২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৫৭:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


নির্বাচনমুখী না জরুরি অবস্থার দিকে দেশ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
নির্বাচনমুখী না জরুরি অবস্থার দিকে দেশ


দুটি বাক্য এখন মুখে মুখে। রাজনীতিতে সমঝোতা বলতে আর কিছু হচ্ছে না। অন্যটি ‘হাওয়াই’ চাপে বাংলাদেশের রাজনীতি ছুটছে আজানা ভয়ংকর এক গন্তব্যে। সমঝোতা না হলে যা হয়, সেটাই হতে যাচ্ছে এখন। যার সূচনা হতে পারে জরুরি অবস্থার মধ্যদিয়ে। অনেকেই বুঝতে শুরু করেছেন, হাওয়াই চাপটা কী। কারণ সময় তো বসে থাকে না। সময়ের ট্রেন সময়মতই ছুটবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কে উঠতে পারলো টিকেট ম্যানেজ করে কেউ উঠতে পারলো না- সেটা ম্যাটার করছে না। ২০১৪ ও ২০১৮ এর ট্রেনে বিএনপি উঠতে ব্যর্থ ছিল। সে কথা ক্ষমতাসীনরাও বলতেন বারবার। এবারের ট্রেনে আগেই উঠে বসেছে বিএনপি। যদিও টিকেট নেই। কিন্তু ট্রেনে যখন উঠেছে, জরিমানা দিয়ে হলেও গন্তব্যে পৌঁছার একটা সরু ট্যানেলের ওই প্রান্তে গন্তব্য দেখছে। কিন্তু অন্য দল আওয়ামী লীগ এখনও টিকেটই কাটতে পারেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে টিকেট ক্রয়ের সময়টাও ক্রমশ শেষ হয়ে গেছে। তবে প্রচেষ্টা তাদের অব্যাহত। হাল ছাড়তে রাজি নন। 

ফলে দেশের শক্তিধর দুই রাজনৈতিক দল বিএনপির পথ একদিকে, আওয়ামী লীগ অন্যপথে। দুই হেভিওয়েটের দুইদিকে দুইপথ ধরে চলার অর্থ একটা ভয়ানক রকমের অনিশ্চয়তার গন্তব্য ইঙ্গিত, সেটা বহুদিন থেকেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বহুবার বলেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এখন সেই অনিশ্চিত গন্তব্য কী, সেটা দেখার দিনক্ষণে উপনীত। কর গোনা শুরু। বাংলাদেশের রাজনীতি কখন দেখতে দেখতে সেই আজানা ভয়ঙ্ককর পথেই হাটছে সব কিছু। কী হতে যাচ্ছে এমন নিশ্চিত কিছু এখনও বলতে পারছেন না কেউ। তবে অতীত অভিজ্ঞতা আছে অনেক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন একগুয়েমি রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরনে কী হয়েছিল সে আলোকে কিছু ধারনার অবতারণা মাত্র। সে ধারনা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেই ফেলছেন মিড অক্টোবর নাগাদ কিছু একটা ঘটে যেতে পারে। 

জরুরি অবস্থা নাকি নির্বাচনমুখর পরিবেশ 

সে কিছুটা তাহলে কী? সেটাই ভয়বহতা। তাহলে কী জরুরি অবস্থা? দেশের দুর্যোগকালীন সময় ছাড়াও বিভিন্ন কারণে জরুরি অবস্থা আসতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশের রাজপথ যখন আন্দোলন, সংঘর্ষসহ জানমাল ক্ষতি হওয়ার অশংকা নেই সে মুহূর্তে জরুরি অবস্থা জাতীয় কিছুর অবতারণার অর্থ ‘হাওয়াই চাপ’। এক্ষুনি যে প্রশ্নের অবতারণা সেটা ‘হাওয়াই চাপ’ টা কী। হাওয়াই চাপ বা অদৃশ্য প্রেসার। এ প্রেসারটা বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে ম্যালা দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে। যে রাজনীতিবিদগণ বারবার বলছেন, আমাদের দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক আমরাই। তাদের জন্য ওই হাওয়াই চাপ। যেহেতু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশসমূহের অনেক সাহায্য সহায়তা রয়েছে। যাদের সরকারি ভাষায় দাতা দেশ বা নতুন ভার্সানে উন্নয়ন সহযোগী- তাদের থেকে আসা বিষয়টা ‘হাওয়াই চাপ’। ওইসব দেশের জনগণের করের টাকায় যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ সহায়তা করতে আসে- তাই তাদের সে সাহায্য সহযোগিতা যথার্থ মানুষদের কাছে পৌঁছে কি না তার জবাবদীহীতা নিজ দেশের জনগণের জন্য প্রয়োজন। সে জন্যই তারা তাদের নিজের স্বার্থে সাহায্য করা দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টারত হন। বাংলাদেশের এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষের যে ন্যায্য অধিকার সেটা ভোট। ‘আমার ভোট আমি দেব’। এটা গত দুই টার্ম (২০১৪ ও ২০১৮) তারা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ (ইইউ সহ অন্যরা) একত্র হয়ে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে উঠে পরে লেগেছে। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিতে দিতে এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি বিবাধ বেঁধে যাবার উপক্রম ওইসব দেশের। পরিস্থিতির নেপথ্যটা এমনই।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কথা বলার ভাষায় অনুমেয়- সমস্যার মূলে এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা। মিত্র বলতে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা প্রমুখ দেশ। এক কথায় বিশ্বের সব পরাশক্তিই এখন এক। এদের বিভিন্ন উদ্যোগ সহজে যেহেতু সমাধান হচ্ছে না তাই তো হয়তো অন্যপথে অ্যাকশন। সেটা কী তা কিছু হলেও ঠাহর করা যাচ্ছে। সে সূত্র ধরে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে ঘনকালো মেঘ হয়ে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আসলে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাকি পক্ষ যেমনটা রাশিয়া, চীন, অনেকটা ভারত। কিন্তু বাংলাদেশ প্রশ্নে রাশিয়া কার্যকরি কোনো ভূমিকায় নেই। চীন বলেই দিয়েছে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে যাবে না। ভারত তেমন প্রকাশ্যে কিছু না বললেও কানাডার সঙ্গে যেভাবে বিবাদে জড়িয়েছে এমতাবস্থায় আমেরিকা তার প্রধান মধ্যস্থতাকারী। এছাড়াও চীন ইস্যুতেও কোনঠাসা ভারত। এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্যপথে যাওয়া উচিৎ নয় বলেই ভাবছে তারা। এতে একেবারেই চুপ। অথচ অন্যসময় ভারতকে এভাবে নিশ্চুপ দেখা যায়নি। ফলে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বাইরে ভারতের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সবকিছু গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হচ্ছে।    

যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা 

বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পষ্ট বক্তব্য, আমরা কোনো পক্ষে নই। আমরা সাধারণ জনগনের পক্ষে। সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে যেন তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন সেই স্বাধীনতা ফেরানো ও একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্র যেন পূর্নজাগরণ ঘটে সেটাই তাদের প্রত্যাশা। এ কথাগুলো বলার প্রেক্ষাপট তারা নিয়েছেন বাংলাদেশের ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের দৃশ্যপট বিবেচনা দেখিয়ে। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেন মার্কিনীদের নির্দেশনা মোতাবেক একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে যেতে ভয় পাচ্ছে এটাই এখন বড় ফ্যাক্টর। তারা পারতো মার্কিনীদের সঙ্গে একাত্মতা দেখিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করতে। কারণ দীর্ঘদিন মার্কিনীদের সঙ্গে চমৎকার বন্ধুত্বও ছিল আওয়ামী লীগের। কিন্তু কিসের জন্য যেন মতে বিভ্রাট। সেই শুরু। এখন তো মার্কিনী প্রশাসন আওয়ামী লীগের যেন চরম শত্রু। শীর্ষ নেতারা যেভাবে কথা বলছেন, তা মোটেও বিশ্বের একটি পরাশক্তির সঙ্গে শোভনীয় নয়। এ দ্বিমত ও দুইয়ের বৈরিতা ক্রমশ এমন পর্যায়ে গেছে, যেখানে বসে দেশের আরো এক রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি শুধু দর্শক হয়ে তাকিয়ে। আন্দোলন আর কী করবেন তারা। ওই দুইয়ের মনস্তাত্বিক লড়াইয়েই বিএনপির এখন নিজের লড়াই হিসেবে বিজয়ের অপেক্ষায়। 

ইইউও যেতে পারে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণে 

শুধুই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাও নয়। এখন বড় ভূমিকা নিতে যাচ্ছে ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন। ইতিমধ্যে ‘অধিকার’ এর আদিলুর রহমানের প্রশ্নে ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের শাস্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ সংক্রান্ত কার্যবিবরণী নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ইইউ পার্লামেন্ট। এতে বলা হয়, প্রায় এক যুগ ধরে অধিকারের প্রতিনিধিদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। ইইউ পার্লামেন্ট অধিকারের ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেই সঙ্গে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা অব্যাহত থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো যেন অনুমোদিত বিদেশি অনুদান কাজে লাগাতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও সরকারকে অনুরোধ করেছে ইইউ পার্লামেন্ট।

ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণের আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের কথাও এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করাসহ বাংলাদেশে নানাভাবে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুমের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। 

প্রসঙ্গ নির্বাচনের প্রাণান্ত চেষ্টা ও পাশাপাশি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা  

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বহু চেষ্টা করে যাচ্ছে যদি একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়। সম্প্রতি লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, আন্দোলনের নামে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অগ্নিসংযোগ এবং অমানবিক নৃশংসতার মতো ২০১৩-১৪ সালের ঘটনা ঘটলে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না।

লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। ফলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বেশ কঠোর অবস্থানে। 

ইতিমধ্যে নির্বাচনি বৈতরণী পার হতে সাংগঠনিকভাবে যা যা প্রয়োজন সেগুলো তারা করছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের তালিকাতেও মন দলটির। নির্বাচন কমিশনও দারুণ ব্যস্ত। ইতিমধ্যে কমিশন ঘোষণা দিয়েছে ২৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো প্রক্রিয়ায় হোক নির্বাচন অনুষ্ঠান না হলে সাংবিধানিক শুণ্যতা তৈরি হবে। যা তারা দিতে রাজি নন। ফলে সকল প্রচেষ্টা নিয়ে এগুচ্ছেন তারা। অনেক প্রার্থী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। হচ্ছে পোস্টারিংও। তবে সবই তুলনামূলক কম। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বড় প্রশ্ন ওই নির্বাচনের সময় পর্যন্ত যাওয়া যাবে কি। 

এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে বক্তব্য দেন সরকার ঘনিষ্ট সুশীল সমাজের অন্যতম শিক্ষাবিদ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের সাবেক উপাচার্জ নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ। সেখানে তিনি বলেন, ইইউ পার্লামেন্টে ৪২ জন এমএ পির স্বাক্ষরে একটি মোশন হাজির করা হয়েছিল, সেখানে আদিলুর রহমানকে কেন্দ্র করে। একটি রেজ্যুলেশন গ্রহণ করেছে। এবং একটি অর্গানিক গ্রুপ সামনে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মত একটি ভয়ানক প্যাকেজ সেটা পাস হতে চলেছে। সে সূত্র ধরে বলা যায়, সম্ভবত মিড অক্টোবরে যদি ইউই, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি এক যোগে চলে যায় এবং একটা বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয় - তাহলে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে যদি আগ থেকে জানানো হয়, তাতে অতংক তৈরি হবে না। এটা আগেভাগে জানান দেয়া ভাল। অন্তত মানুষ হঠাৎ আতংকিত না হয়। তিনি বলেন, সেটা (বিষ্ফোরক সিদ্ধান্ত) হতে পারে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মত কোনো কিছু। আর যার হাত ধরে হতে পারে জরুরি অবস্থা জারির মত কোনো কিছু। তিনি বলেন, জরুরি অবস্থা অসংবিধানিক কিছু নয়। বরং এটা সংবিধান সম্মতই। 

তবে নাজমুল আহসানের বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা সেটা হলো- বাংলাদেশ এখন আর্থিক সঙ্কটেও ভুগছে। দিন দিন রিজার্ভ কমছে। রেমিটেন্স এখন সর্বনিন্ম পর্যায়ে নেমেছে। খরচটা ঠিকই রয়েছে। ফলে আর্থিক এ সমস্যার মধ্যে যদি শক্তিধর দেশসমূহ বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মত কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, তাহলে পরিস্থিতিটা কি রকম দাঁড়াবে? কোটি টাকার প্রশ্ন। 

এটাও ঠিক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন প্রকাশ্যেই এগিয়ে চলেছে। সেখানে যে তারা একা নন, সেটাও জানান দিচ্ছে। ইইউসহ মার্কিন মিত্ররা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এক ও অভিন্ন। তাহলে চাপটা তো সম্মিলিতভাবেই আসবে যে যেখান থেকে সূচনা করুক না কেন। 

ফলে রাজপথের ( বিএনপি বা সমমনা) আন্দোলনের দিকে তাকিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ক্ষীণ। হাওয়াই ওই চাপেই বিপর্যস্ত হতে পারে দেশের অবস্থা। যা সাধারণ মানুষের জন্যও কঠিন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সাথে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপ আছেই। ‘আমার দেশ আমি চালাবো, আমার নির্বাচন আমি করবো।’ এটাই গণতান্ত্রিক ভাষা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে (২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচন আমলে নিলে) এটা চাইলেই কী সম্ভব?  শ্রীলঙ্কাতেও একই অবস্থাই ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক দুর্বলতায় কী ঘটেছিল দ্রুত ভুলে যায়নি কেউ। ডলারটা খুবই প্রয়োজনীয় একটা বিষয়। যার নিয়ন্ত্রক আমেরিকা। আমেরিকার সুইফট এর চাবিটা একটু আলতো ধিরে ঘুরলেই যে কোনো দেশের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতির দিকে গড়াবে। সামার্থ থাকলেও সব বলতে হবে বিষয়টা এমন না। বাংলাদেশ যদি কখনও আত্মনির্ভর হয়ে যায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মত তখন আবার বাংলাদেশের বেলায়ও পরাশক্তির চোখে চোখ রেখে কথা বলা সহজ হয়ে যাবে যেমনটা এখন বলছেন অনেকেই!  

সাম্প্রতিক সময়ে ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ একটি লেখায় জানান দিয়েছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সব চাবিকাঠি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যে ধসটা নামতে যাচ্ছে তা আমাদের জন্য কঠিন সময় বয়ে আনতে পারে। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার যে সংস্কৃতি সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সেটি অনুবর্তী হয়ে হয়তো আমাদের ওপরই পড়বে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেভাবে স্যাংশনকে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেটি কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। মার্কিন স্যাংশন মারাত্মক প্রভাব ফেলবে আমাদের অর্থনীতিতে, আমাদের সংস্কৃতিতে এবং আমাদের রাজনীতিতে। প্রভাব পড়বে আমাদের নির্বাচনী কাঠামোতেও। মুখে যে যাই বলুক না কেন, ইতিমধ্যেই অনেকে ভড়কে গেছেন। অনেকেই পালাবার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তাদের রেটোরিকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখনই আমরা এই ভিসা নীতির প্রভাব লক্ষ্য করছি।’

সর্বশেষ

দিন যত ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশে অবস্থানকারী ও বিদেশে বাংলাদেশী যারা যেখানেই রয়েছেন একটা উৎকন্ঠার মধ্যে দিনযাপন করছেন। কারণ ১/১১ সবাই দেখেছে। তার অ্যাফেক্টে অনেকে ভূক্তভুগি। যে পরিস্থিতির পেছনেও কারা ছিল ইতিমধ্যে সবার জানা। বিএনপি সরকারকে হটিয়ে আর্মিব্যাক সরকার। ফখরুদ্দিন- মঈনুদ্দিনের দিন দেখেছে সবাই। বিএনপি সেদিন সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু করলে হয়তো ওই ১/১১ হতো না। এখনও যে অজানা গন্তব্যের কথা বলা হচ্ছে সেটাও সেই পুরানো বাক্যকে ফিরিয়ে আনাই। রাজনৈতিক দলগুলো যদি সমঝোতায় যেতে পারতো তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ হতো না কোনো পরাশক্তির। কিন্ত জনগণ কী দেখছে? বিএনপি আওয়ামী লীগ এক মঞ্চে বা সমঝোতা করতেই তো ব্যর্থ। তাহলে অজানা পরিস্থিতি চলেও এলে সাধারণ মানুষের আর কী করার আছে!

শেয়ার করুন