যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ২০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী দেশ ছেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ স্বেচ্ছায় চলে গেছে এবং প্রায় ৪ লাখকে আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ডিএইচএস গত ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি গ্রাফিক প্রকাশ করে লেখে, “২ মিলিয়ন গন! মাত্র ২৫০ দিনের কম সময়ে ২০ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছে। এবার আর ফিরবেন না!” প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটও পোস্ট করে জানান, ডিপোর্টেশন ফ্লাইট শুরু হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি ট্রিশা ম্যাকলাফলিন এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এটি অভিবাসীদের নিজেদের জন্য নিরাপদ, জনগণের জন্য নিরাপদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের জন্য নিরাপদ এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো। এতে করদাতাদেরও বিপুল অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে ৪ লাখ বহিষ্কার সম্পন্ন করেছি, বাকি ১৬ লাখ নিজেরাই চলে গেছে। তবে আমরা এ সংখ্যাকে আরও বাড়াবো।
এই সংখ্যা অভিবাসন-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজ -এর এক আগের হিসাবের সঙ্গে প্রায় মিলে যায়। প্রতিষ্ঠানটি আগস্টের মাঝামাঝি জানিয়েছিল, অন্তত ১৬ লাখ অনিবন্ধিত অভিবাসী দেশ ছেড়েছে।
মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক জুলিয়া গেলাটও একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সংস্থাগুলো স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেইড ও খাদ্য সহায়তার তথ্য আইসিই-এর সঙ্গে ভাগাভাগি করছে। এ কারণে অনিশ্চিত আইনি অবস্থায় থাকা অভিবাসীরা জরিপে অংশ নিতে ভয় পাচ্ছেন, যা তথ্যকে প্রভাবিত করছে। ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ২০থেকে ২২ মিলিয়ন অনিবন্ধিত অভিবাসী রয়েছে। সেক্ষেত্রে সর্বশেষ ঘোষিত ২০ লাখের বহিষ্কার বা স্বেচ্ছা প্রস্থান মোট সংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ।
ডিএইচএস জানিয়েছে, টানা চার মাস ধরে সীমান্ত সুরক্ষার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অনিবন্ধিত অভিবাসীকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের দাবি, এই নীতি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলছে। অনেকেই আর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে না। ডিএইচএস আরো জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তথাকথিত “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” পাস হওয়ার পর থেকে আরও ব্যাপক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেবল সম্প্রতি ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এ ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। প্রশাসনের দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সৃষ্ট চাকরির শতভাগই নাগরিকদের হাতে গেছে।
একই সঙ্গে, অভিবাসী আটক ও বহিষ্কারের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন নতুন ডিটেনশন সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ, স্পিডওয়ে স্ল্যামার, কর্নহাস্কার ক্লিঙ্ক ও লুইজিয়ানা লকআপ নামের কয়েকটি নতুন কেন্দ্রের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ডিএইচএস। পাশাপাশি, ৪০টি অঙ্গরাজ্যে ১,০০০টিরও বেশি ২৮৭(ম) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অনিবন্ধিত অভিবাসীদের গ্রেফতার ও বহিষ্কারে সহযোগিতা করবে। ডিএইচএসের ভাষ্য, এসব উদ্যোগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অনিবন্ধিত অভিবাসীদের আটক, গ্রেফতার ও বহিষ্কারের প্রক্রিয়া আগের চেয়ে দ্রুততর ও কার্যকর হবে। ফলে আগামী দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে বহিষ্কার অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হবে।