২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৫৬:৪৬ পূর্বাহ্ন


মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস’ ঘোষণার দাবি শিক্ষার্থীদের
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস’ ঘোষণার দাবি শিক্ষার্থীদের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড


কলেজ পার্ক, মেরিল্যান্ড : যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতিকে ঘিরে বাড়তি উদ্বেগের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসকে ‘স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অবৈধ অভিবাসী ও অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এসজিএ) ১৯-০-১ ভোটে একটি প্রস্তাব পাস করে। এতে প্রশাসন ও ক্যাম্পাস পুলিশকে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর সঙ্গে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।

প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, ওয়াশিংটন ডিসি-সংলগ্ন মেরিল্যান্ডের উপশহরগুলোতে সম্প্রতি আইস গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে, যার ফলে অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ‘ভয় ও অনিশ্চয়তা’ বেড়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্যাম্পাসে বা আশপাশে আইসের তৎপরতা সম্পর্কে জানাতে একটি সতর্কবার্তা (অ্যালার্ট) ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া ফেডারেল এজেন্টদের অপ্রকাশ্য ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আহ্বানও জানানো হয়।

স্টুডেন্ট গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চিফ অব স্টাফ এবং অ্যাকাউন্টিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী লুইস মানকুসো বলেন, এই ভোট বিশ্বব্যাপী মানবিক ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততার প্রতিফলন। শিক্ষার্থীরা শান্তি ও মানবাধিকার প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান দেখতে চায়।

প্রস্তাবে আরো অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই অভিবাসী ও অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের সহায়তামূলক ওয়েবপেজ সরিয়ে ফেলে। এছাড়া গত বসন্তে চীনা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ফেডারেল কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শিক্ষার্থী সরকারের এসব প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতির জন্য বাধ্যতামূলক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশনস রেবেকা আলোইসি এক বিবৃতিতে বলেন, এসজিএর প্রস্তাবগুলো শিক্ষার্থীদের নিজস্ব মতামত প্রতিফলিত করে। এগুলোর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি বা চর্চার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের একজন মুখপাত্র জানান, ফেডারেল আইন যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় নীতির ঊর্ধ্বে। অপরাধে জড়িত অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইসকে কেউ বাধা দিতে পারবে না।

উল্লেখ্য, মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস ঘোষণার দাবি নতুন নয়। ২০১৭ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ও একই দাবি উঠেছিল, যা তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসিডেন্ট ওয়ালেস লোহ ‘অবৈধ, অপ্রয়োজনীয় ও বাস্তবসম্মত নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড্যারিল জে পাইন্স এ বিষয়ে এখনো প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।

প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই নিজেদের ‘স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যেখানে ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সীমিত সহযোগিতা করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটি, ওয়েসলিয়ান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া এবং সোয়ার্থমোর কলেজ।

তবে উচ্চশিক্ষা ও অভিবাসন বিষয়ক সংগঠন প্রেসিডেন্টস অ্যালায়েন্সের মতে, স্যাংচুয়ারি ক্যাম্পাস শব্দটির কোনো আইনি সংজ্ঞা নেই। সংগঠনটির নীতি ও কৌশল বিষয়ক পরিচালক দিয়েগো এন সানচেজ বলেন, প্রতিষ্ঠানভেদে অনিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের সহায়তার ধরন ভিন্ন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তা নীরব ও ব্যবহারিক উদ্যোগের মাধ্যমেই কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)। সংগঠনটি জানায়, এ প্রস্তাব বিদেশি ও অভিবাসী শিক্ষার্থীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষায় শিক্ষার্থীদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন।

শেয়ার করুন