০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০২:০২:০৯ পূর্বাহ্ন


ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন- দূর্বোধ্য দূর্গে পরিণত হয়- মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২৪
ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন- দূর্বোধ্য দূর্গে পরিণত হয়- মির্জা ফখরুল


সরকার হটানোর আন্দোলনে ‘ঢাকায় দুর্বোধ্য দূর্গ’ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এক ইফতার অনুষ্ঠানে দেশের মানুষের দূঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরে মহানগর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব এই তাগাদা দেন।           

তিনি বলেন, ‘‘ সারাদেশের মানুষ কত কষ্টে আছে। কয়েকদিন আগে আমি আমার জেলা ঠাকুগাঁওতে গিয়েছিলাম। আমি দেখেছি তারা ভয়াবহভাবে দূঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে। অথচ তাদের মুখে কিন্তু কোনো হতাশার ছাপ আমি দেখি নাই। এতো অত্যাচার নির্যাতনের পরেও তারা সুন্দর আছে, সঠিক আছে, দৃঢ়চেতা আছে। আমাদেরকে তারা এই কথা বলেছে যে, আপনারা সঠিক নির্দেশনা দেন, সঠিক কর্মসূচি দেন তাহলে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে আগেকার মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব। ঢাকা মহানগরের উদ্দেশ্যে আমি দুই-একটি কথা বলতে চাই, ঢাকা মহানগর হচ্ছে কেন্দ্র বিন্দু। আমাদের সমস্ত আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে ঢাকায়..এখানে সরকারের ভয়াবহ সেই দানবদেরকে পরাজিত করা। সেই কারণে ঢাকার মহানগরের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমি অনুরোধ করব মহানগরের নেতৃবৃন্দকে… ঢাকাকে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন ঢাকা দূর্বোধ্য দূর্গে পরিণত হয়। এই দূর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে সেইভাবে আমাদেরকে এখানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।”

‘এখন সবেচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে সংগঠনের প্রতি, সবচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে জনগনের যে সাহস যেটাকে বাড়িয়ে তুলতে এবং শত্রুকে পরাজিত করবার জন্য কৌশল গ্রহন করতে হবে। এই কথাগুলো আপনারা মনে রাখবেন।’ বলেন ফখরুল।

বিএনপি মহসচিব বলেন, ‘‘এই আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়,এই আন্দোলন জাতিকে রক্ষা করবার আন্দোলন। আমাদের চলমান আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের চলমান আন্দোলন ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবার জন্য। আমাদের চলমান আন্দোলন আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রকে সকল ধরণের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করবার জন্যে।”

‘‘ তখনই আমরা জাতিকে রক্ষা করতে পারব যখন এই জনসমর্থনহীন একেবারে ম্যান্ডেটবিহীন যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে ক্ষমতায় এই দখলদারি সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।” আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যা আজকে সম্পূর্ণ ধবংস হয়ে গেছে।আমাদের ভোটের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সংবিধান তচনচ করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার যা আগে কখনো দেখিনি আমাদের সন্তানদেরকে ভাইদেরকে গুম করে দিয়েছে… ১২/১৩ বছর হয়ে গেছে এখনো আমরা তাদের খবর জানি না। আমাদের ছেলেদের পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে, বিনা বিচারে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, বিএনপির ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে… ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর দুইদিনের মধ্যে ৩৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে… দেশের অর্থনীতি ধবংস করে ফেলা হচ্ছে,বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে… এককথায় এই রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় নিয়ে গেছে।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ প্রত্যেকটি বড় বিজয়ের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমাদের নবী রসুল্লাহ(সা.) একদিনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সক্ষম হননি… দীর্ঘকাল লেগেছে তার এই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবার জন্যে। একদিনের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সব জায়গায়।”

‘‘ আজকে ফেরাউন-নমরুদ-হিটলারের মতো কর্তৃত্ববাদী ধ্বংসকারী সরকারগুলো যখন এসেছে তখন তারা চেষ্টা করেছে সারা জীবন তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে। আমরা দেখেছি, আজকে আওয়ামী লীগ যা চেষ্টা করছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। অতীতে তাদের নেতা ’৭৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন বাকশাল সৃষ্টি করে জনগনকে পুরোপুরিভাবে একটা বন্দি অবস্থায় নিয়ে আসা। আজকে আবার তারা(আওয়ামী লীগ) নতুন কায়দায় শুরু করেছে একদলীয় সরকার বাকশাল প্র্রতিষ্ঠা করার জন্য।আসুন আজকে আমরা এই শপথ গ্রহন করি, আল্লাহর কাছে এই দোয়া চাই যেন, আল্লাহ সেই তৌফিক দেন সেই শক্তি দেন যেন আমরা সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আন্দোলনে সংগ্রামে নির্বাচনে সবখানেই যেন আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারি… এটাই হোক আজকে দিনে প্রার্থনা।”

ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও গুম-খুনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সন্মানে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার কয়েক সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

ইফতারের আগে মুহুর্তে লন্ডন্ থেকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দুই মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে গুম হওয়া পরিবারের পক্ষে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাদাত শাওন চৌধুরী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের মেয়ে রাইসা প্রমূখ তাদের কষ্টের কথা বলেন।

পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্মমহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি মহাসচিব।



শেয়ার করুন