০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৫২:৬ পূর্বাহ্ন


রাত জাগা পাখির চোখে প্রশান্তির জয়
ওয়েস্টইন্ডিজে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের উৎসব
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৭-২০২২
ওয়েস্টইন্ডিজে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের উৎসব সিরিজ জয়ের উৎসবটা আগেই যেন শুরু। ম্যাচ সেরা পারফরমার নাসুমকে মিরাজ-সোহানরা/ছবি সংগৃহীত


যা  প্রত্যাশিত  তার থেকেও বেশি অর্জন করে বাংলাদেশ তিন ম্যাচ ওডিআই সিরিজে প্রথম দুটি অনায়েসে জিতে নিয়ে ওয়েস্টইন্ডিজে ওয়ানডে  সিরিজ জয়ের উৎসব করলো বাংলাদেশ । গায়ানার প্রভিডেন্স ( মনে হতে পারে ঢাকায় শেরে  বাংলা উইকেট) ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৯ উইকেট বিপর্যস্ত করে স্বাগতিক দলের বিরুদ্ধে এই ফরম্যাটে আধিপত্য অক্ষুন্ন রাখলো। দাপুটে জয়ে বাংলাদেশ প্রমান করলো নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে বাংলাদেশ দুধর্ষ দল।  উপর্যুপরি দ্বিতীয় টস জয় করে তামিম। এবং বেছে নেয় ফিল্ডিং। স্পিন সহায়ক উইকেটে মেহেদী মিরাজ (৪/১৯) , নাসুম আহমেদ (৩/১৯)  এবং মোসাদ্দেকের (১/৩৭) সাড়াশি আক্রমণে ওয়েস্টইন্ডিজ দাড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের বোলারদের সামনে। প্রথম ব্যাটিং করতে নামা স্বাগতিকরা ১০৮ রানে গুটিয়ে যায়। একই উইকেট ভিন্ন মেজাজে হেসে খেলে বাংলাদেশ ২০.৪ ওভারে ১১২/১ করে বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টানা ১০ ম্যাচে ১০ম জয় তুলে রয়েল বেঙ্গলের মতই গর্জন করে।  

চলতি সফরে টেস্ট সিরিজে কৃষ্ণ ধোলাই এবং টি -২০ সিরিজ বিপর্যয়ের পর এ জয়ের সাফল্য তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রেমিকদের উজ্জীবিত করবে সন্দেহ নেই। এক সময় ওডিআই ক্রিকেটের অপ্রতিদ্বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে শেষ দশটি ওডিআই ম্যাচ জয় অনেক বিশাল প্রাপ্তি। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, উইকেটে - বাংলাদেশের স্পিনার্সদের প্রতি ছিল উদার। তবে টসও জয়  ছিল আশীর্বাদতুল্য। তবুও উইকেটের মান অনুযায়ী চমৎকর বোলিং এবং প্রথম ম্যাচ থেকে উন্নতিকর ফিল্ডিং করে বাংলাদেশ ৩৫ ওভারেই ১০৮ রানে গুড়িয়ে দিয়েছিলো। নিজেদের মাঠে কেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এভাবে ব্যাটিং এ ভেঙ্গে পরলো সেটা ঠাহর করা যায়নি। পর পর দুটি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে বাটে বল না আসলে ওরা স্বস্তি পায় না! এলোমেলো ব্যাটিং করে আত্মহত্যা করে। 

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে ফরম্যাটে যেখানে যখনই  খেলে চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত চোখে চেয়ে থাকি বিজয়ের প্রত্যাশায়। ব্যার্থতায় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। হেরে গেলেও যেন আহত রয়্যাল বেঙ্গলের হিংস্রতা নিয়ে লড়াই করে। টেস্ট ক্রিকেটে হয় না, হয় না টি -২০ ক্রিকেটে।  ওডিআই কিন্তু বাংলাদেশের শক্তিমত্তার ফরমেট। যেকোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশ এখন তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী হার না মানা দল। 

বাংলাদেশ উইকেটের হাল চাল বুঝেই তাসকিনকে বিশ্রাম দিয়ে অফ স্পিনিং অল রাউন্ডার মোসাদ্দেককে অন্তর্ভুক্ত করে। টস জয় করে বোলিং বেঁচে নিতে দ্বিধা করে নি।  বামহাতি স্পিনার নাসুমের জন্য ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। শুরুতেই নাসুমের বলে সোহান ক্যাচ লুফতে এবং একই সঙ্গে স্ট্যাম্পিং করার সুযোগ হারানোয় কিছুটা শঙ্কা জেগেছিলো। কিন্তু শুরুতেই উইকেটে বল গ্রিপ করছিলো, টার্নের সঙ্গে অসম বাউন্স দৃশ্যমান হলো। ঠিক যেন বাংলাদেশের উইকেট যেখানে খেলতে সাচ্ছন্দবোধ করে বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা। তামিম শুরুতেই উইকেটের মেজাজ বুঝে নিয়ে মোসাদ্দেক এবং দুই ওভার পরেই নাসুমকে আক্রমণে এনেছিল। মোসাদ্দেক ,নাসুম উপর্যুপরি আঘাত হেনে মায়ার্স , ব্রুক্সকে সরাসরি বোল্ড করে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। উইকেটে ব্যাটসম্যানদের অস্বস্থি আর ছটফটানি দৃশ্যমান ছিল। নাসুমকে খেলতে ছিল হাসফাস। যোগ হলো মিরাজের ড্রিফট এবং টার্ন। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতন। বিশেষ করে নিকোলাস পুরাণের রিভার্স সুইপ পরিস্থিতির সঙ্গে বেমানান লেগেছে। নাসুমের করা ১৮ম ওভারে সাই হোপ আর পুরানের পর পর ফিরে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৪/৪৫। বাংলাদেশের সাড়াশি আক্রমণের সামনে ধৈর্য আর নিবেদন নিয়ে ব্যাটিং করার সামর্থ বা সক্ষমতা কিছুই দেখতে পারেনি স্বাগতিক দল। মেহেদীর ৪/২৯ আর নাসুমের ৩/১৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেরুদন্ড চূর্ণ করে। শরিফুল বা মুস্তাফিজের জন্য কিছু করার জন্য অবশিষ্ট ছিল না। ৩৫ ওভার খেলে ১০৮ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনোমতে দেশের  মাটিতে ওদের সর্বনিম্ন ৯৮ রানের সংক্ষিপ্ততম স্কোরের লজ্জা এড়ালো। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে আসা কিমো পল কিছু স্ট্রোকেস খেলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকায় দলের স্কোর ১০০ ছাড়িয়ে যায়। 

 নিচু হয়ে আশা টার্নিং উইকেটে ব্যাট করার সময় বাংলাদেশকে আদৌ বিচলিত মনে হয়নি। তামিম স্বভাবসুলভ ঢঙে খেলে অপরাজিত ৫০ রান তুলে নেয়। লিটন প্রথম ম্যাচে রান না পেলেও অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংসে সাবলীল মনে হয়েছে।

এক ম্যাচ বাকি থাকতে বাংলাদেশ সিরিজ নিজেদের করে নিলো। উপর্যপুরি ৫ম ওডিআই সিরিজ জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। শেষ উইকেটে বেঞ্চ শক্তি যাচাই করে দেখা উচিত বাংলাদেশের। তবে টেষ্ট ও টি-২০ সিরিজের বেদনাদায়ক ব্যার্থতার পর পূর্ন শক্তি নিয়ে শেষ ম্যাচও নামার সম্ভাবনা। কারন জয় চাই এখন তাদের,শুধুই জয়।  

এ রিপোর্ট যখন লিখছি- অস্ট্রেলিয়ার লোগান সিটিতে তখন সকাল ৪:০০। ভিন দেশে থেকেও রাত জাগা পাখির চোখ অর্জনের আনন্দ অশ্রু, বাংলাদেশের এমন সাফল্যে। 

শেয়ার করুন