযোগিতা এবং নিজ নিজ কর্মে অবদানের জন্য সাইটেশন প্রদান করেছেন শিল্পী ও ব্যবসায়ী রানু নেওয়াজ, ব্যবসায়ী ও সমাজ কর্মী নুসরাত চৌধুরী নিপা, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মুনমুন হাসিনা বারী, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী  খাদিজা চৌধুরী বিউটি, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী কাজী শামীমা বেগম ( সামু) এবং ফ্যাশন ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী আরিফা হক বৈশাখীকে। মেলায় উপস্থিত দর্শকরা ছাড়াও কমিউনিটির বিশিষ্ট সিনিয়র নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি মেলার সফলতাকে আরো সার্থক করে তুলেছে।  

প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সারমিনা সিরাজ সোনিয়া এবং  এস এম ফেরদৌসের যৌথ সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের ৮ বার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া জাতীয় শিল্পী এস আই টুটুল এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় প্লেব্যাক শিল্পী রিজিয়া পারভিন ছাড়াও  নিউইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পীরা সংগীতের মূর্ছনায় মেলায় আগতদের সারাক্ষণ আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। তাদের মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলেন শিল্পী রানু নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, চন্দন চৌধুরী, ত্রিনিয়া হাসান, শামীম সিদ্দিকী, অনিক রাজ, রিয়া রহমান, শম্পা জামান, ডা. কামরুল ইসলাম, খাইরুল বাসার এবং শিশু-কিশোরদের সংগঠন চারুকণ্ঠ।

প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনার পর বিকেলে মঞ্চে আসেন রিজিয়া পারভীন। একে একে জনপ্রিয় গান দিয়ে তিনি সকল শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রাখেন। 

সবশেষে আসেন এস আই টুটুল। তিনি তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গিটার বাজিয়ে গান পরিবেশন করে মেলায় অন্যরকম এক আবহ সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে তরুণরা নেচে নেচে গান উপভোগ করেন। 

সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় মেলার সংগঠনের সভাপতি কাজী আজম এবং মেলা উদযাপন কমিটির আহŸায়ক শাহ নেওয়াজের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী ও মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ।

 

শেয়ার করুন