২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৪৫:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


মুনার তিন দিনব্যাপী সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন
আজহারি বললেন পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৮-২০২৩
আজহারি বললেন পবিত্র কোরআন মহাবিশ্বের মহাবিস্ময় বক্তব্য রাখছেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারি


‘কোরআন গাইড ফর হিউম্যানিটি’-এই থিমকে সামনে রেখেই মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা) কনভেনশন ২০২৩ অনুষ্ঠিত হয় পেনসিলভানিয়ার পেনসিলভানিয়া কনভেনশন সেন্টারে। তিন দিনব্যাপী কনভেনশনটি শুরু হয় গত ১৮ আগস্ট এবং সফল সমাপ্তি ঘটে ২০ আগস্ট। মুনার কনভেনশন মানেই মানুষকে আলোর পথ দেখানো, মানুষকে শান্তির ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞাত করা, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআন নিয়ে আলোচনা করা, আল কোরআনের ব্যাখ্যা দেওয়া। নতুন প্রজন্মকে আলোর দিশারির সন্ধান দেওয়া। ইসলাম যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, মানবতাবাদী ধর্ম, মানব কল্যাণের ধর্ম পবিত্র কোরআনের আলোকে তুলে ধরাই মুনা কনভেনশনের মূল উদ্দেশ্যে। এবারের মুনা কনভেনশন যে পুরো আমেরিকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মিলনমেলায় পরিণত হয়। হাজার হাজার মুসলিম নর-নারীর এই মহামিলন সত্যিই অতুলনীয়, অবিশ্বাস্য। একেবারেই পিনপতন নীরবতায় এবং সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে মুনার এবারের কনভেনশন। তিন দিনব্যাপী বিশাল অনুষ্ঠানে কোথাও ছন্দপতন ঘটতে দেখা যায়নি। সব যেন ছিল ছবির মতো। মুনা কনভেনশনে দেশি-বিদেশি অনেক জ্ঞানী-গুণী অতিথি থাকলেও সবার নজর ছিল মাওলানা ড. মিজানুর রহমান আজহারির দিকে। তিনিই ছিলেন যেন কনভেনশনের মধ্যমণি। কনভেনশনের প্রথম দিনে মাওলানা আজহারির কোনো বক্তব্য ছিল না। তিনি বক্তব্য দিয়েছেন দ্বিতীয় এবং শেষ দিন। দ্বিতীয় দিনে ছিলেন কিনোট স্পিকার এবং শেষদিনে ছিলেন প্রধান বক্তা। মাওলানা আজহারি দ্বিতীয় দিনের বক্তব্যের শুরুতেই মুনাকে ধন্যবাদ জানান এমন সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি বলেন, গতকাল থেকেই আপনারা ভালো ভালো বিষয়ে নিয়ে আলোচনা শুনেছেন। আজকে আমি কিনোট স্পিকার, সুতরাং আমার বেশি বলার সুযোগ নেই। কোরআনে চারটি বিষয় বা ফিচার রয়েছে। প্রথমত. কোরআন সব কিছুর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়। দ্বিতীয়টি হচ্ছে গাইডেন্স। তৃতীয়টি মার্সি এবং শেষটি বুশরা। আমি আজকে দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। আর এই বিষয়টি হচ্ছে গাইডেন্স। আপনারা জানেন পবিত্র কোরআন নাজিল হয় পবিত্র রমজান মাসে। সবার গাইডেন্স হিসেবে, সারা বিশ্বের মানুষের গাইডেন্স হিসেবে। কোরআন মানুষকে সঠিক পথ দেখায়, জিনও স্বীকার করে কোরআন। ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, আল-কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়, কোরআন হচ্ছে আল্লাহর শিফা (আরোগ্য ও নিরাময়)। কোরআন হচ্ছে একটি কালজয়ী অলৌকিক ঘটনা (টাইমলেস মিরাক্কেল)। মহান রাব্বুল আল্লাহ তায়ালার যেমন লয় নাই ক্ষয় নাই, তেমনি কোরআনেরও কোনো লয় নাই ক্ষয় নাই। পাত্র ড. মিজানুর রহমান আজহারী আরো বলেন, কোরআন না থাকলে পৃথিবীতে আমাদের আসার উদ্দেশ্য কি তা জানতে পারতাম না। ভবঘুরের মতো ঘুরে বেড়াতাম। খেতাম, কাজ করতাম, পৃথিবী আবাদ করতাম, উন্নয়ন হতো কিন্তু পৃথিবীতে আমাদের আসার উদ্দেশ্য কি? তা কখনই জানতে পারতাম না। কোরআন আমাদের সেটা পরিষ্কার করেছে। ইসলামিক বিদ্বান আজহারী বলেন, কোরআন ব্যতীত সব ধর্মগ্রন্থই (তাওরাত, জবর, ইঞ্জিন) নবীদের ওপর একবারেই নাজিল হয়েছে। কিন্তু কোরআন নাজিল সম্পন্ন হতে সময় লেগেছে ২৩ বছর। কোরআন একটু একটু করে নাজিল হয়। মানবজাতির প্রয়োজন অনুযায়ীই কোরআন নাজিল হয়েছিল। প্রথম নাজিল হয় পবিত্র মক্কায় মসজিদুল হারামে, জাবালুল পাহাডে, তারপর নাজিল হয় মদিনায়, নাজিল হয় যুদ্ধে, নাজিল হয় ঘরে। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) যেখানে কোরআন সেখানে নাজিল হয়। নবীজি যখনই কোন সংকটে পড়েছেন, তখনই সমাধান বা উত্তর নিয়ে কোরআন নাজিল হয়, কোরআন হলো আলো। শুধু নিজেই আলো নয়, আমাদের আলোকিত করে, মহাসত্যের দিকে নিয়ে যায় কোরআন। একটি জাতির পুরো জীবন পাল্টে দেয় কোরআন, কোরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দেয়। কোরআন চিরন্তন সত্য। মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়। তিনি বলেন, আল্লাহপাক বেশ কয়েকজন নবীকে ক্ষমতা দিয়েছিলেন, গ্রন্থ দিয়েছেন, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর সেসব বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমাদের নবীজির মৃত্যুর পরও কোরআন বিদায় নেয়নি। কোরআন কেয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে। কোরআন আমাদের আলোকিত জীবনের সন্ধান দেয়, উন্নতির দিকে নিয়ে যায়। অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো মানবতাকে আলোকিত করে। কোরআন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় একটি ভূখণ্ডের অক্ষর জ্ঞানহীন জাতি ও গোষ্ঠীর পুরো জীবনধারাকে পাল্টে দিয়েছিল এই কোরআন। কোরআন না হলে আমরা আল্লাহকে খুঁজে পেতাম না, তিনি ক্ষমতাসীন তা বুঝতাম না। আল্লাহর ৯৯টি নাম, কোরআন না হলে জানতাম না, আমরা যে আল্লাহর দাসত্বের জন্য সৃষ্টি, তা জানতাম না, জন্ম এবং মৃত্যু নিয়ে জানতাম না। জান্নাত এবং জাহান্নাম কী জিনিস জানতাম না, মৃত্যুর পর কী হবে কোরআন আমাদের জানিয়ে দেয়। কোরআন মৃত্যুপরবর্তী জীবন আশ্বস্ত করে।

তিনি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে বলেন, কিছুদিন আগে আমরা প্রিয় আল্লামাকে হারিয়েছি। আমরা এই ভেবে বুকে আশা বেঁধে রাখি যে, এই দুনিয়ায় তাকে সাময়িকভাবে হারিয়েছি। কিন্তু কেয়ামতের দিনে জান্নাতে এই কোরআনের বুলবুলির কণ্ঠে আমরা আবার কোরআন শুনতে পাবো। একইভাবে বাবা-মা, বন্ধুকেও হারিয়েছি। এ বিচ্ছেদ সাময়িক। আমরা তাদের জান্নাতে একদিন পাবো।

কনভেনশনের তৃতীয় দিনেও তিনি বক্তব্য রাখেন। এই দিন বক্তব্য রাখেন রিজিক নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা অনেকেই মনে করি খাদ্য এবং অর্থই আমাদের রিজিক। তিনি বলেন, খাদ্য এবং অর্থ হচ্ছে অঅমাদের আসল রিজিক নয়। রিজিকের উঁচু স্তর হলে শারীরিক এবং মাসসিক সুস্থতা। আপনার শরীর ভাল না থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগবে না। রিজিকের আরো ওপরের স্তর হচ্ছে আপনার স্ত্রী যদি আল্লাহওয়ালা হয় এবং আপনার সন্তান যদি দিনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। আর রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা। আমরা যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাখ তরতে পারি তাহলে দুনিয়া এবং আখেরাত দুটোই পাবো। তিনি সব শেষে তিন দিনব্যাপী কনভেনশনে আপনারা আমরা যা শুনেছি, নোট করেছি তা যদি আমলে নিতে পারি, নিজের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে না পারি, তাহলে কোনো লাভ হবে না। আসুন, আমরা কোরআন এবং নবী করিম (স.) যে পথ আমাদের দেখিয়েছেন সেই পথে চলি।

মুনা সম্মেলনের আয়োজকরা জানান, ড. মিজানুর রহমান আজহারী এই প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে কোরআন ও হাদিসের আলোকে আলোচনা এবং মুনা সম্মেলনে অংশ নিলেন।

সম্মেলনে ইসলামি চর্চা ও আলোচনা ছাড়াও ছিল সেমিনার, ছোটদের অনুষ্ঠান, মহিলাদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান, বাচ্চাদের খেলাধুলা, কালচারাল প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্রোগ্রাম। চারটি মহাদেশ থেকে ইসলামিক বিদ্বানরা সম্মেলনে যোগ দেন।

মুনা কনভেনশনের চেয়ারম্যান আরমান চৌধুরী সিপিএ ও আনিসুর রহমানের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন- ড. ওমর সুলাইমান, ড. আলতাফ হোসেন, হারুণ ও রশিদ ও সাইখ আব্দুল নাসির জাগদা। গত শুক্রবার সম্মেলনে বক্তব্য দেন মুনার ন্যাশনাল কমিটির সভাপতি হারুন ও রশীদ, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা লুৎফর রহমান, আব্দুস সালাম আজাদী ও আহমেদ আবু ওবায়দুল্লাহ।

এবারের মুনা সম্মেলনে প্রায় ২০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের দুইদিন আগে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর নাম যুক্ত হওয়ায় সম্মেলনে যোগ দিতে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ বেড়ে যায়। প্রচুর লোকের চাপে সম্মেলনের শৃঙ্খলা বজায় হিমসিম খেতে হয়েছে আয়োজকদের। শনিবার মাগরিবের নামাজের আগে তার আলোচনা শুরু হয়।

সম্মেলন শেষে সংবাদ সম্মেলন

শনিবারের সম্মেলন শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকার (মুনা) কর্তৃপক্ষ। সংবাদ সম্মেলনের নানা ক্রুটি নিয়ে সাংবাদিকদের মতামত জানতে চান কর্তৃপক্ষ। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল একটি সম্মেলনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানবক্তা বা অতিথির সঙ্গে আলাদা করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির জন্যও দাবি জানানো হয়। খাওয়া-দাওয়ার সমস্যা, নিরাপদে হোটেলে যাতায়াত ও নানাবিধ সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হয়। আগামীতে কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় ভেবে দেখবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন মুনা ন্যাশনাল কমিটির প্রেসিডেন্ট হারুন অর রশীদ, কনভেনশনের চেয়ারম্যান আরমান চৌধুরী সিপিএ, আব্দুল্লাহ আরিফ, আহমেদ আবু ওবায়দুল্লাহ, ড. রিয়াজুল ইসলাম ও ফখরুল ইসলাম মাসুম।

শেয়ার করুন