২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:০৩:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আবুর রসগপ্প
চা ও লোবান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১০-২০২২
চা ও লোবান



আওয়ামী লীগ শাষনের ২য় মেয়াদের শেষের দিকে বাংলা দেশে বেড়াতে গেছি । বাংলাদেশ ভ্রমণ মুলত নিজ শহর সিলেটে আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা করা , পাড়া মহল্লায় ছোটবেলার বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা দিয়ে আনন্দময় সময় কাটানো ই ত্যাদি । আমার  বন্ধু এক সময়ের তোখর বাম পন্থী ছাত্রনেতা  এবং পরে বাম সংগঠন করেন

কিন্তু জীবন ও জীবিকার তাগিদে পৈতৃক ব্যবসা দেখাশোনা এবং স্হানীয় সামাজিক কার্য ক্রমে যুক্ত থেকে কাল অতিবাহীত করছেন । দলের পুরানো কমরেডদের তার বাড়ীতে আশ্রয় ও ক্ষেত্র বিষেশে এখনও চাঁদা টাদা ও দেন । সিলেট গেলে তার অফিসে বসে বেশ আড্ডা হয় । আমি ওর রুমের দরজার সামনে দাড়াতেই বন্ধুর মুখ থেকে আওয়াজ এলো , “বান্দীর পোয়া ( বাঁদীর ছেলে)“ এটি সিলেটের এক সাধারন গালি । এ গালির পশ্চাদপদ ও উৎপত্তির ব্যাপারে পরের গল্পে হবে । আপাদত থতমত খেয়ে দাড়িয়ে পড়লাম । “ তোমাকে না , বস সব বলছি “ । ভালো করে দেখলাম বন্ধু সেল ফোনে কার সাথে কথা বলছিল । ব্যাপারটা সরকারের শেষ শেখ হাসিনা বাম ঘরনার দল থেকে দু তিন জনকে মন্ত্রী সভায় অন্তরভুক্ত করেছেন । মন্ত্রীদের কার্য ক্রম মুলত আমলারা করেন কিন্তু মন্ত্রী চাইলে রাজনৈতিক বিবেচনায় একজনকে এপিএস বা সহকারী হিসাবে নিতে পারেন । ছোট দল থেকে এক জন মন্ত্রী হলে কি হবে, মন্ত্রী ত মন্ত্রী তার এ পি এস ত দাপুটে হবেন । সারা জীবন সে রাস্তা, গ্রামে গন্জে রাজনীতি । দলের সহকর্মীদের দয়ায় আহার বাসস্থান ।ছোট ছোট চাঁদার টাকায় জীবন । সেখান থেকে মন্ত্রলালয় । কোন সময় কম খেয়ে অভ্যাস থাকলে , হঠাৎ বেশী খেলে পেট খারাপ হয়ে বদহজম হয়ে যায় । আমাদের এ পি এস মোহোদয়ের এ অবস্হা হয়েছিল । তিনি কোনো কারনে সিলেট এসেছেন এবং উঠেছেন সার্কিট হাউসে, যেখানে সরকারের ভি আই পি রা উঠেন । যার বদান্যতায় অর্থাৎ আমার বন্ধু,  মহোদয়ের  পূর্ববরতী জীবনে সিলেটে যাবতীয় কর্ম কান্ড, চলাফেরা ও খাওয়া- দাওয়া , এমনকি যাওয়ার সময় গাড়ীর ভাড়া ও চলত , তাকেই তার অবস্হান দেখাতে লাগলেন । ভাবখানা এই , এখন আগের মধুসুদন নই যে তোমার টঙ্গী  ঘরের চকিতে ঘুমাবো, এখন সার্কিট হাউসের ভি আই পি রুমে থাকি । মোহদয় সার্কিট হাউসের ভি আই পি রুম থেকে কল দিয়ে বন্ধুকে বললেন যে, তিনি সরকারী কাজে সিলেট এসেছেন এবং সরকারী ভি আই পি মেহমানখানায় উঠেছেন । আমার বন্ধু যেন কয়েক ঝুড়ি কমলা এবং ১০ কেজি চা নিয়ে তার সরকারি মেহমান খানায় হাজির হন । আমি সে কলের শেষের দিকে তার অফিসে উপস্হিত হই । গল্পের শুরুটা এখানে । বলা বাহুল্য সিলেট চা এবং কমলা লেবুর জন্য বিখ্যাত । বন্ধু শ্রেনী বিন্যাসের রাজনীতি করলেও পারিবারিক ভাবে উচ্চ শ্রেনীর লোক এবং সে শ্রেনীর ইগোটা পুরোই আছে । ফোন টা তার সে ইগোতে পুরোপুরি আঘাত হেনেছে । ফোন রেখেই , আমার ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা না করে , মেসিনগানের মত গালি দিতে লাগল । বান্দীর পোয়া, নটীর পোয়া দিয়ে শুরু তারপর মা মাসি যাবতীয় অঙ্গ  প্রত্যঙ্গ তুলে কয়েক লাইন গালি দিতে লাগল । শেষ কথা হল,  বান্দীর পোয়া রে জীবনের জন্য চা খওয়া  ছাড়ামু । সিলেটে আসলেই চা এর ব্যাপারটা আসে এবং আমরা সিলেটিরাও চা এর উৎপাদন ও গৌরবে একত্রীভূত । সিলেট কি চা এর আদি নিবাস ?

চা এর বোটানিকেল নাম হল Camellia Sinensis. কেমেলিয়া সিনেনসিস . এবং আরেক প্রজাতিকে Camellia assamica বলা হয় । তা ছাড়াও  বোটানিষ্টরা Thea viridis, Thea sinensis,Thea bohea, Camellia Theo feta, Camellia Thea এবং Camellia bohea প্রবৃতি নামে ডেকে থাকেন । কিন্তু প্রথম দুটি নামই স্বতসিদ্ধ ।প্রথম চা পান করার অস্তিত্ব পাওয়া যায় পাঁচ শত হাজার বছর পূর্বে । প্যালিওলিথিক (Paleolithic )যুগে চীন দেশে । উপকথা বলে খ্রীষ্ট পূর্ব  ৩০০০ অব্দে চা পান শুরু হয় । কিংবদন্তীর চীনা সম্রাট সেন নাং (Shen Nung) হচ্ছেন প্রথম মানব যিনি মানবজাতির মধ্যে চা য়ের স্বাধ নেন । চীনা রূপকথা অনুযায়ী সেন নাং হচ্ছেন চীনা জাতির তিন জন আগস্ট এর এক জন শাষক । প্রথম জন হচ্ছেন সাম্রাজ্ঞী নূ ওয়া (Nu Wa)  । তিনি চীনা জাতির মা হিসাবে কথিত । সেন নাং এর সময় থেকে চা কে চীনে ঔষুধি গন্য করা হয় । ১৫০০ শতাব্দীতে চীনা নৌ বাহিনী বিশ্বের সর্ব শ্রেষ্ট নৌ বাহীনি ছিল । এডমিরাল ঝেং (Zheng) এর নেতৃত্বে চীনা নৌ বাহীনি ভিয়েতনাম, জাভা, সুমাত্রা, শ্রীলঙ্কা এবং আফ্রিকার পূর্ব  উপকূলে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াত । জাহাজের ভ্রমনের সাথে চীনে উৎপাদিত চা কে মুলত বানিজ্যিক পন্য হিসাবে প্রমট করা হত । শতাব্দীর মধ্যভাগে চীনের জাহাজ নির্মাণ হঠাৎ করে কমে যায় এবং তাদের জাহাজ বানানো আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় । চীনা সম্রাটরা বাহিরের সাথে তাদের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় । ১৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে ইউরোপিয়ানদের উদ্যোগে সমুদ্র বানিজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে । ১৪৯৭ সালে পূর্তগীজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা দক্ষিন আফ্রিকার উত্তম আশা অন্তরীপ (Cape of Good hope) হয়ে ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষের সমুদ্র পথ আবিষ্কার করেন । যা ইউরোপের সাথে ভারতবর্ষের ব্যবসা পুরোপুরি খুলে দেয় । ১৫৫৭ সালে পূর্তগাল বরতমান চীনের ম্যাকাও দ্বীপে চীনা সম্রাটের কাছ থেকে বানিজ্য কুটি স্হাপনের অনুমতি পায় । যাকে ফ্যাক্টরী বলা হত । ম্যাকাও দ্বীপে ফ্যাক্টরী খুলার অনুমতির জন্য পূর্তগীজ বনিকরা বছরের পর বছর ধরে চীনা সম্রাটদের কাছে ধরনা দিয়েছে । খ্রীষ্টান পূর্তগীজ পাদ্রীরা চায়ের স্বাধ ইউরোপে নিয়ে যান । জেসুট পাদ্রী জাসপার ডি ক্রজ প্রথমে চীনের সাথে  ব্যবসা করার  বানিজ্যিক লাইসেন্স পান এবং ব্যাপকভাবে চা এর স্বাধ ইউরোপে নিয়ে আসেন । একই সময় বৃটিশ রা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী করে ভারতবর্ষে ব্যবসা শুরু করে । ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বনিকের মানদন্ড ভারতবর্ষে  শাষকের রাজদন্ডে রূপান্তর ঘটে । ১৬৫৭ সালে ওলন্দাজরা বৃটেনে চা নিয়ে আসে ।বৃটিশ রা ক্রমে চা পছন্দ করতে শুরু করে । ১৬৬২ সালে ইংল্যান্ডের রাজা চারলস দুই (Charles II) এর সাথে  পূর্তগীজ রাজকুমারী ক্যাথরীন অফ বারগানজার (Catherine of Braganza) বিয়ে হয় । ক্যাথরীন ওলন্দাজ রাজধানীতে বড়  হোন । ওলন্দাজ রাজধানীতে চায়ের কদর খুব বেশী ছিল এবং চা নিয়ে সমাজের উচ্চ মহলে আভিজ্যাত্য ছিল । ক্যাথরীন একজন ভাল চা পানকারী ছিলেন । তিনি বৃটেনের রাজকীয় অভিজাত মহলে চা পানের প্রবর্তন করেন । বৃটেনে চা আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা লাভ করে । বৃটেনের রাজা চা থেকে সবচেয়ে  বেশী শুল্ক লাভ করতে থাকেন । সাথে সাথে ইষ্ট  ইন্ডিয়া কোম্পানী চায়ের বড় এবং প্রধান বানিজ্যকারী হয়ে উঠে । তারা ভারতবর্ষে জোর করে কৃষকদের জমি কেড়ে নিয়ে জোর করে  আফিম উৎপাদন শুরু করে এবং তা চীনে রফতানী করে বিনিময়ে চা নিয়ে ইংল্যান্ডে প্রচুর মুনাফা লাভ করতে থাকে । ব্যবসা এ ভাবে ভালই চলছিল , কিন্তু চীনা জাতি আফিমের আসক্ত হয়ে যেতে থাকে । আফিম আসক্তী চীনে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করিতেছিল । এমনকি এক চীনা রাজকুমার আফিম আসক্তিতে মৃত্যু বর্ন করেন । এক পর পরই চীনা সরকার ১৮৩৯ সালে কেনটন বর্তমান গোয়াংজো (Guangzhou) বৃটিশ বানিজ্যিক ওয়ারহাউস থেক ২০,০০০ চেষ্টা

বা ১৪০০ টনের মত আফিম নষ্ট করে ফেলে । একই সময় এক বৃটিশ সৈন্য মাতাল অবস্হায় চীনা গ্রাম বাসীকে হত্যা করে । চীনা সরকার আফিম আমদানী বন্ধ করে দেয় । ফলে চীন এবং বৃটেনের মধ্যে উত্তেজনা যুদ্ধে রূপ নেয় । ইতিহাসে তা প্রথম আফিম যুদ্ধ নামে পরিচিত । যুদ্ধে চীন হেরে যায় । ফলে ১৮৪২ সালে নানকিং চুক্তি সাক্ষরিত হয় , এ চুক্তির ফলে হংকং দ্বীপ ৯৯ বৎসরের জন্য বৃটেনকে দিয়ে দিতে হয় এবং চীনের অভ্যন্তরে ঢোকার অনুমতি পায় । এ অনুমতি ভারতবর্ষে চা আসার ভূমিকা পালন করে । ২ য় আফিম যুদ্ধের পর বৃটিশরা নিজেরা চা উৎপাদনের চিন্তা করতে থাকে । বৃটিশরা চীন থেকে গাছ চুরি করার পরিকল্পনা করতে থাকে । ১৮৮৩ সালে রবার্ট ফরচুন নামক এক বোটানিষ্ট কে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর চা গাছ চোর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং চীনে পাঠানো হয় । ইতিহাসে তা ম্যানডারীন গ্রাব (Mandarin Garb) নামে পরিচিত । রবার্ট ফরচুন প্রথম সফরে চুরি করা গাছ বেশীর অজ্ঞাত চত্রাকে নষ্ট হয়ে যায় , বেঁচে যাওয়া গাছগুলোকে শ্রীলঙ্কায় রোপন করা , শুরুহয় চীনের বাইরে প্রথম চা বাগানের যাত্রা । দ্বিতীয় বার আটঘাট বেঁধে ভালবাবে চুরির চা গাছ ভারতবর্ষে নিয়ে আসেন । দার্জিলিং এর মকাইবাড়ী চাবাগানের মাধ্যমে পুরোদমে বানিজ্যিক চা উৎপাদন শুরু হয় । একই সময় উপমহাদেশের আসামে চা এর এক প্রজাতীর চা এর সন্ধান পাওয়া যায় । আসামে ও ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় । সিলেটের মানলীছড়া আসামের প্রথম দিক কার চা বাগানগুলির একটি । প্রশ্ন আসতে পারে সিলেটের চা কি চীনের চুরি করা চা না মাটির আসল গাছ । উদ্ভিদবিদরা মনে করেন সিলেট বা আসামের গানগুলি Camellia Assamica or camellia sinensis var,assmica প্রজাতীর । এ প্রজাতীর জন্ম আসাম অন্চলে সুতরাং সিলেটের চা হচ্ছে তার মাটির চা । সুতরাং সিলেট বাসী এ নিয়ে গর্ব করতেই পারেন । চা এর অবশ্যই সস্তা শ্রম এবং শ্রম দাসত্বের যোগ আছে । বৃটিশরা কৃতিম দুরভিক্ষ তৈরী করে সমাজের প্রান্তিক শ্রেনীর মানুষদের ভুলিয়ে চা বাগানে কাজ করার জন্য নিয়ে আসা হয়। আমেরিকার নর্থ কেরলিনায় ও একই সময় চা চাষের চেষ্টা করা হয় , কিন্তু দাস প্রথা অবলুপ্তির পর সে প্রকল্প আগায়নি । চা এর ইতিহাস আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য , আমেরিকার বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় বোষ্টন টি পার্টির মাধ্যমে । এ পার্টির মুল ব্যাপার ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জাহাজ মুনাফার জন্য আনা সব চা সাগরে ফেলে দেয়া । কে জানে হয়ত এ ফেলে দেয়া চা এর মধ্যে কয়েক বাক্স সিলেটের চা হয়ত ছিল । দেখা চা এর সাথে আফিম , যুদ্ধ,  রক্ত , শ্রম সোশন সর্ব পরি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সব একাকার হয়ে আছে । চা সুবাসের সাথে অঘটন ও কম না ।

এবার আমার বন্ধুর গল্পে আসা যাক । দেখা যাক এখানে চা কি ধরনের অঘটন ঘটায় । আমার বন্ধু সোজা বলল আগে ঐ শালাকে সাইজ করি তার পর তোর সাথে কেচ আপ করব । ইতিমধ্যেই তার এক কর্ম চারি আমাদেরকে চা বিস্কুট পরিবেশন করল । আমি চায়ে চুমুক দিচ্ছি এক দৃষ্টিতে তার দোঁয়া উড়া কাপের দিকে তাকিয়ে থাকল । হঠাৎ তার ঠোঁটে চিকন হাসি ফুঠে উঠল বলল সাইজ করার আইডিয়া পেয়েছি । ফোন লাগালো এ পি এস কে । স্যার কি , বিশ্রাম নিচ্ছেন ? ও পাস থেকে কি বলা হচ্ছে শুনতে পারলাম না । কিন্তু এ পাশ্বে বলল আগে আমাকে ভাই ডাকছেন ত কি হয়েছে । আপনার পজিশনে আমাদের সবার স্যার ডাকা উচিত । তা স্যার চা এর ব্যাপার টা হল বাগানের ভালো চা ত কলিকাতা ,চিটাগাং এ নিলাম হয়ে লন্ডন ইউরোপে চলে যায় । বাইরে যা আসে চা বাগানের কুলিরা নিজেরা ঘরে বানিয়ে বাজারে বিক্রী করে এগুলি তৃতীয় কেটাগরির , তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আমরা সিলেটিরা জানি যদিও হুমায়ুন আহমদ সাহেব তার দুই উপন্যাসে লিখে ফেলেছেন , কিন্তু আপনাকে এ চা নিয়ে বলা ঠিক হবে কি না ! আমি নিশ্চিত বলতে পারি পাস থেকে কি ভাই প্লিজ বলেন না বলে অনুরোদ আসবে , সে ব্যবসায়ী মানুষের মনস্তত্ত্ব জানে । তার কথা শুনে আমারই অবস্হা খারাপ এ কৌতুকের সাথে পরিচিতি না হলে জীবনে আমার ও হয়ত চা পান করা হত না । ব্যাপারটা ভালো করে ব্যাখ্যা কর বলি । আমাদের ছোট বেলাত ৬০ এবং ৭০ দশকের সময় এয়ার কন্ডিশন গাড়ী বলে কোন কিছু ছিল না । আমার মনে কোন বাড়ী বা অফিসে এয়ার কন্ডিসন রুমে বলেছি বলে । রাস্তা ঘাটের অবস্হা খুব খারাপ । সিলেট থেকে ঢাকা আসতে চারটি ফেরী পার হতে হত ।  যদি বিয়ানীবাজার থানায় যেতে হলে আরও দুটি ফেরী । এক জন লোক যদি উত্তর বঙ্গের কোন জেলায় মৃত্যু বরন করত এবং তাকে যদি সিলেটে দাফন করতে নিয়ে আসতে হত , তাহলে সময় এবং দুরত্ব চিন্তা করুন । সেটা যদি গ্রীষ্ম কালে হত তাহলেত কথাই নাই । মৃতদেহ বহনকারি বাহন হল খোলা ট্রাক । মৃতদেহ থেকে যাতে গন্ধ না ছরায় সে জন্য করপুর, আতর, লোবানের সাথে কফিন চা দিয়ে ভরে দেয়া হত । বংলাদেশ হল রিসাইকেলের দেশ , কেউ একজন কৌতুক ছড়াত কাজ শেষ হয়ে গেলে এসব চা আবার খোলা বাজারে চলে আসে । হুমায়ুন আহমদ সাহেব প্রথম জীবনে সিলেট ছিলেন , তিনি তার উপন্যাসে এ ব্যাপারটি ব্যবহার করেন । আমার বন্ধু ও এ পি এস মোহোদয়কে সাইজ করার জন্য এ ব্যাপারটা ব্যবহার করেন । সে বলে বসল চা কয়েক প্যাকেট সে কিনে দিতে পারে । হয় সেটা চা শ্রমিকের বাড়ীতে বানানো অথবা কফিন থেকে রিসাইকেল মাল । টং এর দোকানের চা সবাই পছন্দ করে কারন লোবানের ফ্লেবারটা নাকি দারুন । বিকালের দিকে মোহদয়ের জন্য কয়েক কেজি চা পাঠিয়ে দিবে কারন ভাবী হয়ত পছন্দ করবেন । ও হ্যা কমলার ব্যাপারটা হল সিলেট শহরে কমলার কোন গাছ নাই , সব কমলা আসে ভূটান থেকে এবং তা ঢাকা হয়ে আসে । ঢাকায় আসার পর ফরমালীনে চুবিয়ে সিলেট সহ অন্য জায়গায় পাঠানো হয় । ঢাকায় কমলা কিনলে বিশুদ্ধ কমলা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী । সে চায়ের সাথে এক ঝুড়ি কমলা ও পাঠাবে বলল। বিষয়টা মোটেই সত্য নয় আমার সিলেট শহরের বাসায় কমলা গাছ আছে এবং একই সময়ে তার অফিসে বসে দুজনেই সিলেটি কমলা খাচ্ছিলাম । কিন্তু মোহদয়ের বারটা বেজে গেছে আধা ঘন্টা পরে ফোন আসল তার আর চা বা কমলার কোন প্রয়োজন নেই । কিন্তু আমার বন্ধু নাছোড় বান্ধা, এ পি এস মোহদয়ের জীবনের জন্য চা খাওয়ার বারটা বাজাবেই । পরের দিন তাকে নাস্তার দাওয়াত দিল কারন আমার মত কয়েকজন শীতের পাখী লন্ডন এবং আমেরিকা থেকে এসেছে তাদের সাথে সারকে পরিচয় করিয়ে দেয়া । পরেরদিন জিন্দাবাজারের মার্কেটের সাথে একটি স্নাকসের দোকানে বেশ কয়েকজন বন্ধু বান্ধব বসে আড্ডা দিচ্ছি , এমন সময় মোহদয়কে নিয়ে বন্ধু হাজির । কয়েকজনের চোক টেপাটেপি দেখে মনে হল কিছু ঘটবে । আমি ফুচকা, চটপটি , সিঙ্গারা গো গ্রাসে গিলতে ছিলাম । আমার খাবার দেখে বন্ধুরা টিপ্পনী দিচ্ছিল, শালা তোরে দেখে ত মনে হচ্ছে দুরভিক্ষের দেশ থেকে আসচছ , আস্তে আস্তে খা বাপ । আমি বললাম আমাদের ওখানে এসব খাবারের দুরভিক্ষ আছে । এর মধ্যে মালাই চা আসল,  খাবার মুখে নিয়ে চাতে চুমুক দিলাম ।আরেক বন্ধু জিজ্ঞাসা করল ফ্লেভারটা কেমন ? মুখে খাবার তাই মাথা নাড়লাম । আবার বলে উঠল লোবানের গন্ধ আর ফ্লেবারটাই আলাদা, সবাই মুচকী হাসছে । আমি হাসি চেপে রাখতে পারি না, জোরে হাসতেগিয়ে চা সহ সব খাবার আমার বুকে শার্টে চলে আসল । মোহদয়ের মনে হল আমি বমি করছি , তিনিও বমি করতে শুরু করলেন । দোকানের মালিক ত মারতে আসে । যাইহোক পরিস্কার হয়ে রাত্রে ডিনারে দাওয়াত দিলাম । উনি আমার হাতে তার মন্ত্রলালয়ের কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ঢাকায় আসেন ডিনার এ শহরে আর খাওয়া দাওয়া না । আসার সময় বন্ধু আমায় বলল, কইছিলামনু বান্দীর পোয়ারে জীবনের লাগি চা খাওয়া ছাড়াইমু । (বলছিলাম না বাদির ছেলেকে জীবনের জন্য চা পান করা ছাড়াবো )


শেয়ার করুন